১ কোটি ৪০ লাখ প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় এজেন্ট ব্যাংকিং
গ্রামীণ মানুষদের ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেয়া এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অ্যাকাউন্ট, ঋণ, আমানত ও রেমিট্যান্স সংগ্রহ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত এক বছরে প্রতিটি খাতে ৪৫% থেকে শুরু করে ১৮২% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, কোভিড শুরুর বছর ২০২০ সালে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মোট অ্যাকাউন্টের পরিমাণ ছিল ৯৬ লাখ ৪৩ হাজারের বেশি। এক বছরের ব্যবধানে ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে অ্যাকাউন্টের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ ৪৭ হাজার। সে হিসেবে এই সময়ে বেড়েছে ৪৫.৬৭ শতাংশ।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলেন, গ্রামীণ পর্যায়ে যারা ব্যাংকিং সেবার বাইরে ছিল এর মাধ্যমে অনেক মানুষ ব্যাংক সেবার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এছাড়া কোভিডকালে এ সেবার বিস্তারে মানুষের মাঝে আরও জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বর্তমানে ২৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক ১৩ হাজার ৯৫১টি এজেন্টের আওতায় ১৯ হাজার ২৪৭টি আউটলেটের মাধ্যমে এ সেবা দিচ্ছে। এসব আউটলেটে ১৩ হাজার ৯৫১ এজেন্ট কাজ করছে।
যদিও ২০২০ সাল শেষে আউটলেট ছিল ১৫ হাজার ৯০৮টি। সে হিসাবে এক বছরে ব্যাংকগুলোর এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট বেড়েছে ৩ হাজার ৩৩৯টি। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৩টিই গ্রামাঞ্চলে সেবা দিচ্ছে।
গত বছরের ডিসেম্বর শেষে এজেন্ট ব্যাংকে হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ ৪৭ হাজার ৩৯৬টি। এসব হিসাবে আমানতের পরিমাণ ২৪ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। ২০২০ সালে আমানত ছিল ১৫ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরে আমানত বেড়েছে ৮ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা। যা শতাংশ হিসেবে বেড়েছে ৫২.০৫ শতাংশ।
আমানতের পাশাপাশি ঋণ বিতরণও বেড়েছে। এ সময়ে ৫৫২ কোটি ৪০ লাখ টাকার ঋণ দেয়া হয়েছে। ২০২০ সাল শেষে ৪৮৩ কোটি ১০ লাখ টাকার ঋণ দেয়া হয়েছিল। এক বছরের ব্যবধানে ঋণ বেড়েছে ৬৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। যা শতাংশ হিসেবে প্রায় ১৮২ শতাংশ।
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রধান পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে শেয়ার অব আউটলেটস এবং শেয়ার অব অ্যাকাউন্টসের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অবস্থান করেছে ব্যাংক এশিয়া। এ বিষয়ে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আরফান আলী বলেন, "ব্যাংক এশিয়া গ্রামীণ জনপদের পিছিয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়াতে ২০১৪ সাল থেকে কাজ করছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। আমরা মানুষের সেবা বিস্তারে সার্থক এবং সামনের সময়ে আরও ভালো করব সে প্রত্যাশা রয়েছে।"
"রেমিট্যান্স সার্ভিস প্রদানে এজেন্ট ব্যাংক বড় ধরণের ভূমিকা পালন করে। কারণ একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও সহজে টাকা পেতে পারে। সামনের দিনে আরও মডেল হয়ে দাঁড়াবে এজেন্ট ব্যাংকিং," যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, "আমাদের গ্রামীণ পর্যায়ে শাখা কম তাই ঋণ বিতরণে নতুন মডেল তৈরি করেছি। প্রতিটি জেলায়ই আমরা এজেন্ট শাখা থেকে ঋণ বিতরণ কার্যকর করবো। যার মাধ্যমে ঋণ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। যার ফলে মাইক্রো ক্রেডিট, এগ্রিকালচার ক্রেডিট ও এসএমই ঋণ বিতরণ হবে।"
এদিকে এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে রেমিট্যান্স গ্রহণ ও ঋণ বিতরণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। গত বছর এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫,৩৪৬ কোটি টাকা। যা আগের বছর ২০২০ সালে ছিল ১,৮৯৩ কোটি টাকা। সে হিসেবে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১৮২.৪৩%।
একইসঙ্গে এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে গত বছর রেমিট্যান্স এসেছে ৮২ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা। যা আগের বছর ২০২০ সালে ছিল ৪৮ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা। সে হিসেবে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৬৮.৬৭%।
এ বিষয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আর. এফ. হোসেন টিবিএসকে বলেন, "এজেন্ট শাখার মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে বর্তমানে ব্র্যাক ব্যাংক। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে গ্রামীণ পর্যায়ে এসএমই লোন বৃদ্ধি করা। এখন পুরো মার্কেটের প্রায় ৭০% ঋণ দুই বছরের মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক দিয়েছে। সামনে আমাদের এজেন্ট শাখা বাড়লে আমানত ও রেমিট্যান্সের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়বে।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা ২০১৯ সালের নভেম্বরে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা শুরু করেছি। তার পরে কোভিডের কারণে শাখার বিস্তারটা কম হয়েছে। তারপরও সারাদেশে ৭০০ এজেন্টের বেশি হয়েছে। আমাদের এজেন্ট ব্যাংকি সেবাটা অন্য ব্যাংকের তুলনায় আলাদা। আমরা হাইলি ডিজিটাল সলুশন দিয়ে থাকি যা অ্যাপের মাধ্যমে এজেন্টরা ব্যবহার করে। একই সঙ্গে গ্রাহকরাও ২৪ ঘণ্টাই এই অ্যাপ ব্যবহার করতে পারে।"