এবার সৌরজগতের বাইরের গ্রহ ধরা পড়লো জেমস ওয়েব টেলিস্কোপে!
নিজের মহাজাগতিক কৃতিত্বের তালিকায় আরেকটি অর্জন যুক্ত করলো জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। প্রথমবারের মতো এক্সোপ্ল্যানেট (সৌরজগতের বাইরের গ্রহ) ধরা পড়লো এ টেলিস্কোপে। খবর সিএনএন এর।
'এলএইচএস ৪৭৫ বি' নামের এ মহাজাগতিক বস্তুটি প্রায় পৃথিবীর সমান আকারের। অক্টান নক্ষত্রমণ্ডলে অবস্থিত পাথুরে এ গ্রহ আমাদের থেকে ৪১ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।
নাসার ট্রানজিটিং এক্সোপ্ল্যানেট সার্ভে স্যাটেলাইট বা টেস এর সংগৃহীত পূর্ববর্তী ডেটা থেকে গ্রহটির অস্তিত্ব সম্বন্ধে ধারণা করা হয়েছিল।
জ্যোতির্বিজ্ঞানী কেভিন স্টিভেনসন এবং মেরিল্যান্ডের জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি অ্যাপ্লাইড ফিজিক্স ল্যাবরেটরিতে পোস্টডক্টরাল ফেলো জ্যাকব লুস্টিগ-ইয়েগারের নেতৃত্বে গবেষকদের একটি দল ওয়েব টেলিস্কোপ ব্যবহার করে এ গ্রহটি পর্যবেক্ষণ করে।
হোস্ট নক্ষত্রের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় গ্রহটিকে দেখতে পান তারা। একটি মহাজাগতিক বস্তুর সামনে দিয়ে আরেকটি মহাজাগতিক বস্তু প্রদক্ষিণ করাকে ট্রানজিট বলা হয়। গবেষকরা নতুন এ গ্রহের দুটি ট্রানজিট দেখতে পান।
সিয়াটলে আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির ২৪১তম সভায় বুধবার গ্রহ আবিষ্কারের ঘোষণাটি দেওয়া হয়।
জেমস ওয়েবই একমাত্র টেলিস্কোপ যা পৃথিবীর আকারের যেসব এক্সোপ্ল্যানেট রয়েছে, সেগুলোর বায়ুমণ্ডল অনুসন্ধানের ক্ষমতা রাখে। নতুন আবিষ্কৃত গ্রহটিতে বায়ুমণ্ডল রয়েছে কিনা তা জানতে গবেষকরা একাধিক আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য দিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালান। তবে গ্রহটিতে আদৌ বায়ুমণ্ডল আছে কিনা তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাননি তারা।
তবে, লুস্টিগ-ইয়েগার বলেন, "গ্রহটিতে শনির চাঁদ টাইটানের মতো ঘন মিথেন-যুক্ত বায়ুমণ্ডল থাকার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।"
এ পর্যন্ত জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ যেসব তথ্য সনাক্ত করতে পেরেছে তা থেকে জানা গেছে, এ গ্রহটি পৃথিবীর চেয়ে কয়েকশ ডিগ্রি উষ্ণ। যদি গবেষকরা এলএইচএস ৪৭৫ বি-তে মেঘ শনাক্ত করতে পারেন, তাহলে একে শুক্রের যমজ গ্রহ বললেও ভুল হবেনা।
গ্রহটি প্রতি ২ দিনে (পৃথিবীর হিসাব অনুযায়ী) তার লাল বামন নক্ষত্রটিকে সম্পূর্ণভাবে প্রদক্ষিণ করে। তবে, নক্ষত্রটির তাপমাত্রা সূর্যের তাপমাত্রার অর্ধেকেরও কম হওয়ায়, গ্রহটিতে বায়ুমণ্ডল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
গবেষকরা বিশ্বাস করেন, জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের আবিষ্কারগুলোর মধ্যে প্রথম আবিষ্কার হিসেবে বিবেচিত হবে এটি।
নাসা সদর দপ্তরের অ্যাস্ট্রোফিজিক্স বিভাগের পরিচালক মার্ক ক্ল্যাম্পিন এক বিবৃতিতে বলেন, "পৃথিবী আকারের পাথুরে গ্রহ নিয়ে জেমস ওয়েবের পর্যবেক্ষণের ফলাফলগুলোর মাধ্যমে ভবিষ্যতের অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হলো।"