দাপুটে জয়ে টি-টোয়েন্টির আগে হুমকি দিয়ে রাখলো আফগানরা
সিরিজের ট্রফিজয়ী দল নিশ্চিত হয় আগেই। প্রথম দুই ম্যাচ জেতা বাংলাদেশের ঝুলিতে যাচ্ছে ২৯তম ওয়ানডে সিরিজের শিরোপা। এটা ভেবেই কিনা তৃতীয় ওয়ানডেতে ভয়ডরহীন আফগানিস্তান। ব্যাটে-বলে কেবল তাদেরই শাসন। এই ম্যাচে আফগানদের বিপক্ষে পাত্তাই পেল না তামিম ইকবালের দল। মিরপুরে অনুষ্ঠেয় দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রস্তুতিও যেন নিয়ে রাখলো সফরকারীরা।
সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৭ উইকেটে হেরে গেছে বাংলাদেশ। দলটির বিপক্ষে ১২ ম্যাচে এটা বাংলাদেশের চতুর্থ হার। চার বছর পর আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারলো বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০১৮ এশিয়া কাপে আবু ধাবিতে আফগানদের বিপক্ষে হারে বাংলাদেশ। এ ছাড়া ঘরের মাঠে সর্বশেষ ২০১৬ সালে হার মানে বাংলাদেশ।
সোমবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। লিটন কুমার দাসের দারুণ এক ইনিংসের পরও ৪৬.৫ ওভারে ১৯২ রানে অলআউট হয়ে যায় স্বাগতিকরা। জবাবে ম্যাচসেরা রহমানউল্লাহ গুরবাজের সেঞ্চুরি এবং রিয়াজ হাসান ও রহমত শাহর ব্যাটে ৪০.১ ওভারেই (৩৯ বল হাতে রেখেই) ৭ উইকেটের জয় তুলে নেয় আফগানিস্তান।
ম্যাচের আগের দিন মেহেদী হাসান মিরাজ জানিয়েছিলেন, সিরিজ জিতলেও নির্ভার থাকার উপায় নেই। সিরিজ নিশ্চিত হলেও আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগের ১০ পয়েন্টের জন্য মাঠে নামবেন তারা। এমন ম্যাচে কোনো বিভাগেই ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। উল্টো ফিল্ডিংয়ে মিসের মহড়া দিয়েছে তারা। দুবার জীবন ফিরে পেয়ে সেঞ্চুরি করে ফেলেন রহমানউল্লাহ।
ছোট লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে দলকে দাপুটে শুরু এনে দেন দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও রিয়াজ হাসান। ১৫.৩ ওভারে ৭৯ রান যোগ করেন তারা। ৩৫ রান করা রিয়াজকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন সাকিব আল হাসান। এতে আফগানদের ইনিংসে অবশ্য কোনো প্রভাব পড়েনি। রহমত শাহকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে থাকেন রহমানউল্লাহ।
এ দুজন ১০০ রানের জুটি গড়েন। হাফ সেঞ্চুরির একেবারে কাছে গিয়ে থামেন রহমত। ৬৭ বলে ৩টি চারে ৪৭ রান করা আফগান এই ব্যাটসম্যান মিরাজের শিকারে পরিণত হন। এরপর অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শহিদী দ্রুতই ফেরেন। নাজিবুল্লাহ জাদরানকে সঙ্গে নিয়ে জয়ের কাজ সারেন ম্যাচসেরা রহমানউল্লাহ। ডানহাতি উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান ১১০ বলে ৭টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১০৬ রানে অপরাজিত থাকেন। কোনো আফগান ব্যাটসম্যানের এটাই প্রথম সেঞ্চুরি বাংলাদেশের বিপক্ষে।মিরাজ ২টি ও সাকিব একটি উইকেট নেন।
এর আগে সাবধানী শুরুর পরও ইনিংস বড় কর পারেননি তামিম ইকবাল। ১০ ওভারে ৪৩ রান তোলার পর থামেন তিনি। বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক এদিন ১১ রান করেই সাজঘরে ফেরেন। এই ম্যাচেও আফগান পেসার ফজল হকের শিকার তামিম। তিন ম্যাচেই ফজলের বলে আউট হলেন তিনি। প্রথম দুই ম্যাচে এলবিডব্লিউ হওয়া অভিজ্ঞ এই ওপেনার তৃতীয় ওয়ানডেতে বোল্ড হন।
দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করতে থাকা লিটনের সঙ্গে যোগ দেন সাকিব আল হাসান। এ দুজন ৬১ রানের জুটি গড়েন। দলীয় সংগ্রহ ১০০ পেরিয়ে আউট হন সাকিব। বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডারর ৩৬ বলে ৩টি চারে ৩০ রান করেন। এরপর দ্রুতই বিদায় নেন মুশফিকুর রহিম ও ইয়াসির আরী রাব্বি।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে নতুন জুটি গড়েন লিটন। এই জুটি থেকে আসে ৩৫ রান। লিটনের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। ডানহাতি এই ওপেনার ১১৩ বলে ৭টি চারে ইনিংস সেরা ৮৬ রান করেন। এরপরও অবশ্য আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। এটা ছিল লিটনের ৫০তম ওয়ানডে। মাইলফলকের ম্যাচে সেঞ্চুরির পথে থেকেও তিন অঙ্ক ছুঁতে পারলেন না তিনি।
লিটনের বিদায়ের পর মাহমুদউল্লাহই যা রান করেন। অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান ৫৩ বলে ২৯ রানে অপরাজিত থাকেন। বাকি কেউই উইকেটে টিকতে পারেননি। তিনজন রান আউটের শিকার হন। এদিন মুশফিক ৭, ইয়াসির ১, আফিফ ৫ ও মিরাজ ৬ রান করেন।
স্পিন জাদু দেখানো রশিদ ১০ ওভারে ৩৭ রানে ৩টি উইকেট নেন। সবচেয়ে কিপ্টে বোলিং করা নবী ১০ ওভারে ২৯ রানে নেন ২টি উইকেট। একটি করে উইকেট নেন ফজল হক ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই।