দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় ট্যাংক যুদ্ধ হতে পারে রাশিয়ার ডনবাসের যুদ্ধ
মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) রাশিয়া এর বহুল প্রতীক্ষিত 'ডনবাসের যুদ্ধ' শুরু করেছে। এ যুদ্ধ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় ট্যাংক যুদ্ধ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ট্যাংকের জন্ম মোটামুটি একশ বছর আগে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে প্রথমবারের মতো যুদ্ধক্ষেত্রে ট্যাংক প্রদর্শন করে ব্রিটিশরা। ওই ট্যাংকগুলো মূলত পদাতিক সেনাদের পরিখার ওপর কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার জন্য ব্যবহার করা হতো। যদিও ওই প্রাথমিক ট্যাংকগুলোতেও অস্ত্র বসানো ছিল।
এরপর ক্রমে ট্যাংকের বিবর্তন ঘটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ট্যাংকের ভয়াবহ ধ্বংসক্ষমতা প্রত্যক্ষ করে বিশ্ববাসী। তখন মিত্রশক্তি ও অক্ষশক্তি; উভয় পক্ষই শক্তিশালী ট্যাংক নির্মাণ করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শেরম্যান; জার্মানদের প্যাঞ্জার, টাইগার ট্যাংক; রাশিয়ার টি-৩৪ ইত্যাদি ট্যাংকগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইউরোপের রণক্ষেত্রগুলো দাপিয়ে বেড়ায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কয়েকটি বিখ্যাত ও ভয়ংকরতম ট্যাংকযুদ্ধের মধ্যে আছে ব্যাটল অভ রাসেইনিয়া, ব্যাটল অভ ব্রডি, ব্যাটল অভ কার্স্ক, অপারেশন গুডউড ইত্যাদি। এই যুদ্ধগুলোর প্রতিটিতেই দু'পক্ষ হাজারের ওপর কেবল ট্যাংকই ব্যবহার করেছিল।
ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ এখন দ্বিতীয় ধাপে প্রবেশ করেছে। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল দখলে রাশিয়া ডনবাসে আক্রমণ শুরু করেছে। এই যুদ্ধ হবে ইউক্রেন বাহিনীর জন্য এখন অব্দি সবচেয়ে বড় পরীক্ষা।
ডনবাসের যুদ্ধে যে দল জিতবে, তারাই এ যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। রাশিয়ানদের ক্ষেত্রে যুদ্ধে খেই ফিরে পাওয়ার জন্য হলেও ডনবাসে জেতা প্রয়োজন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্কাই নিউজের সাংবাদিক মার্ক স্টোন লিখেছেন, এখানকার (ডনবাস) ভূমিরূপ বেশিরভাগই গ্রাম্য। শহরগুলোর মধ্যে দূরত্ব অনেকবেশি। ফলে দু'পক্ষই ভূমিতে শক্ত অবস্থান নিতে চেষ্টা করবে।
রাশিয়ানরা চাইবে ট্যাংক ও গোলন্দাজ বাহিনীর সহায়তায় বিভিন্ন শহর দখল করে নিতে।
নাইনটিনফর্টিফাইভ ম্যাগাজিনের খবর অনুযায়ী, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ব্যাটল অব কার্স্ক-এর পরে ডনবাসের যুদ্ধ হবে সবচেয়ে বড় ট্যাংক যুদ্ধ। এর ফলাফলই হতে পারে পুরো যুদ্ধের ফলাফল।
রাশিয়া চাচ্ছে ডনবাস লাইনের পূর্বদিক থেকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে। রাশিয়ানরা এখন মারিওপোল থেকে সেনা এনে ডনবাসের দক্ষিণে আক্রমণ ও কিয়েভ থেকে আর্মার (ট্যাংকসহ অন্যান্য সাঁজোয়া যান) এনে উত্তর-ডনবাস অঞ্চলে আক্রমণ করার চেষ্টা করবে।
এ যুদ্ধে রাশিয়া যেমন প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, তেমনিভাবে ইউক্রেনকে প্রচণ্ড ক্ষতি মেনে নিতে হয়েছে। ইউক্রেন প্রতিদিনই যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্য হারাচ্ছে।
এ প্রশিক্ষিত নিহত সৈন্যদের স্থান সহজে পূর্ণ করতে পারছে না ইউক্রেন। এমনকি ফ্রন্টলাইনে রসদ পাঠানোর ক্ষেত্রেও রাশিয়ান হামলার মুখে পড়তে হচ্ছে তাদেরকে।
ইউক্রেনকে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হলে ট্যাংক, সেল্ফ-প্রপেলড গান, এয়ার-ডিফেন্স ইত্যাদি সমন্বিত নতুন ব্যাটল গ্রুপ গঠন করতে হবে৷ এর জন্য প্রয়োজন প্রতিটি ক্রুকে আলাদা আলাদা করে ট্যাংকের সাহায্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া, এরপর প্লাটুন হিসেবে একাধিক ট্যাংকের সাথে প্রশিক্ষণ দেওয়া।
তাই যথাযথ প্রশিক্ষণ ছাড়া যুদ্ধে আর্মার পাঠালেও রাশিয়ার ট্যাংক বাহিনীর বিরুদ্ধে বেশি প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে না ইউক্রেন।
ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর মন্ত্রীদের সাথে এক সভার পর ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা বলেছেন, 'ডনবাসের যুদ্ধ আপনাদেরকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দেবে। এ যুদ্ধে কয়েক হাজার ট্যাংক, সাঁজোয়া যান, বিমান, ও গোলন্দাজ সেনা থাকবে।'
মন্ত্রী আরও বলেন, 'রাশিয়ার প্রস্তুতি দেখে মনে হচ্ছে না এটা কোনো স্থানীয় যুদ্ধ হতে যাচ্ছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আপনারা আমাদের সাহায্য না করলে বা সাহায্য দেরিতে এলে অনেক লোক মারা যাবে।'
রয়টার্স-এর বরাত দিয়ে নিউজউইক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত কেবল চেক রিপাবলিক ইউক্রেনকে ট্যাংক পাঠিয়েছে। দেশটি সম্প্রতি ইউক্রেনকে পাঁচটি টি-৭২ ট্যাংক ও পাঁচটি বিভিপি-১ বা বিএমপি-১ ট্র্যাকড ইনফ্যান্ট্রি ফাইটিং ভেহিকল পাঠিয়েছে।
এর আগে যুক্তরাজ্য ও জার্মানি উভয়ই ইউক্রেনের ট্যাংক পাঠানোর দাবি প্রত্যাখ্যান করেছিল।