বছরের সেরা মুদ্রা রুবল, এমন 'অস্বাভাবিক অবস্থা' দেখে হতবাক মার্কিন অর্থনীতিবিদেরা
মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে মোটামুটি 'বুড়ো আঙুল' দেখিয়ে এ বছরের সেরা মুদ্রা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে রাশিয়ার রুবল। কোনো দেশ নিষেধাজ্ঞায় পড়লে তার ফিয়াট মুদ্রার (ফিয়াট কারেন্সি: বিশ্বের সরকারগুলোর ইস্যুকৃত মুদ্রা) মূল্যমান কমে যায়, কিন্তু রাশিয়ার ক্ষেত্রে এর উল্টোটা ঘটেছে। আর এরকম 'অস্বাভাবিক অবস্থা' দেখে হতবুদ্ধি হয়ে গেছেন মার্কিন অর্থনীতিবিদেরাও।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে রাশিয়ান রুবলের বড় দরপতন ঘটে। সে সময় আতঙ্কিত রাশিয়ান নাগরিকেরা এটিএম থেকে দ্রুত টাকা তুলতে শুরু করেন। তখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে ক্রমান্বয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যাচ্ছিল ইউক্রেন আক্রমণের বিরোধী বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।
এর পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় কমিশন, ও অন্যান্য পশ্চিমা শক্তি ব্যাংক অভ রাশিয়ার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।
বছরের এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে রাশিয়া রুবলের জাদু দেখাতে শুরু করে। সেসময় রাশিয়া সোনার সাপেক্ষে রুবলের দাম ঠিক করে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি গ্রাম সোনার দাম ৫০০০ রুবল হিসেবে স্থির করে।
এর পাশাপাশি রাশিয়া নির্দেশনা দেয়, 'অবন্ধুসুলভ' দেশগুলো তার কাছ থেকে গ্যাস কিনতে হলে দাম রুবলে পরিশোধ করতে হবে। সে নির্দেশনা অনুযায়ী বর্তমানে অনেক আন্তর্জাতিক ক্রেতাই রুবলের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে জ্বালানি ক্রয় করছে।
এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহেই রুবল আবার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্ববর্তী মানে পৌঁছে যায়। এরপর থেকে এ মুদ্রাটি এখনো টিকে থাকার ক্ষমতা দেখিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে খোদ পশ্চিমা বিশ্বের গণমাধ্যমগুলোই জানিয়েছে, ২০২২ সালের সবচেয়ে কার্যকরী মুদ্রা হিসেবে স্থান দখল করে নিয়েছে রুবল।
মার্কিন গণমাধ্যম সিবিএস-এর সাথে এক আলাপে হার্ভার্ড কেনেডি স্কুল-এর অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ জেফরি ফ্রাঙ্কেল বলেন, ''রুবলের এ উত্থান একটা 'অস্বাভাবিক পরিস্থিতি'র সৃষ্টি করেছে। ইউরো ও ডলারের বিপরীতে এর দাম বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণে।'
একই গণমাধ্যমকে অক্সফোর্ড ইকোনমিক্স-এর অর্থনীতিবিদ তাতিয়ানা ওরলোভা বলেছেন, 'রাশিয়ায় এখন পণ্যদ্রব্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। যদিও নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটির অনেক রপ্তানি কমে গেছে, জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানির ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া গেছে।'
এ অর্থনীতিবিদ আরও জানান, রাশিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুঁজির নিয়ন্ত্রণ ও বিদেশি স্টকহোল্ডারদের লভ্যাংশ আন্তর্জাতিকভাবে না নেওয়ার উপায় বন্ধ করার ফলে রাশিয়ার মুদ্রার বাইরে চলে যাওয়াও অনেকাংশে ঠেকানো গেছে।
অন্যদিকে বাইডেন প্রশাসন বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে সংকটে আছে। বাইডেনের দাবি, 'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় অর্থনৈতিকভাবে অনেক শক্ত অবস্থানে আছে।' যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বাড়ার জন্য বাইডেন পুতিনকে দোষারোপ করে এ মূল্যবৃদ্ধিকে 'পুতিনের মূল্যবৃদ্ধি' হিসেবে অভিহিত করেছেন।
সূত্র: বিটকয়েন ডট কম নিউজ