লিটন দ্যুতির পরও ‘সাদাকালো’ ইনিংস
অভিষিক্ত মুনিম শাহরিয়ার ১৭ রান করে ফিরে যাচ্ছিলেন। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্যালারি ক্ষণিকের জন্য নিরব থাকলো। মুনিম মাঠ ছাড়ার আগেই আবার গ্যালারিতে উচ্ছ্বাস, কারণটা সাকিব আল হাসান। কিন্তু বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার পারলেন না, ফিরলেন কয়েক বলের মোকাবিলাতেই। এরপর গ্যালারি থেকে কেবল একটি নামই ভেসে আসতে থাকলো, 'লিটন, লিটন।'
যদিও দারুণ ছন্দে থাকা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানের শৈল্পিক ব্যাটিংয়ের পরও আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বড় সংগ্রহ গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। টস জিতে আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশ লিটনের হাফ সেঞ্চুরিতে ৮ উইকেটে ১৫৫ রান তুলেছে। আফগানদের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে সেঞ্চুরি, হাফ সেঞ্চুরিতে রানের লহর বইয়ে দেওয়া লিটন মারকাটারি ফরম্যাটেও দারুণ শুরু করে যেন বলে রাখলেন, 'আরও রান আসছে।'
বাংলাদেশের পুরো ইনিংসজুড়ে কেবল একটিই নাম, লিটন। রশিদ খান, মুজিব-উর-রাহমান, মোহাম্মদ নবী, কাইস আহমেদদের নিয়ে গড়া আফগানদের বিশ্বমানের স্পিনের বিপক্ষে কেবল তিনিই দাপুটে ছিলেন। ধীর-স্থির মেজাজে রান এগিয়ে নেওয়া আফিফ হোসেন ধ্রুবকে পালন করতে হয়েছে দায়িত্বশীল ভূমিকা। এ ছাড়া কয়েকজন ভালো শুরু করেও ইনিংস বড় করতে পারেননি।
এর মধ্যে অভিষিক্ত মুনিম অন্যতম। জাতীয় দলের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা মুনিম শুরু থেকেই চড়াও মেজাজে ছিলেন, সাবলীলও দেখাচ্ছিল ডানহাতি এই ওপেনারকে। কিন্তু আফগানদের তারকা লেগ স্পিনার রশিদ খানের বাধায় বেশি পথ পাড়ি দেওয়া হয়নি তার। ১৮ বলে ৩টি চারে ১৭ রান করেন থামেন বিপিএলে জড়ো গতির ব্যাটিং দিয়ে জাতীয় দলে জায়গা করে নেওয়া মুনিম।
এর আগেই ফিরে যান নাঈম শেখ। বিপিএলে চরম বাজে সময় কাটানোর পরও দলে সুযোগ পাওয়া বাঁহাতি এই ওপেনার ৫ বলে ২ রান করে আফগান পেসার ফজল হক ফারুকীর ভেতরের দিকে ঢোকা ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হন। নাঈম, মুনিমের বিদায়ের পর সাকিব যান উইকেটে। ২৫ রানে ২ উইকেট হারানো দলকে স্বস্তি দিতে পারেননি তিনিও। লিটনের সঙ্গে কিছু সময় উইকেটে থাকা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ৬ বলে ৫ রান করেন।
লিটনের সঙ্গে যোগ দিয়ে ভালো কিছুরই আভাস দেন প্রথম বল থেকেই চার-ছক্কা মারার ঘোষণা দেওয়া মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। যদিও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক তেড়েফুঁরে শুরু করে উইকেটে স্থায়ী হতে পারেননি। কাইসের বলে দারুণ এক ছক্কা মারা মাহমুদউল্লাহ ৭ বলে ১০ রান করে ফিরে যান। তখনও এক পাশ আগলে টি-টোয়েন্টি মেজাজেই খেলে যাচ্ছেন লিটন। তার সঙ্গী হন আফিফ হোসেন ধ্রুব।
এই জুটি ১০.৫ ওভার থেকে ১৭ ওভার পর্যন্ত স্থায়ী হয়, রান আসে ৪৬। এর মাঝে ৩৪ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের পঞ্চম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন। হাফ সেঞ্চুরি তুলে যেন কিছুটা খেই-ই হারান তিনি। পরের ১০ বলে একটি চারে করেন ১০ রান। শেষ পর্যন্ত ৪৪ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬০ রান করেন থামেন টপ অর্ডার এই ব্যাটসম্যান।
লিটন ফেরার পর রান তোলার গতি হারায় বাংলাদেশ, হারায় উইকেটও। পরের ওভারেই ক্যাচ তুলে সাজঘরে ফেরেন ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করা আফিফ। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ২৪ বলে ২টি চারে ২৫ রান করেন। শেষ দিকে আর রান ওঠেনি। অভিষিক্ত ইয়াসির আলী রাব্বি ৮, শেখ মেহেদি হাসান ৫, নাসুম আহমেদ ৩ ও শরিফুল ইসলাম ৪ রান করেন। আফগানিস্তানের ফজল হক ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই ২টি করে উইকেট নেন। একটি করে উইকেট নেন দুই লেগ স্পিনার রশিদ ও কাইস।