ওয়েস্ট ইন্ডিজকে গুঁড়িয়ে এক যুগ পর হোয়াইটওয়াশের আনন্দে বাংলাদেশ
প্রথম দুই টি-টোয়েন্টি জিতলেও ব্যাটিং নিয়ে আফসোস ছিল। প্রথমবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে এই ফরম্যাটে সিরিজ জয়ের পরও ছিল কিছুটা অস্বস্তি। তৃতীয় ম্যাচে এসে সেই আফসোস উবে গেল জাকের আলী অনিকের ব্যাটিং ঝড়ে। সঙ্গে অবদান রাখলেন পারভেজ হোসেন ইমন, মেহেদী হাসান মিরাজ; তাতে সংগ্রহটা হলো বেশ বড়। পরে বল হাতে একই দাপট দেখিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে রীতিমতো উড়িয়ে দিলেন শেখ মেহেদি, তাসকিন, হাসান, রিশাদরা। যে ফরম্যাটে বাংলাদেশ সবচেয়ে নাজুক, সেই টি-টোয়েন্টিতেই এলো দারুণ এক সাফল্য।
শুক্রবার সেন্ট ভিনসেন্টের আর্নেস ভেলে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৮০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম দুই ম্যাচ দিয়েই সিরিজ জিতে নেওয়া দল সফর শেষ করলো ৩-০ ব্যবধানে জেতার আনন্দে। প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ, ফুরালো দীর্ঘদিনের অপেক্ষাও। বিদেশের মাটিতে ১২ বছর পর প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার স্বাদ পেল তারা। সর্বশেষ ২০১২ সালে বেলফাস্টে আয়ারলান্ডকে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। শুরুটা বরাবরের মতো ভালো না হলেও পারভেজের ব্যাটে সেই হতাশাটা কেটে যায়। পরে রান আউটের নাটকীয়তা শেষে জীবন পেয়ে দুর্বার ইনিংস খেলেন ক্যারিবীয় সফরে ব্যাট হাতে দারুণ সফল জাকের আলী। সঙ্গে মিরাজ-তানজিম সাকিবদের লড়াই, এই কজনের ব্যাটে ৭ উইকেটে ১৮৯ রান তোলে বাংলাদেশ। যা বিদেশে মাটিতে তাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস। জবাবে বাংলাদেশের দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে ১০৯ রানের বেশি করতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ১৬.৪ ওভারে অলআউট হয় তারা। স্বাগতিকদের চারজন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রান করতে পেরেছেন।
লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম ওভারে রানের খাতা খোলার আগেই ব্র্যান্ডন কিংকে ফিরিয়ে দেন তাসকিন আহমেদ। দ্বিতীয় উইকেট আসে পরের ওভারে, জাস্টিন গ্রিভসকে সাজঘর দেখিয়ে দেন শেখ মেহেদি। ৭ রানেই ২ উইকেট হারানো ক্যারিবীয়রা এই চাপ আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি, ৪৬ রানের মধ্যেই হারায় ৬ উইকেট। এরপরও চলতে থাকে শেখ মেহেদি-রিশাদদের দাপট, তাতে বেশ কিছু বল বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস।
বিপর্যয়ের মাঝে কেবল ব্যতিক্রম ছিলেন রোমারিও শেফার্ড। ২৭ বলে একটি চার ও ৩টি ছক্কায় ৩৩ রান করেন তিনি, যা ক্যারিবীয়দের ইনিংসের সর্বোচ্চ। ১৮ বলে ৪টি চারে ২৩ রান করেন জনসন চার্লস। সিরিজে নিজের ছায়া হয়ে থাকা নিকোলাস পুরান ১০ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় করেন ১৫ রান। ১২ রান আসে গুডাকেশ মোটির ব্যাট থেকে। এ কজনের বাইরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাকি ব্যাটসম্যানরা সাজঘরে ফিরেছেন দুই অঙ্কে পৌঁছানোর আগেই।
