এলডিসি থেকে উত্তরণের আগেই বাংলাদেশকে উৎপাদন-নির্ভর হতে হবে: অর্থনীতিবিদ
স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নাম লেখাবার আগেই বাংলাদেশকে উৎপাদন-নির্ভর, দক্ষ দেশ হিসেবে সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। রপ্তানিযোগ্য প্রতিটি সেক্টর ধরে ধরে এই কাজটি আগামী ৫ বছরের মধ্যে শেষ করার সুপারিশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা।
স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ আয়োজিত 'উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ: প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বিশাল অর্জন' শীর্ষক এক ওয়েবিনারে উপস্থিত অর্থনীতিবিদরা এসব কথা বলেন।
অর্থনীতিবিদরা বলেন, ২০২৬ সালে পুরোপুরিভাবে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে বাংলাদেশকে ৪টি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে বাজার সুবিধার জায়গা তৈরি করা, বিভিন্ন দেশের সম্পর্কের পরিবর্তনকে তত্ত্বাবধান করা, দেশি নীতিমালার প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করা এবং শ্রম ও পরিবেশের বিষয়ে আমাদের যে শৈথিল্য রয়েছে তা দূর করা।
এ সময় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'আমরা যাতে মসৃণ এবং টেকসই উত্তরণ করতে পারি, সেজন্য আমাদের হাতে আগামী ৫ বছর রয়েছে প্রস্তুতির জন্য। এই সময়ে আমাদেরকে উৎপাদনশীলতা নির্ভর, দক্ষতা নির্ভর দেশ হিসেবে সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।'
তিনি বলেন, 'বাজার সুবিধার জায়গায় ব্যাপকভাবে কাজ করতে হবে। কারণ আমরা যখন শুল্ক মুক্ত, কোটামুক্ত সুবিধা হারাবো তখন ভিয়েতনাম, চীন, জাপান, কোরিয়া, অষ্ট্রেলিয়া এই সুবিধা পাবে। এটা পূরণ করতে হলে আঞ্চলিক চুক্তির পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। আগে আমরা এককভাবে সুবিধা নিয়েছি। এখন কোন দেশের কাছে সুবিধা চাইলে তাদেরকেও সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব রাখতে হবে'।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, 'আমরা প্রথমেই আন্তর্জাতিক বাজারে ডিউটি ফ্রি, কোটা ফ্রি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবো। এখানে আমাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি বাড়াতে হবে। তাহলে এই ডিউটি ফ্রি সুবিধা যেটা হারাবো সেটা নিয়ে খুব একটা সমস্যা হবে না'।
উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেলে এডিবি, বিশ্বব্যাংকের ঋণ পেতে খরচ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমরা ইতোমধ্যেই এডিবি, বিশ্বব্যাংকের ব্লেন্ডেড ফাইনান্সিং এর মধ্যে আছি। সুতরাং এটা যে আমাদের খুব বেশি ভোগাবে তা আমি মনে করি না'।
তিনি বলেন, 'সহজে ব্যবসা সূচক বা ইজ অব ডুয়িং ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থা খুব সন্তোষজনক না হওয়ায় বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির কথা যেভাবে বলা হচ্ছে তা হয়তো আশা করা মুশকিল। বেসরকারী খাত কম সুদে বৈদেশিক ঋণ আহরণের চিন্তা করছে সে বিষয়েও সতর্ক থাকা উচিত'।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'বাণিজ্যের ক্ষেত্রে, আমাদের বাজার কিভাবে ওপেন করতে হবে সে বিষয়ে এখনি ভাবতে হবে। আমাদের কারও সঙ্গেই অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি নেই। হওয়ার সম্ভাবনাটাও নিজেরা অনেকটা বন্ধ করে রেখেছি। কারণ বাংলাদেশ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি প্রটেক্টেট মার্কেট। আমাদের প্রায় ২৭ শতাংশ অ্যাভারেজ প্রটেকশন লেভেল, যেটা ভারতে ৯ শতাংশ, চীনে ৯ শতাংশ এবং আসিয়ান দেশগুলোতে ৭.৪ শতাংশ। এদের সঙ্গে তুলনা করলে অবশ্যই আমাদের এটা বেশি। তাহলে কেন অন্য দেশ আমাদের সঙ্গে অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি করবে'।
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের শুধু যে সুবিধা নিয়ে ব্যবসা করতে হবে তা নয়। কোন সুবিধা ছাড়াই চীন যেভাবে সারাবিশ্বের একটি ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসেবে পরিচিত হয়েছে, আমরা কেন পারবো না? আমাদেরও এর জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে'।