আমাদের গ্যালাক্সির বাইরে প্রথম কোনো গ্রহের লক্ষণ পাওয়া গেছে
আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির বাইরে প্রথমবারের মতো কোন গ্রহের অস্তিত্ব থাকার লক্ষণ দেখতে পেয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।
সূর্যের চারদিকে যেমন গ্রহগুলো ঘোরে, সেরকম বিভিন্ন নক্ষত্র ঘিরে ঘুরতে থাকা প্রায় পাঁচ হাজার গ্রহ এর আগে শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু ওই গ্রহগুলোর সবই পাওয়া গেছে মিল্কিওয়ে ছায়াপথে। এই প্রথমবারের মতো ছায়াপথের বাইরে কোনো গ্রহের লক্ষণ শনাক্ত করা হলো।
মেসিয়ার ৫১ গ্যালাক্সিতে থাকা এই সম্ভাব্য গ্রহটি আবিষ্কার করেছে নাসার চন্দ্র এক্স-রে টেলিস্কোপ। প্যাঁচানো আকৃতির জন্য মেসিয়ার ৫১ গ্যালাক্সিকে ওয়ার্লপুল বা ঘূর্ণি ছায়াপথ নামেও ডাকা হয়।
মিল্কিওয়ে থেকে এই গ্রহের দূরত্ব ২ কোটি ৮০ লাখ আলোকবর্ষ। অর্থাৎ আলো যে গতিতে ভ্রমণ করে, সেই ভ্রমণ করলে এ গ্রহে পৌঁছতে দুই কোটি আশি লাখ বছর সময় লাগবে।
নক্ষত্র থেকে আলো বিকিরিত হতে থাকে। কিন্তু কোনো নক্ষত্রের সামনে দিয়ে যখন গ্রহ প্রদক্ষিণ করে, তখন নক্ষত্রটির সেই আলোর কিছু অংশ ঢাকা পড়ে। এর ফলে নক্ষত্রটির উজ্জ্বলতা বাধাগ্রস্ত হয়। বৈশিষ্ট্যমূলক সেই পার্থক্য ধরা পড়ে টেলিস্কোপে।
এই পদ্ধতি ব্যবহার করে এর আগে কয়েক হাজার গ্রহ শনাক্ত করা হয়েছে।
হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিকস ইন কেমব্রিজের ড. ডি স্টেফানো বিবিসিকে বলেছেন, ''আমরা যে পদ্ধতিতে কাজ করছি, এটাই এখন পর্যন্ত অন্য কোনো ছায়াপথে থাকা গ্রহ-নক্ষত্র খুঁজে বের করার কার্যকর উপায়।''
যেসব তথ্য-উপাত্ত পেয়েছেন, তা থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, সম্ভাব্য এই গ্রহটি আকারে শনির সমান হবে। গ্রহের মতো। যে নিউট্রন স্টার বা ব্ল্যাক হোল ঘিরে এটি ঘুরছে, সেটির সঙ্গে দূরত্ব সূর্য থেকে শনির দূরত্বের প্রায় দ্বিগুণ।
তবে গবেষকরা জানিয়েছেন, এ বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে তাদের আরও তথ্য-উপাত্ত দরকার।
এক্ষেত্রে একটা বড় সমস্যা হলো, বিশাল কক্ষপথের কারণে যে নক্ষত্র বা ব্ল্যাকহোল ঘিরে গ্রহটি ঘুরছে, আবার সেটির সামনে আসতে প্রায় ৭০ বছর সময় লাগে যাবে। ফলে অদূর ভবিষ্যতে এই আবিষ্কারের ফলাফল যাচাই করার উপায় আপাতত নেই।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এমনটাও হওয়া সম্ভব যে, নক্ষত্রটির সামনে কোনো গ্যাস ও ধুলোর মেঘ পড়লেও আলোর বিকরণ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এর ফলে হয়তো বাধাগ্রস্ত হয়েছে এক্স-রে বিকিরণ।
যদিও সেই সম্ভাবনা একেবারেই কম বলে তারা মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। কারণ আলোর বিকিরণ যেভাবে কমে গেছে, সেটি কোনো গ্যাসের আস্তরণের কারণে হয়েছে বলে তারা মনে করেন না।
গবেষকদের একজন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলিয়া বার্নটসন বলেন, ''আমরা জানি যে আমরা একটি উত্তেজনাপূর্ণ ও অত্যন্ত সাহসী দাবি করেছি। আমরা আশা করব, অন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এটা সতর্কতার সঙ্গে দেখবেন।'
তিনি আরও বলেন, ''আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের পক্ষে শক্ত যুক্তি আছে। বিজ্ঞান যেভাবে কাজ করে, আমরা সেভাবেই কাজ করেছি।'