সহজে ঘুমোতে পারেন না? মিলিটারি পদ্ধতিতে ঘুমান মাত্র ২ মিনিটে!
পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের শরীর ও মন উভয়ের জন্যই জরুরী। ২০১৮ সালে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা ঘুমান তারা সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো ব্যক্তিদের তুলনায় ১৯ শতাংশ কম প্রোডাক্টিভ। আর যারা পাঁচ ঘণ্টারও কম ঘুমান তারা প্রায় ৩০ শতাংশ কম প্রোডাক্টিভ।
হ্যাঁ, তারা বেশি সময় সজাগ থাকেন। কিন্তু তাদের কাজের পরিমাণ হয় তুলনামূলকভাবে স্বল্প।
কারণ, শুধুমাত্র ছয় ঘণ্টা ঘুমালে যেসব কাজে ফোকাস, গভীর চিন্তাভাবনা বা সমস্যা সমাধান করার মতো ব্যাপার থাকে সেগুলো করা কঠিন হয়ে যায়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুম বঞ্চনায় থাকা কোনো ব্যক্তির জন্য একাধিক পদক্ষেপ প্রয়োজন এমন যেকোনো কাজই কঠিন হয়ে ওঠে। অর্থাৎ, পর্যাপ্ত ঘুম না হলে আপনি যা-ই করার চেষ্টা করুন না কেন, সেটি আপনার জন্য কঠিন হয়ে উঠবে।
অন্য এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঘুমের অভাবে আপনার মস্তিষ্কের যে অংশ খাবারের চাহিদা জোগায় সেটি বেশি সক্রিয় হয়ে উঠে। যার ফলে আপনার ক্ষুধা বেড়ে যায়। আবার অপ্রয়োজনীয় ও অস্বাস্থ্যকর খাবার আপনার ঘুমের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। যে কারণে আপনি আরও ঝুঁকেন অপ্রয়োজনীয় খাবারের দিকে।
এই দুষ্টচক্রের মধ্যে পড়ে যাওয়া মানুষেরাও জানেন তাদের ঘুম প্রয়োজন। কেউ কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কম ঘুমান। কিন্তু অনেকেই আছেন যারা সহজে ঘুমোতে পারেন না। আপনারও যদি সে সমস্যা থেকে থাকে তাহলে সামরিক কায়দায় ঘুমানোর চেষ্টা করতে পারেন।
মিলিটারি কায়দায় ঘুম
'রিল্যাক্স অ্যান্ড উইন: চ্যাম্পিয়নশিপ পারফরম্যান্স' নামক এক বইয়ে লয়েড বাড উইন্টার নৌবাহিনীর প্রাক-ফ্লাইট স্কুলে দ্রুত ঘুমানোর জন্য পাইলটদের ব্যবহার করা একটি প্রক্রিয়ার বর্ণনা দিয়েছেন।
এই প্রক্রিয়ায় ছয় সপ্তাহের মাঝে ৯৬ শতাংশ পাইলট দুই মিনিট বা তারও কম সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস করে ফেলেন।
প্রক্রিয়াটি এরকম:
১. পুরো মুখ শিথিল করুন: চোখ বন্ধ করুন। ধীরে ধীরে এবং গভীরভাবে নিঃশ্বাস নিন। তারপর ধীরে ধীরে আপনার মুখের সমস্ত পেশী শিথিল করুন। পারলে এই শিথিল প্রক্রিয়া কপালের পেশী থেকে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে নিচের দিকে নামুন। আপনার চোয়াল, গাল, মুখ, জিহ্বা, সবকিছু শিথিল করুন।
২. কাঁধ এবং হাত ছেড়ে দিন: টেনশনমুক্ত হোন। ঘাড় ও কাঁধ শিথিল করুন। অনুভব করুন বিছানায় ডুবে যাচ্ছেন আপনি। তারপর আপনার ডান হাতের উপরের অংশ থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে আপনার বাইসেপ, বাহু এবং হাতের আঙ্গুলগুলো শিথিল করুন। বাম হাতেও একই পদ্ধতির পুনরাবৃত্তি করুন।
শিথিল প্রক্রিয়া চলাকালে গভীরভাবে শ্বাস নিতে ভুলবেন না।
৩. শ্বাস ছাড়ুন এবং বুককে শিথিল করুন: কাঁধ এবং হাত শিথিল হওয়ার পর এটি সহজেই করতে পারবেন।
৪. পা শিথিল করুন: ডান উরু দিয়ে শুরু করুন; তারপর পায়ের নিচের অংশ, গোড়ালি শিখিল করুন। বাম পায়ের জন্যও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করুন।
৫. এবার মন পরিষ্কার করুন: কোনো কিছু নিয়েই চিন্তা না করাটা আসলে বেশ কঠিন। বোরিং বা ক্লান্তিকর কিছু চিন্তা করার চেষ্টা করুন। কাল্পনিক ভেড়া গুনতে পারেন। অথবা চোখ বন্ধ রেখে অন্য কিছু গুণার চেষ্টা করুন। তাতেও যদি কাজ না হয়…
৬. ১০ সেকেন্ড পর পর নিজেকে বলুন "কিছুই চিন্তা করা যাবে না": এটা করতে থাকলে আপনি কোনো কিছু নিয়েই বেশিক্ষণ চিন্তা করতে পারবেন না। আপনার মস্তিষ্ক একসময় হাল ছেড়ে দিবে।
মনে রাখবেন, অনুশীলনের উপর নির্ভর করে এই পদ্ধতি।
সামরিক পদ্ধতিতে প্রথম প্রথম দ্রুত নাও ঘুমাতে পারেন। কিন্তু এই পদ্ধতি আপনি যত ধারাবাহিকভাবে ব্যবহার করবেন, তত ভালোভাবে আপনি নিজেকে শিথিল করতে পারবেন।
দ্রুত ঘুমানোর চেষ্টা করুন বা করুন, শরীর শিথিল না হলে আপনি এমনিতেও ঘুমাতে পারবেন না। ঘুমানোর জন্য শরীর শিথিল ও মন চিন্তামুক্ত হওয়াটা জরুরী।
তাহলে এই পদ্ধতি মানা শুরু করছেন তো?
সূত্র: ইঙ্ক।