ঋণের পাশাপাশি বিদেশি সিনেমা চালানোর দাবি হল মালিকদের
নতুন সিনেমা হল নির্মাণ ও পুরনো সিনেমা হল সংস্কারের জন্য সরকার ঋণ প্রদানের উদ্যোগ নিলেও চালানোর মতো ভালো চলচ্চিত্র নেই জানিয়ে বিদেশি চলচ্চিত্র নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন হল মালিকেরা। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত সকল সংগঠনের মতামত নিয়ে সীমিত আকারে বিদেশি সিনেমা দেশের সিনেমা হলে চালানোর ব্যবস্থা করা হবে।
গতকাল রাজধনীর তথ্য ও প্রকাশনা অধিদপ্তরে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে এ সংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভায় নিজেদের দাবি উত্থাপন করেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির নেতারা।
সভার বিষয় 'দেশের বিদ্যমান সিনেমা হল সংস্কার ও আধুনিকায়ন এবং নতুন সিনেমা হল/সিনেপ্লেক্স নির্মাণের লক্ষ্যে অংশীজনদের সাথে ঋণ সুবিধা প্রাপ্তি ও ঋণের সুষ্ঠু ব্যবহার বিষয়ক মত বিনিময় সভা' হলেও সেখানে সারাদেশ থেকে আগত হল মালিকেরা জানান নানা সংকটের কথা। পাশাপাশি সিনেমা হলের প্রধান খোরাক সিনেমা যদি না থাকে তাহলে ঋণ নিয়ে সেটা শোধ করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে বলে জানান তারা। তাই হল সংস্কারের পাশাপাশি নতুন নতুন সিনেমা নির্মাণ যেমন জরুরী, তেমনি বিদেশি বিশেষ করে ভারতীয় সিনেমা আমদানির দাবি করেন তারা।
উল্লেখ্য, প্রেক্ষাগৃহগুলো আধুনিক করার মাধ্যমে দেশের চলচ্চিত্রের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি হল মালিকদের স্বল্প সুদে ঋণ দিতে এক হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে প্রেক্ষিতে গত বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চে বাংলাদেশ ব্যাংক দু'টি পরিপত্রের মাধ্যমে সকল তফসিলভুক্ত ব্যাংক থেকে নতুন সিনেপ্লেক্স বা সিনেমা হল নির্মাণে সর্বোচ্চ ১০ কোটি এবং সংস্কারে সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা ঋণের ব্যবস্থা করেছে। দেশে মেট্রোপলিটন এলাকাগুলোতে ৫ শতাংশ ও এর বাইরের এলাকায় সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে ৮ বছর মেয়াদী এ ঋণ সুবিধা রাখা হয়েছে।
এ তহবিল থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নিতে আবেদনের সময় নির্ধারিত ছিল গত ৩১ মার্চ; এই সময়সীমার মধ্যে নতুন সিনেমা হল নির্মাণ ও হল সংস্কারের জন্য ৫৩ হল মালিক আবেদন করলেও বাকিরা দ্বিধায় রয়েছেন বলে জানান প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস। তাদের মধ্যে উৎসাহ তৈরি করতে এই সভা বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি জানান।
সভায় সুদীপ্ত বলেন, হল মালিকেরা শঙ্কায় রয়েছেন। কারণ ঋণ নিয়ে টাকাটা সুদসহ ফেরত দিতে গেলে ছবি চালিয়ে ফেরত দিতে হবে। এখন দেশে যে ছবিগুলো হচ্ছে, সেই ছবি চালিয়ে ঋণের টাকা ফেরত দেওয়ার সম্ভাবনা নাই। সেই কারণেই হল মালিকরা দোদুল্যমান অবস্থায় আছে।"
মতবিনিময় সভায় সুদীপ্ত কুমার দাস ছাড়াও সাথী সিনেমা হলের কর্ণধার মিয়া আলাউদ্দিন, অভিসার সিনেমা হলের মালিক সফর আলী ভুঁইয়া, বগুড়ার মধুবন সিনেমা হলের মালিক ইউসুফ রুবেলসহ অনেকেই বক্তব্য রাখেন।
তারা প্রত্যেকেই ঋনের সুদহার কমানো ও গ্রেস পিরিয়ড বাড়ানোর দাবির পাশাপাশি দেশের সিনেমার নির্মাণ বাড়ানো এবং ভারতীয় সিনেমা আমদানির দাবি তুলেছেন।
দাবির বিষয়ে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হাছান মাহমুদ বলছেন, "আগের তুলনায় সিনেমার অনুদানের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে; এর মধ্যে বাণিজ্যিক সিনেমার সংখ্যাও বেড়েছে। অনুদানের সিনেমা ২০টি হলে মুক্তির বাধ্যবাধকতা জুড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে দেশের সিনেমার সংখ্যা আগের তুলনায় বাড়ছে। আমরা এ বছরও বাণিজ্যিক সিনেমায় অনুদান দেওয়ার চেষ্টা করছি।"
ভারতীয় সিনেমা আমদানিতেও কোনো অসুবিধা নেই বলে জানান তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী। বলেন, "উপমহাদেশের সিনেমা আমদানি নিয়ে প্রদর্শক ও পরিচালকরা একমত হয়েছে। শিল্পী সমিতি এখনও একমত নয়। সবার সঙ্গে কথা বলে দশ-বারোটার মতো উপমহাদেশের সিনেমা মুক্তি পেলে সিনেমা হলগুলোরও ভালো হবে।"
ঋণ পরিশোধ নিয়ে হল মালিকদের শঙ্কার বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, "সিনেমা হলের সঙ্গে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করে দোকান ভাড়া দিয়ে প্রাপ্ত আয় থেকেও চাইলে হল মালিকরা ঋণ পরিশোধের উদ্যোগী হতে পারেন। সিনেপ্লেক্সের সঙ্গে ফুড কোর্ট ও মার্কেটসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থাকলে দর্শকরা যেমন সিনেমা দেখতে আগ্রহী হবেন, তেমনি শুধু হলের উপর নির্ভর না করে সেখান থেকে আয় নিয়েও ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন হল মালিকরা।"
সভাটি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মকবুল হোসেনের সভাপতিত্বে অতিরিক্ত সচিব ফারুক আহমেদ, চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিন, চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা, ইউসিবি, মেঘনা, বিডিবিএল ও ইউনিয়ন ব্যাংকের প্রতিনিধিবৃন্দ এবং রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শতাধিক সিনেমা হলের মালিক ও আগ্রহী উদ্যোক্তাবৃন্দ সভায় অংশ নেন। সভার শুরুতে হল মালিকদের পক্ষ থেকে মন্ত্রী ও সচিবকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস।