খালেদা, ড. ইউনূস ও বিশ্বব্যাংক প্রধান আমন্ত্রণ পাবেন পদ্মা সেতু উদ্বোধনে: কাদের
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন পদ্মা সেতুর উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আমন্ত্রণ জানানোর চিন্তা করছে সরকার।
"শেখ হাসিনা আমাদের তাদেরকে আমন্ত্রণ জানানোর নির্দেশনা দিয়েছেন," পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ পরিদর্শন শেষে মাওয়া প্রান্তে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন তিনি।
তিনি জানান, আমন্ত্রণপত্র ছাপানো শেষ হয়েছে, আগামী বৃহস্পতিবার থেকে আমন্ত্রণ জানানো শুরু হবে।
"বিদেশি যাদের আমন্ত্রণ করব তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানানো হবে। আর বেগম খালেদা জিয়াকে আমরা সরাসরি চিঠি দেব।"
১০০ বছরের আয়ুষ্কালের এই সেতুর ঋণ ৩৫ বছরে পরিশোধ হবে বলে জানান তিনি।
৩০ হাজার কোটি টাকায় এ সেতু নির্মাণে সেতু বিভাগ অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ঋণ নিয়েছে। ১ শতাংশ সুদে ৩৫ বছরে মোট ৩৬ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করা হবে।
বছরে চারটি কিস্তি হিসেবে মোট ১৪০ কিস্তিতে এ ঋণ শোধ করা হবে। ঋণ পরিশোধের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই টোল হার ধরা হয়েছে বলে তিনি জানান।
সেতু উদবোধনের পরের দিন সকাল ছয়টা থেকে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি চলতে পারবে বলে জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।
এ সময় মন্ত্রী বলেন, "২৫ জুন মাওয়া প্রান্তে সকাল ১০ টায় সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী। নামফলক উন্মোচন শেষে তিনি গাড়ি দিয়ে সেতু পার হবেন।জাজিরা প্রান্তে আরেকটি নাম ফলক উন্মোচন শেষে প্রধানমন্ত্রী জনসমাবেশে ভাষণ দেবেন।"
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রমাণ করেছেন বাংলাদেশও এমন মেগা প্রকল্প সফল করতে পারে।
"এখানে আমাদের কারো কৃতিত্ব নেই, কৃতিত্ব শুধু শেখ হাসিনার। আমরা তার আদেশ পালন করেছি, দেখাশোনা করেছি নিষ্ঠার সঙ্গে। কিন্তু সেতু নির্মাণের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব একজনের, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার।"
ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা বাংলাদেশকে দুর্নীতি ও চুরির অপবাদ দিয়েছিল, এ সেতু নির্মাণ করে তাদের উপযুক্ত জবাব দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
"আমরা বীরের জাতি, দুর্নীতি করি না। এ সেতু আমাদের গর্বের সেতু।"
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু এখন স্বপ্ন নয়, এটি দৃশ্যমান বাস্তবতা। জাতির সামর্থ্য ও সক্ষমতার প্রতীক এ সেতু। "একদিকে এটি সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক, অন্যদিকে সমালোচকদের জন্য প্রতিশোধের প্রতীকও।"
পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি বলে এ সময় উল্লেখ করেন সেতুমন্ত্রী। তিনি বলেন, সমালোচনা যত হয়েছে আমাদের মনোবল তত দৃঢ় হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে। বিশ্বব্যাংক ভুল স্বীকার করেছে।
এ সময় সেতু বিভাগের সচিব মো. মঞ্জুর হোসেন জানান, টোল আদায়ে ম্যানুয়াল ও স্বয়ংক্রিয় উভয় ব্যবস্থা থাকবে। একটি লেইনে ইলেকট্রনিক টোল সিস্টেম ও অন্য পাঁচ লেনে ম্যানুয়াল পদ্মতিতে টোল আদায় হবে।
ম্যনুয়াল লাইনে ক্যাশ ও ডেবিট কার্ডে টোল পরিশোধ করা যাবে।
তিনি জানান, ইটিসি সিস্টেম চালু করতে ছয় মাস সময় লাগবে। এ পদ্ধতিতে এক মুহূর্তেই টোল আদায় করা যাবে।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে নাশকতার আশঙ্কার কথাও জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।
সম্প্রতি সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ড, সিলেটে ট্রেনে আগুনসহ কয়েকটি ঘটনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, "এগুলো অন্তর্ঘাত হতে পারে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা আমাদের আগেও ছিল, এখনো আছে।"
রোববার সকালে মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর প্রথম পিলারে কয়েক ডজন শ্রমিককে গ্যাস লাইন বসাতে দেখা যায়। পিলারের সাথে লাগানো একটি অস্থায়ী ধাতব মই দিয়ে তারা সেতুতে উঠছিলেন।
শ্রমিকদের একজন সুমন মিয়া বলেন, পুরো ৬.১৫ কিলোমিটার সেতুর ইউটিলিটি লাইন বসানোর কাজ প্রায় শেষ।
সুমনের সহকর্মী আরিফুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "কোন বড় কাজ বাকি নেই, শুধু শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জার কাজ চলছে।"
সেতুর কাজ প্রায় শেষের দিকে হওয়ায় তাদের মুখে আনন্দের ঝিলিক। এদিকে উদ্বোধন অনুষ্ঠান আয়োজনে ব্যস্ত ছিল সেতু কর্তৃপক্ষ।