মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দর প্রকল্প: জমির দখল বুঝে পেলো কর্তৃপক্ষ
জমির শ্রেণি নির্ধারণ জটিলতায় দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর অবশেষে মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দর প্রকল্পের জমির দখল বুঝে পেয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বুধবার (৩০ মার্চ) প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহনকৃত ২৮৩ দশমিক ২৭ একর জমির দখল আনুষ্ঠানিকভাবে তাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই প্রকল্পের বড় বাধা ছিলো জমির দখল বুঝে পাওয়া। সেই জটিলতা দুর হয়েছে। এখন পুরোদমে শুরু হবে বন্দর নির্মাণ কাজ।
প্রকল্পের জন্য সময় নির্ধারিত সময় ধরা হয়েছে ২০২৬ সাল। এর মধ্যেই কাজ শেষ করতে শীঘ্রই তিনটি প্যাকেজে দরপত্র আহ্বান করা হবে। প্যাকেজগুলোর মধ্যে রয়েছে টার্মিনাল নির্মাণ, টার্মিনালের জন্য ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ এবং বন্দরের অপারেশনাল কাজে বিভিন্ন নৌযান সংগ্রহ।
এর পাশাপাশি প্রকল্প এলাকায় আগে থেকেই কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নির্মিত ২৫০ মিটার চওড়া চ্যানেল আরো ১০০ মিটার বাড়ানো হবে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি ম্যানেজার (এস্টেট) জিল্লুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "৩০ মার্চ কক্সবাজার জেলা প্রশাসন মাতারবাড়ি বন্দর প্রকল্পের জমির দখল বুঝিয়ে দিয়েছে। এখন আর বন্দর নির্মান কাজ শুরু করতে কোন বাধা নেই।"
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহন শাখার সহকারি কমিশনার আরাফাত সিদ্দিকী টিবিএসকে বলেন, "প্রকল্প এলাকায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে জমির দখল আনুষ্ঠানিকভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বসত ঘর কিংবা কোনো স্থাপনা থাকলে সেগেুলো বন্দর কর্তৃপক্ষ সরিয়ে নেবে।"
অধিগ্রহন বাবদ এখন পর্যন্ত আট জনকে ক্ষতিপুরনের চেক প্রদান করা হয়েছে। বাকিদের চেক প্রদান প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। নোটিশ দেওয়ার ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদানের বাধ্যবাধকতা আছে। এই সময়ের মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্তদের অধিগ্রহণের টাকা প্রদান করা হবে।
মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের শুরুতে প্রকল্প এলাকার ২৮৩ দশমিক ২৭ একর জমি নাল হিসেবে চিহ্নিত করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। সে হিসেবে অধিগ্রহণকৃত জমির মূল্যবাবদ গত বছরের ২ জুন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে ৭৫ কোটি ১১ লাখ ৫৯ হাজার ২৭৫ টাকার চেক প্রদান করে। পরবর্তীতে স্থানীয়রা এই জমিকে লবন মাঠ হিসেবে দাবি করে।
এমন দাবির প্রেক্ষিতে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি সরেজমিন পরিদর্শন করে এটিকে লবনমাঠ হিসেবে চিহ্নিত করে। জমির শ্রেণি পরিবর্তন হওয়ায় ক্ষতিপূরণ মূল্য নির্ধারিত হয় ১৬২ কোটি ৫৮ লাখ ১৪ হাজার ২৭১ টাকা।
ক্ষতিপুরণ বাবদ অতিরিক্ত আরো ৮৭ কোটি ৪৬ লাখ ৫৪ হাজার ৯৯৬ টাকা গত ১৩ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে দেওয়া হয়।
এরপরই ক্ষতিগ্রস্তদের অধিগ্রহণের টাকা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
সর্বশেষ ৩০ মার্চ প্রকল্পের জমির দখল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয় কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। অধিগ্রহণকৃত ভূমির ক্ষতিপূরণ মূল্য পাচ্ছে প্রকল্প এলাকার প্রায় ২ শতাধিক পরিবার।
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার ধলঘাট এলাকায় নির্মিত হচ্ছে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর।
২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। ২০২৬ সালে নির্মান কাজ শেষ হলে মাতারবাড়ি বন্দরের টার্মিনালে ভিড়তে পারবে ১৮ মিটার গভীরতার জাহাজ। এই বন্দরে ৮ থেকে ১০ হাজার কন্টেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারবে।
মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকার ঋণ ১২ হাজার ৮৯২ কোটি, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব তহবিল ২ হাজার ২১৩ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সরকারের ২ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা। প্রকল্প নির্মাণের মেয়াদ ২০২১ সাল থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত।
কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মালামাল আমদানির জন্য ওই এলাকায় দুটি জেটি নির্মাণ করা হয়। তৈরী করা হয় আড়াইশো মিটার প্রস্থ, ১৮ মিটার গভীরতা এবং ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেল বা প্রবেশ পথ। কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি নিয়ে মাতারবাড়ির দুটি জেটিতে এ পর্যন্ত ৭৪টি বাণিজ্যিক জাহাজ ভিড়েছে।