নিজ পায়ে উঠে দাঁড়িয়েছে রুশ অর্থনীতি!
রাশিয়ার অর্থনীতি নিষেধাজ্ঞার চাপে ধসে যাবে, পুরো বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে রুশ আর্থিক খাত। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু করায় রাশিয়াকে শায়েস্তা করতে স্মরণকালের সর্বোচ্চ সংখ্যক নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে এমন আশা করেছিল পশ্চিমা বিশ্ব। কিন্তু, তাদের সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। গত এপ্রিলে বিশ্বখ্যাত গণমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্ট প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানায়, রুশ অর্থনীতি ধসের পূর্বাভাসকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে। সাম্প্রতিক তথ্যও পুরোনো ওই বিশ্লেষণকে দৃঢ় সমর্থনের ভিত্তি দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইকোনমিস্টের বিশ্লেষকরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুঁজি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ এবং উচ্চ সুদহার কার্যকর করে সমর্থন দেওয়ায় দেশটির মুদ্রা রুবল ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগের সময়ের মানে ফিরে এসেছে পতনের তলানি থেকে। সঠিকভাবে ফরেন কারেন্সি বন্ডের সুদও পরিশোধ করতে পারছে রাশিয়া।
রাশিয়ার প্রকৃত অর্থনীতিও বিস্ময়কর প্রতিকূলতা সহনশীল বলে জানিয়েছে ইকোনমিস্ট।
তবে বিশ্লেষকরা সাম্প্রতিক অতীতের কথাও বলেছেন, কারণ ওই সময়ের অনুমান করেই রুশ অর্থনীতি নাকাল হবে এমন ধারণা করেছিল পশ্চিমা বিশ্ব। যেমন চলতি বছরের শুরু থেকে এপর্যন্ত রাশিয়ায় ভোক্তা পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ হয়েছে। শুরুতে রুবল মান হারানোয় দেশটির পক্ষে আমদানি আরো ব্যয়বহুল হয়ে পড়লে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তাছাড়া অনেক পশ্চিমা কোম্পানি ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ায়, সরবরাহ সীমিত হয়ে পড়ে। এসময় দেরিতে কর্মীদের বেতনভাতা দিচ্ছে এমন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও বাড়ছে বলে ধারণা করা হয়েছিল।
এত কিছুর পরও রুশ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বাস্তব ব্যবস্থাগুলি টিকেই গেছে। মোট বিদ্যুৎ ব্যবহার কমেছে সামান্যই। মার্চে খরচে লাগাম দিলেও, এখন রুশ ভোক্তাদের ক্যাফে, পানশালা বা রেস্তোরাঁয় দরাজ চিত্তেই খরচ করতে দেখা যাচ্ছে বলে এক ভোক্তাব্যয় জরিপের ভিত্তিতে জানিয়েছে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ব্যাংক- সবিয়ারব্যাংক।
গত ২৯ এপ্রিল মূল সুদহার আগের ১৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৪ শতাংশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক- সেন্ট্রাল ব্যাংক অব রাশা। এ ঘটনা গত ফেব্রুয়ারিতে আর্থিক খাতে যে তীব্র শঙ্কা ও উদ্বেগের পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল- তা কিছুটা কমে আসারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
নিশ্চিতভাবেই আগের তুলনায় সংকুচিত হচ্ছে রাশিয়ার অর্থনীতি। কিছু অর্থনীতিবিদ চলতি বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশের মতো নাটকীয় হারে কমার পূর্বাভাস দিয়েছেন, কিন্তু বর্তমান অবস্থায় সেটি বাস্তবে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা খুব কমই দেখা যাচ্ছে।
ইউক্রেনে আগ্রাসনের আগেও রাশিয়ার অর্থনীতি মোটামুটি আবদ্ধই ছিল। তাতে নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলির তীক্ষ্মধার ভোঁতা হয়েছে অনেকাংশে।
ফিনল্যান্ড- ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এপর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি ডলারের জীবাশ্ম জ্বালানি জাহাজ ও পাইপলাইনের মাধ্যমে রপ্তানি করেছে মস্কো। ফলে ২০২২ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে হাইড্রোকার্বন খাত থেকে রুশ সরকারের রাজস্ব বছরওয়ারি হিসাবে ৮০ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
রাশিয়ার রপ্তানিকে নাস্তানাবুদ করতে গত ৪ মে সব ধরনের রাশিয়ান তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব দেয় ইউরোপিয় কমিশন, যা এ বছরের শেষদিকে কার্যকর হবে। তার আগ পর্যন্ত রাশিয়ার অর্থনীতি সব ঝঞ্ঝা ঠেলে এগিয়ে যাবে এমনটাই প্রত্যাশা করা উচিত বলে ইকোনমিস্টের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট