আরেকটি হারের অপেক্ষায় বাংলাদেশ
টেস্ট ক্রিকেট যে ধৈর্যর খেলা; সেটা মনে থাকে তো বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের? বাংলাদেশের ক্রিকেটে এমন প্রশ্ন বহু পুরনো। পুরনো প্রশ্নটিই ঘুরেফিরে সামনে আসে, কিন্তু উত্তর মেলে না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে তামিম ইকবাল, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসানরা যেভাবে আউট হলেন, টেস্ট ক্রিকেটে তা একেবারেই বেমানান। কোচদের ভাষায় এটা 'ক্রাইম'। ফল যা হওয়ার, তেমনই হচ্ছে। আরেকটি হারের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে বাংলাদেশকে, যেটা হতে পারে ইনিংস হারও।
সেন্ট লুসিয়ার ড্যারেন স্যামি ন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ১৭৪ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ ৬ উইকেটে ১৩২ রান তুলেছে। নুরুল হাসান সোহান ১৬ ও মেহেদী হাসান মিরাজ শূন্য রানে অপরাজিত থেকে তৃতীয় দিন শেষ করেছেন।
ইনিংস হার এড়াতে বাংলাদেশকে আরও ৪৩ রান করতে হবে, হাতে আছে ৪ উইকেট। এই ৪ উইকেটের মধ্যে কেবল ব্যাট চালাতে জানেন সোহান ও মিরাজ। সব মিলিয়ে হারের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ, সেটা বলাই যায়। অবশ্য তৃতীয় দিনেই ম্যাচের ফল এসে যেতে পারতো। কিন্তু দিনের ১০ ওভার বাকি থাকতে বৃষ্টি শুরু হয়, পরে আর খেলা মাঠে গড়ায়নি।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের করা ২৩৪ রানের জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪০০ পেরনো স্কোর গড়ে। কয়েকটি মাঝারি ইনিংস ও কাইল মেয়ার্সের অসাধারণ ১৪৬ রানে ৪০৮ রান তোলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম ইনিংসেই ১৭৪ রানের লিড পায় তারা। এই ইনিংসে বাংলাদেশের প্রাপ্তি কেবল খালেদ আহমেদের সাফল্য। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট নেন তিনি।
দ্বিতীয় ইনিংসেও ভালো শুরু করতে পারেনি বাংলাদেশ। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই তামিমকে ফিরিয়ে দেন কেমার রোচ। ক্যারিবীয় পেসারের বেশ বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন তামিম। টেস্ট ক্রিকেটে এতো বাইরের বল ছেড়ে দেওয়াই যে সমীচীন, সেটা যেন অজানা অভিজ্ঞ তামিমের! বাংলাদেশ ওপেনারকে ফেরানোর মধ্য দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ষষ্ঠ বোলার হিসেবে টেস্টে ২৫০ উইকেট পূর্ণ হয় রোচের, ছাড়িয়ে যান কিংবদন্তি মাইকেল হোল্ডিংকে।
প্রথম ইনিংসে ১০ রান করা মাহমুদুল হাসান জয়কে তুলনামূলক সাবলীল মনে হচ্ছিল এই ইনিংসে। কিন্তু তার পথচলাও দীর্ঘ হতে দেননি রোচ। ১৩ রান করা তরুণ ওপেনারকে ফিরিয়ে দেন তিনি। কিছুক্ষণ পর এনামুল হক বিজয়কেও পথ ভুলিয়ে দেন রোচ। দারুণ এক ডেলিভারিতে তাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি। ৮ বছর পর টেস্ট খেলতে নামা বিজয় আগের ইনিংসে ২৩ রান করেন, এই ইনিংসে করেন ৪ রান।
শুরুর তিন উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস এলোমেলো করে দেন রোচ, পরে তোপ দাগেন আলজারি জোসেফ ও জেডেন সিলস। ৩ উইকেট যাওয়ার পর নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে যোগ দিয়ে লড়াই শুরু করেন লিটন কুমার দাস। কিন্তু তাদের জুটি দীর্ঘ হতে দেননি সিলস। লিটনকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে বিদায় করেন তিনি। ১৯ রান করে সাজঘরে ফেরেন লিটন।
এরপর ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটিটি গড়েন শান্ত ও সাকিব। শান্তর বিদায়ে ভাঙে ৪৭ রানের জুটি। জায়গায় দাঁড়িয়ে আলজারি জোসেফের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেটক্ষক জশুয়া ডা সিলভার হাতে ধরা পড়েন ৪২ রান করা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। জোসেফের করা বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে আত্মাহুতি দিয়ে আসেন ১৬ রান করা সাকিবও।