আজ বল হাতে বেশি দাপট দেখানো রিশাদ ৪ ওভারে ২১ রানে সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন। বাংলাদেশ দারুণ শুরু এনে দেওয়া তাসকিন ও শেখ মেহেদি নেন ২টি করে উইকেট। ৩.৪ ওভারে ৩০ রান খরচা করেন তাসকিন। তবে শেখ মেহেদি প্রথম দুই ম্যাচের মতো কৃপণ বোলিং করেন, ৩ ওভারে ১৩ রান দেন ডানহাতি এই অফ স্পিনার। দুর্দান্ত বোলিং করা হাসান মাহমুদ ৩ ওভারে মাত্র ৯ রান খরচায় একটি উইকেট নেন। এক উইকেট পাওয়া তানজিম সাকিব তুলনামূলক খরুচে ছিলেন, ৩ ওভারে ৩১ রান দেন তিনি।
এর আগে সৌম্য সরকারের জায়গায় দলে জায়গা পাওয়া পারভেজ ইমন শুরুটা করেন দারুণ। দুর্দান্ত এক কভার ড্রাইভ, ব্যাকফুট পাঞ্চ, আর শর্ট লেংথের বলে পুল শটে মুগ্ধ করেন তিনি। তার সঙ্গী লিটন দাসও খেলছিলেন স্বাচ্ছন্দ্যে। দুই ওপেনারের দুর্দান্ত শুরুর জুটিতে ওঠে ৪৪ রান। তবে লিটন ফেরেন সেই পুরনো সমস্যায়। দুই বল আগে স্ট্রেইট ড্রাইভে চার মারার পর বড় শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন তিনি। ১৪ রানেই থামে অধিনায়কের ইনিংস।
লিটনের বিদায়ের পরও ইমনের ব্যাট চলতে থাকে। তবে আলজারি জোসেফের গতিময় ডেলিভারিতে ফ্লিক করতে গিয়ে জাস্টিন গ্রিভসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ২১ বলে চারটি চার ও দুটি ছক্কায় ৩৯ রান করেন তিনি। তানজিদ তামিম সুবিধা করতে পারেননি, ৯ রান করেন তিনি। চারে নেমে মিরাজ ২৩ বরে ৩টি চারে গুরুত্বপূর্ণ ২৯ রানের ইনিংস খেলেন। এ ছাড়া জাকের আলীর সঙ্গে উইকেটে থেকে গড়েন ৩৭ রানের জুটি, যা বাংলাদেশকে শুরুর ধাক্কা সামলে ওঠার সুযোগ দেয়।
ইনিংসের ১৫তম ওভারটি বদলে দেয় ম্যাচের চেহারা। রোস্টন চেজের করা ওভারের তৃতীয় বলে স্কয়ার লেগে ঠেলে দুই রানের জন্য দৌড়ান জাকের। কিন্তু শামীম পাটোয়ারির সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে দুজনই দৌড়ান ব্যাটিং প্রান্তে। নিকোলাস পুরানের থ্রো থেকে নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তের স্টাম্প ভাঙেন চেজ। প্রথমে মনে হয়েছিল জাকেরই আউট। এমনকি জাকের মাঠ ছেড়ে ড্রেসিংরুমেও ফিরে যান।
তবে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, পপিং ক্রিজে জাকেরের ব্যাট তখন গ্রাউন্ডে ছিল, আর শামীমের ব্যাট বাতাসে, তিনি আউট হন। নতুন জীবন পেয়ে জাকের যেন হয়ে ওঠেন অন্য একজন। ইনিংসের বাকি অংশে ৩টি চার ও ছয়টি ছক্কায় ৪১ বলে ঝলমলে ৭২ রানের ইনিংস খেলেন তিনি, যা তার ক্যারিয়ার সেরা। শেষদিকে তানজিম সাকিবের সঙ্গে ২৭ বলে ৫০ রানের ঝড়ো জুটিও গড়েন জাকের। শেষ ওভারে আলজারি জোসেফকে তিনটি ছক্কা আর একটি চারে ২৫ রান তোলেন তিনি। তানজিম সাকিব ১২ বলে ১৭ রান করেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেফার্ড ২টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট নেন আলজারি, চেস ও মোটি।