আরও একবার পথ দেখালেন আফিফ-মিরাজ, এলো লড়াইয়ের পুঁজি
গত মাসে ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত প্রথম ওয়ানডের কথাই যেন মনে করিয়ে দিলেন আফিফ হোসেন ধ্রুব ও মেহেদী হাসান মিরাজ। ৪৫ রানে ৬ উইকেট হারানো দলকে পথ দেখিয়ে জয়ের বন্দরে নিয়ে গিয়েছিলেন তারা। ১৭৪ রানের রেকর্ড জুটি গড়ে দলকে অবিশ্বাস্য জয় উপহার দিয়েছিল এই দুই তরুণ তুর্কি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও ব্যাট হাতে তেমন গল্প লিখছেন তারা।
রোববার জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে ৩৪ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে মাঝ দরিয়ায় পড়ে যাওয়া দলকে ঠিক পথে ফেরান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আফিফ। তাদের ৬০ রানের জুটি ভাঙার পর উইকেটে যান মিরাজ। দলের বিপদের সময়ে অসাধারণ ব্যাটিংয়ে আফিফ-মিরাজ গড়ে তোলেন ৮৬ রানের জুটি। তাতে লড়াইয়ের পূঁজি পেল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৯ উইকেটে ১৯৪ রান তুলেছে বাংলাদেশ।
প্রথম ওয়ানডের সঙ্গে কতোই না বৈপরীত্য! ৩৮ রানে জয় পাওয়ার ম্যাচে দলকে দারুণ শুরু এনে দেন তামিম-লিটন। সাবধানী শুরুর পর দলের স্কোরকার্ডে ৯৫ রান যোগ করেন তারা। এদিনও দেখেশুনে শুরু করেন দুজন। কিন্তু প্রোটিয়া পেসার কাগিসো রাবাদা, লুঙ্গি এনগিডিদের দারুণ বোলিংয়ের মুখে সুবিধা করতে পারেননি তারা।
তামিমকে উইকেটে এলোমেলো দেখিয়েছে, পথটা তাই দীর্ঘ হয়নি তার। তৃতীয় ওভারেই ফিরতে হয় বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ককে। এনগিডির লাফিয়ে ওঠা বলে ব্যাট চালিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দেন ১ রান করা তামিম। সহজ ক্যাচটি তালুবন্দি করতে সমস্যা হয়নি কেশব মহারাজের।
সাকিব আল হাসানও এদিন বুঝে ওঠার আগেই সাজঘরে ফেরেন। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে রাবাদার করা পায়ে ওপরের একটি ডেলিভারিতে ফ্লিক করতে গিয়ে কভারে ক্যাচ দেন তিনি। ৬ বল খেললেও রানের খাতা খোলা হয়নি আগের ম্যাচে ৭৭ রানের দারুণ ইনিংস খেলা বাংলাদেশ অলরাউন্ডারের।
লিটন দাসকে ব্যতিক্রম মনে হচ্ছিল। যদিও ডানহাতি এই ওপেনারও পারেননি বেশি সময় উইকেটে টিকতে। ২১ বলে ৩টি চারে ১৫ রান করা লিটন রাবাদার বাউন্সারে ব্যাট ছোঁয়াতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। চাপ কাটিয়ে উঠতে ধীর-স্থির মেজাজে ব্যাট চালানো মুশফিকুর রহিমও ব্যর্থ। ৩১ বলে ১২ রান করে ওয়েন পার্নেলের এলবিডব্লিউর শিকার হন তিনি।
কঠিন অবস্থায় ইয়াসির আলী রাব্বিও চেষ্টা করেছেন উইকেটে থিতু হয়ে দলকে ছন্দে ফেরাতে। কিন্তু ১৪ বলে ২ রান করে রাবাদার তৃতীয় শিকারে পরিণত হন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। ৩৪ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে ঘোর সঙ্কটে পড়ে যায় যায় বাংলাদেশ। এখান থেকে দলের হাল ধরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আফিফ হোসেন ধ্রুব।
ষষ্ঠ উইকেটে ৬০ রানের জুটি গড়ে চাপ কাটিয়ে তোলেন তারা। দলে অনেকটা স্বস্তি ফিরিয়ে বিদায় নেন মাহমুদউল্লাহ। অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান ৪৪ বলে ৩টি চারে ২৫ রান করেন। এরপর আফিফের সঙ্গে জুটি বাধেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে সপ্তম উইকেটে তারা যোগ করেন ৮৬ রান। এ সময় ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন আফিফ।
এই জুটিতে বাংলাদেশ যখন লড়াকু সংগ্রহের আশায়, তখন ঘাতক দেয় দেখা দেন শুরুতে বাংলাদেশের ইনিংস এলোমেলো করে দেওয়া রাবাদা। স্লোয়ারের ফাঁদে ফেলে আফিফকে নিজের চতুর্থ শিকারে পরিণত করেন ডানহাতি এই পেসার। ফেরার আগে ১০৭ বলে ৯টি চারে ৭২ রানের মহা কার্যকর এক ইনিংস খেলেন আফিফ।
এই ওভারে মিরাজকেও ফিরিয়ে দেন রাবাদা। কভারের ওপর দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে ইয়ানেমান মালানের হাতে ধরা পড়েন ৪৯ বলে একটি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৮ রান করা মিরাজ। পরের তিন ব্যাটসম্যান মাত্র ১৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ভোগানো প্রোটিয়া পেসার রাবাদা ১০ ওভারে ৩৯ রান খরচায় ৫টি উইকেট নেন। যা তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেরা বোলিং। লুঙ্গি এনগিডি, ওয়েন পার্নেল, তাবরাইজ শামসি ও রাসি ফন ডান ডুসেন একটি করে উইকেট নেন।