ডলার সংকটে কম গুরুত্বপূর্ণ ও বিলাসপণ্যের আমদানি স্থগিতের পরিকল্পনা সরকারের
বৈদেশিক মুদ্রার নিরাপদ রিজার্ভ ধরে রাখতে কিছু কম গুরুত্বপূর্ণ ও বিলাসপণ্যের আমদানি সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে কোন কোন পণ্যের আমদানি স্থগিত করা হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রাজস্ব বোর্ড যৌথভাবে পণ্য তালিকা করবে।
গতকাল দুপুরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহর সঙ্গে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, তিনি ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন না। পণ্য আমদানি স্থগিত করার বিষয়ে এনবিআরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) এ কে এম আলী আহাদ খান টিবিএসকে বলেন, এখনও পণ্য তালিকা চূড়ান্ত করা হয়নি। শিল্প মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশন ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করে তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।
ইউক্রেন-রাশিয়া চলমান যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ায় বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্সের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ বাড়ছে। বর্তমানে রিজার্ভের পরিমাণ ৪২ বিলিয়ন ডলার, যা দিয়ে প্রায় পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
এর ফলে অফিসিয়াল ইন্টারব্যাংক এক্সচেঞ্জ রেট প্রতি ডলার ৮৭.৫০ টাকা হলেও গত সপ্তাহে কার্ব মাকেটে ডলারের মূল্য সর্বোচ্চ ১০৪ টাকায় উঠে। পরের দু'দিন কিছুটা কমলেও রবিবার তা আবার বেড়ে ৯৮ টাকায় উন্নীত হয়েছে। এছাড়া, ইন্টারমার্কেট ট্রানজেকশন রেট ছিল ৯৭.৫০ টাকা। ডলার সংকটের কারণে অনেক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চাহিদামতো এলসি খুলতে পারছে না।
ডলার মার্কেট স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক এ পর্যন্ত ৫.১১ বিলিয়ন ডলার বাজারে ছেড়েছে। এছাড়া গাড়িসহ বিলাস পণ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণে এলসি মার্জিন বাড়ানো হয়েছে। সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এখনই বাস্তবায়ন জরুরি নয়, এমন সব প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখতে সরকার যে বড় ধরণের পদক্ষেপ নেবে, তা গত ১৭ এপ্রিল অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় স্পষ্ট করেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক পর্যায়ে ধরে রাখতে সরকার আগামী এক-দুই মাসের মধ্যে সিরিজ অব মেজার্স নেবে জানিয়ে অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার ওইদিন বলেন, 'এ বিষয়ে আমরা সিরিজ অব পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছি। ইতোমধ্যে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক ছোট ছোট আকারে কিছু পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে এবং এটি আস্তে আস্তে বাড়বে।'
'আমরা প্রথমেই বড় আকারে পদক্ষেপ নিতে চাই না। সরকার দেখতে চায় যে, মার্কেট কিভাবে বিহেভ করে, আমরা সেভাবেই পদক্ষেপ নেব। আগামী এক-দুই মাসের মধ্যেই আরও অনেক মের্জাস আসবে। আমাদের ম্যাক্রো ইকোনমি স্ট্যাবিলিটি নষ্ট হবে, এমন কোন বিষয়ে আমরা কখনও কম্প্রোমাইজ করবো না', যোগ করেন তিনি।
অর্থসচিব জানান, বৈদেশিক ঋণ নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। গত অর্থবছর বাংলাদেশ ১.৪১৯ বিলিয়ন ডলার মূল ঋণ ও ৪৯৬ মিলিয়ন ডলার সুদ পরিশোধ করেছে, যা ওই অর্থবছরের মোট রপ্তানি আয়ের ৪.৭%। চলতি অর্থবছর ১.৭০ বিলিয়ন ডলার মূল ঋণ ও ৭২৬ মিলিয়ন ডলার সুদ পরিশোধ করতে হবে, যা মোট রপ্তানি আয়ের ৫% হবে।