জবাবদিহিতা ছাড়া র্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সুযোগ নেই: মার্কিন রাষ্ট্রদূত
রোববার (২৪ এপ্রিল) মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, শক্ত পদক্ষেপ এবং জবাবদিহিতা ছাড়া র্যাবের (র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন) ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) আয়োজিত 'বাংলাদেশ অ্যান্ড ইউনাইটেড স্টেটস রিলেশনস: মুভিং টুওয়ার্ডস এনহ্যানচড কো-অপরেশন অ্যান্ড পার্টনারশিপ' শীর্ষক সেমিনারে তিনি বলেন, "আইন প্রয়োগের বিষয়ে আমি সৎ থাকব। আমরা এমন র্যাবকে দেখতে চাই, যারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কার্যকর থাকবে। তবে মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি সম্মান বজায় রেখেই এটি তারা করবে।"
"কিন্তু র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার মানে এই নয় যে, আমরা আমাদের আইন প্রয়োগকারী নিরাপত্তা সংক্রান্ত সহযোগিতা বাড়াতে পারব না। আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা, সীমান্ত নিরাপত্তা বাড়াতে এবং সহিংস চরমপন্থা প্রতিরোধে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব", যোগ করেন তিনি।
গত বছরের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাব এবং এর ৭জন বর্তমান ও সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
রাষ্ট্রদূত আরও উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্র কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম পুলিশ, অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট এবং চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহীতে মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত রেখেছে।
"প্রস্তাবিত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর আমাদের সন্ত্রাসবিরোধী সহায়তা প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং পুলিশকে নতুন সরঞ্জাম সরবরাহ করতে সহায়তা করবে" বলেন তিনি।
বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র কোনো পক্ষ নেবে না বলে মন্তব্য করেন রাষ্ট্রদূত। সেইসঙ্গে বিশ্বব্যাপী দেশগুলোতে আরও শক্তিশালী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি বলেন, "আমাকে স্পষ্ট করে বলতে দিন, আসন্ন নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনো পক্ষ বেছে নেবে না। আমরা কেবল একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার আশা করি, যার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে যে, কে তাদের দেশ চালাবে।"
সেমিনারের প্রধান অতিথি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, "গত তিন বছরে আমরা অনেক কিছু করেছি। আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু করেছি।"
তিনি মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে আগামী নির্বাচন দেখতে আসার আমন্ত্রণ জানান।
তিনি বলেন, "আমরা আপনার পরামর্শ এবং প্রতিক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়ে যেকোনো দুর্বলতা এবং ঘাটতি পূরণ করতে চাই।"
প্রধান উপস্থাপকদের একজন ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ডক্টর এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, "বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি হল একটি শান্তিপূর্ণ অঞ্চল গড়ে তোলার পররাষ্ট্রনীতি। তবে কোনো সম্পর্কই উত্থান-পতন ছাড়া গড়ে ওঠে না।"
বাংলাদেশে মার্কিন কূটনীতির কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) সভাপতি হুমায়ুন কবির বলেন, "আমাদের কূটনীতিতে কেবল রাজনৈতিক দিকগুলো দেখার প্রবণতা রয়েছে, কিন্তু আমি মনে করি মার্কিন নীতিতে বাংলাদেশের সামাজিক বিষয় যেমন- কৃষি, বেসরকারি খাতের উন্নয়ন, সুশীল সমাজকে সহায়তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, রেমিট্যান্স, ভ্যাকসিন সহায়তা ইত্যাদির ওপরেও গুরুত্ব আরোপ করা হয়।"
"আমি মনে করি অর্থনৈতিক ও কৌশলগত অংশীদারিত্ব জোরদারের বিষয়টি এখন কিছুটা গতি পাচ্ছে", যোগ করেন তিনি।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, আগামী মাসে ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটির উদ্বোধনী সফরকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত থাকবেন তিনি।
তিনি বলেন, "এছাড়া আরও নতুন সুযোগ রয়েছে, যেগুলো আমরা একসঙ্গে কাজে লাগাতে পারি। যেমন- নতুন প্রতিষ্ঠিত ইউএস ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (ডিএফসি) এর ক্লিন এনার্জি, কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা এবং ব্যাংকিং সহ একাধিক সেক্টরে দক্ষিণ এশিয়ায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সক্রিয় পোর্টফোলিও রয়েছে।"
"কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত যে কারণে বাংলাদেশ জেনারেলাইজড সিস্টেম অফ প্রেফারেন্স (জিএসপি) বাণিজ্য সুবিধা পাচ্ছে না, সেই কারণেই ডিএফসি-এর বাংলাদেশে কাজ করার সুযোগ নেই", যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশে শ্রম অধিকার উন্নয়নের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সব ধরনের সহায়তা করতে প্রস্তুত বলেও জানান রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
মার্কিন-বাংলাদেশ সম্পর্ক ঘুরে দাঁড়াতে চলেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "আমাদের অংশীদারিত্ব বাড়াতে এবং সম্পর্কের বিশাল সম্ভাবনা উপলব্ধি করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত রয়েছে।"
ইউএস চেম্বার অফ কমার্সের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের বৃহত্তম উত্স এবং বিশ্বে বাংলাদেশি পণ্যের একক বৃহত্তম বাজার।
বিআইআইএসএস-এর চেয়ারম্যান কাজী ইমতিয়াজ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক রুকসানা কিবরিয়া; ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের সেন্টার ফর বে অব বেঙ্গল স্টাডিজের পরিচালক তারিক এ করিম এবং বিআইআইএসএস-এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান।