নতুন পানি শোধনাগার চালু হলে পানি সংকট দূর হবে চট্টগ্রামের
দৈনিক ১৪ দশমিক ৩ কোটি লিটার পানি উৎপাদনে সক্ষম নতুন পানি শোধনাগার চালু হতে যাচ্ছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রামে।
শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার চালু হওয়ায় চট্টগ্রাম শহরের বিদ্যমান পানি সংকট সমস্যা উল্লেখযোগ্যভাবে দূর হবে বলে আশা করছে চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (চট্টগ্রাম ওয়াসা)।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ টিবিএসকে বলেন বলেন, 'শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে চট্টগ্রামের জন্য প্রধানমন্ত্রীর একটি বড় উপহার।
"এ প্রকল্প চালু হওয়ায় অন্তত ২০৩০ সাল পর্যন্ত নগরীতে পানির সংকট থাকবে না আশা করছি," দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন তিনি।
বর্তমানে, চট্টগ্রাম নগরীর ৭০ লাখ মানুষের দৈনিক পানির চাহিদা ৫০ কোটি লিটার। কিন্তু ওয়াসা সরবরাহ করতে পারতো সর্বোচ্চ ৪২ কোটি লিটার।
তাই দৈনিক ঘাটতি ছিলো ৮ কোটি লিটার। নতুন পানি শোধনাগারটি চালু হলে ওয়াসা দিনে ৫৬.৩ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করতে পারবে।
প্রকল্প পরিচালক ও ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, "২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে প্রকল্পের ট্রায়াল রান শুরু হয়। নাসিরাবাদ রিজার্ভয়ার এবং হালিশহর এলিভেটেড ট্যাংকের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই এই প্রকল্পের পানি নগরবাসীর মাঝে সরবরাহ শুরু হয়েছে।"
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, বুধবার সকালে নগরীর পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসন ব্লু বে-ভিউতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ও একই মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এতে অংশ নিয়ে প্রকল্পটি উদ্বোধন করবেন।
রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা এলাকায় কর্ণফুলী নদী থেকে পানি উত্তোলন করে পরিশোধনের পর চট্টগ্রাম শহরে সরবরাহ করার লক্ষ্য নিয়ে ২০১৬ সালে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এ প্রকল্পের অধীনে ইনটেক ও ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, নাসিরাবাদে রিজার্ভার এবং হালিশহরে এলিভেটেড ট্যাংক নির্মাণ করা হয়। এছাড়া, ট্রান্সমিশন ও কনভেনিয়েন্স লাইন নির্মাণ করা হয়।
২০২০ সালের জুনে এটি চালু হওয়ার প্রাথমিক সময় নির্ধারণ করা হলেও কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও শ্রমিকরা কাজে যোগ না দেওয়ায় প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে যায়।
জাইকা, বাংলাদেশ সরকার ও চট্টগ্রাম ওয়াসার যৌথ অর্থায়নে এই প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয় ৪ হাজার ৪৯১ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাইকা ৩ হাজার ৬২৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা, বাংলাদেশ সরকার ৮৪৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রাম ওয়াসা ২৩ কোটি ৭ লাখ টাকা অর্থায়ন করে।
বর্তমানে শেখ রাসেল পানি সরবরাহ প্রকল্প থেকে দৈনিক ৯ কোটি লিটার, মোহরা পানি শোধনাগার প্রকল্প থেকে ৯ কোটি লিটার, শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার প্রকল্প-১ থেকে ১৪ দশমিক ৩ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এছাড়াও গ্রাউন্ড ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট এবং ৪৪টি গভীর নলকূপ থেকে ১০ কোটি লিটার পানি সরবরাহের সক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে প্রয়োজন অনুসারে ৪ ধেকে ৫ কোটি লিটারের মতো পানি সরবরাহ করা হয়।
শিল্প কারখানায় পানি সরবরাহে ভান্ডালজুড়ি প্রকল্প
দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, পটিয়া, কর্ণফুলী ও আনোয়ারা এলাকার শিল্প কারখানা ও আবাসিকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে বোয়ালখালী উপজেলার ভান্ডালজুড়ি এলাকায় গড়ে তোলা হচ্ছে আরও একটি পানি শোধনাগার প্রকল্প। এ প্রকল্প থেকে ছয় কোটি লিটার পানি পাওয়া যাবে। এ বছরের শেষ নাগাদ প্রকল্পটি চালুর সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রকল্পের পরিচালক ও ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম টিবিএসকে বলেন, "শহরতলীর উপজেলাগুলোতে পানি সরবরাহের লক্ষ্যে এবং শিল্পকারাখানাগুলোতে পানি সরবরাহ দিতে এই প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। এর ফলে শিল্প কারখানাগুলোকে আর ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করতে হবে না। এতে পরিবেশের জীববৈচিত্র্য যেমন রক্ষা পাবে তেমনিভাবে মানুষও সুপেয় পানি পাবে।"
এদিকে, উদ্বোধন হতে যাওয়া শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২ প্রকল্পসহ চট্টগ্রাম ওয়াসার দৈনিক পানি উৎপাদনের সক্ষমতা এখন প্রায় ৬০ কোটি লিটার (৪৪ টি ভূগর্ভস্থ পাম্পসহ)। এরমধ্যে ২৫-৩০ শতাংশ অপচয় দেখানো হয় সিস্টেম লস বা নন-রেভেনিউ খাতে।
এবার বিলিং সিস্টেমকে অটোমেশন করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসা।
পাইলট প্রকল্পের আওতায় চলতি বছরের জুন মাসে কয়েকটি এলাকায় ৩ হাজার পিওর আল্ট্রাসনিক ডিজিটালমিটার বসানো হবে।
"অটোমেশন প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে পানির অপচয় রোধ হবে। ওয়াসার রাজস্ব বাড়বে," বলেন সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম।