ই-সিগারেট বিক্রি ও ব্যবহার নিষিদ্ধের প্রস্তাব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের
ই-সিগারেট বা ভ্যাপ, ওরাল নিকোটিন পাউচ নিষিদ্ধ করে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন আবারও সংশোধনের খসড়া তৈরি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এতে ই-সিগারেট ব্যবহার করলে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
ই-সিগারেট বা এর যন্ত্রাংশ বা অংশ-বিশেষ উৎপাদন, আমদানি, রপ্তানি, সংরক্ষণ, ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহন নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবও রয়েছে আইনের খসড়া সংশোধনীতে।
এ বিধান লঙ্ঘন করলে প্রথমবার সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড- উভয় দন্ডে সাজা পেতে হবে। এ ধরনের অপরাধ বার বার করলে পর্যায়ক্রমিকভাবে এই দণ্ডে দ্বিগুণ হারে শাস্তি পাবেন দোষী প্রমাণিত ব্যক্তি।
এসব বিধান রেখে ২০০৫ সালে প্রণীত ও ২০১৩ সালে সংশোধিত ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধনের জন্য প্রণীত খসড়া সম্প্রতি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। আগামী ১৪ জুলাইয়ের মধ্যে খসড়া সংশোধনীর উপর মতামত চেয়েছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ।
বিদ্যমান আইনে ই-সিগারেট সম্পর্কে কোন কিছু বলা নেই। তবে তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো এটি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছে।
কয়েকবছর আগে বিদেশ থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে ই-সিগারেট আসতে থাকে বাংলাদেশে এবং খুব দ্রুতই তরুণদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
নতুন আইনে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের সঙ্গে কোনও মিষ্টিদ্রব্য, মশলা, সুগন্ধি, আসক্তিমুলক দ্রব্য বা অন্য কোন মিশ্রণ যুক্ত করা যাবে না। কেউ এ বিধান লঙ্ঘন করলে প্রথমবার সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। এ অপরাধ বার বার করলে প্রতিবার দ্বিগুণ সাজা হবে।
ধূমপান-বিরোধী আইন সংশোধন করে ভ্রাম্যমাণ দোকানে বা ফেরি করে তামাক ও তামাকজাত পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবও করা হয়েছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ক্লিনিক, খেলাধুলার স্থান ও শিশু পার্কের সীমানার ১০০ মিটারের মধ্যে তামাক ও তামাকজাত পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ করার বিধান যুক্ত করা হচ্ছে।
কেউ এসব বিধান লঙ্ঘন করলে প্রথমবার সর্বোচ্চ ৫,০০০ টাকা জরিমানা এবং বার বার একই ধরণের অপরাধ করলে পর্যায়ক্রমিকভাবে দ্বিগুণ হারে দণ্ডণীয় হবেন।
আইনের খসড়া সংশোধনীতে বলা হয়েছে, তামাক ও তামাকজাত পণ্য বিক্রি করতে হলে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান থেকে বাধ্যতামূলকভাবে লাইসেন্স নিতে হবে। লাইসেন্স ছাড়া কেউ তামাকজাত পণ্য বিক্রি করলে প্রথমবার অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৫০,০০০ টাকা জরিমানা এবং বার বার একই অপরাধ করলে প্রতিবার দ্বিগুণ হারে দণ্ডণীয় হবেন।
এছাড়া, তামাকজাত দ্রব্যের সব ধরণের প্যাকেট, মোড়ক, কার্টন ও কৌটার উপর অংশের ৯০ ভাগ জুড়ে তামাকজাত পণ্য ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি সম্পর্কে রঙ্গিন ছবি ও লেখা সম্বলিত সতর্কবাণী বাংলায় মুদ্রণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিদ্যমান আইনে বিড়ি-সিগারেটের প্যাকেট ও জর্দার কৌটায় উপরের ৫০ ভাগ জুড়ে রঙ্গিন ছবি ও লেখা সম্বলিত স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সতর্কবাণী বাংলায় মুদ্রণ করার বিধান থাকলেও বর্তমানে তা নিচের অর্ধেকে ছাপা হচ্ছে।
এবিষয়ে তামাক বিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'সংশোধনীর খসড়াটি সময়োপযোগী। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি পাস করে কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা হলে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।'
তিনি আরও বলেন, ২০০৫ সালে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন করার পর ২০১৩ সালে তা সংশোধন করা হলেও- বাস্তবে তাতেও অনেক ঘাটতি আছে। এখন যে সংশোধনীর খসড়া তৈরি করা হয়েছে, তা বাস্তবতার নিরিখে যৌক্তিক হয়েছে।