ফারমার্স ব্যাংকের ৮৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ, ৪ ব্যবসায়ীর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা
ফারমার্স ব্যাংকের (পদ্মা ব্যাংক) অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতীর সহায়তায় ঋণ নিয়ে ৮৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন চার ব্যবসায়ী। তাদের নেওয়া ওই ঋণকে কু-ঋণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ব্যাংকটি। ব্যাংক মনে করছে এসব ব্যবসায়ী দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছে। তাই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দ্বারস্থ হয়েছে ব্যাংকটি।
ব্যাংকের কাছ থেকে সুনিশ্চিত তথ্য পেয়ে ওই চার ব্যবসায়ীর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সংস্থাটি। ফারমার্স ব্যাংকে জালিয়াতির ঘটনায় গঠিত দুদকের অনুসন্ধান দলের প্রধান সামছুল আলম মঙ্গলবার পুলিশের বিশেষ শাখায় (ইমিগ্রেশন) চিঠি দিয়ে চার জনের বিদেশযাত্রা রহিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছেন।
যাদের বিশেযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তারা হলেন মেসার্স সিয়াম এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. শামীম কবীর (হিলিম), মেসার্স ক্রিয়েটিভ ফিশিং ট্রলারের মালিক এ কে এম আবদুল মোতালেব, মেসার্স স্পার্কের মালিক সৈয়দ আসিফ হাসান ও মেসার্স ওপাল ট্রেডিং হাউসের মালিক মো. মনজুরুল আলম।
দুদকের মুখপাত্র প্রণাব কুমার ভট্টাচার্য দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ইমিগ্রেশনে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দেশে মানি লন্ডারিংসহ বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধানে বিষয়টির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।
পদ্মা ব্যাংক সূত্র জানায়, ব্যাংকটির রিমেডিয়াল এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ডিভিশনের সিনিয়ির এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট সাবিরুল ইসলাম চৌধুরী দুদকের কাছে আলাদা চারটি চিঠি পাঠিয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে ব্যাংকের পাওনার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। একইসঙ্গে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান।
মেসার্স সিয়াম এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. শামীম কবীরের (হিলিম) অভিযোগ, তিনি ব্যাংকটি থেকে ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ নেন। যে উদ্দেশে তিনি ঋণ নিয়েছিলেন সে কাজে ব্যবহার না করে সেখানে বিনিয়োগও করেননি। এ ছাড়া তার ঋণটির পর্যাপ্ত সহায়ক জামানত নেই। কু-ঋণ হিসেবে চিহ্নিত এই ঋণের বর্তমান স্থিতি ১৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
ক্রিয়েটিভ ফিশিং ট্রলারের মালিক এ কে এম আবদুল মোতালেব ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ নেন, যার সহায়ক জামানত পর্যাপ্ত ছিল না। ওই ঋণের বর্তমান স্থিতি ৩০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
স্পার্কের মালিক সৈয়দ আসিফ হাসানের কাছে ব্যাংকের বর্তমান পাওনা ১২ কোটি ৫ লাখ টাকা। আর ওপাল ট্রেডিং হাউসের মালিক মো. মনজুরুল আলমের কাছে পাওনা ২৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
ব্যাংকের সবগুলো চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্যাংকের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতীর সহায়তায় এসব ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। কোনো ঋণের ক্ষেত্রেই পর্যাপ্ত সহায়ক জামানত নেওয়া হয়নি। তারা যে উদ্দেশ্যে ঋণ নিয়েছিলেন সে কাজেও ব্যবহার করেননি। ব্যাংকের সঙ্গেও তারা যোগাযোগ রাখছেন না। ব্যাংক মনে করছে, এই অর্থ তারা দেশের বাইরে পাচার করেছেন। দুদকও মনে করছে এসব অর্থ পাচার হয়েছে। তাদের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।