ডেঙ্গু মোকাবিলায় ‘ভালো’ মশার বংশ বৃদ্ধির উদ্যোগ ইন্দোনেশিয়ায়
ইন্দোনেশিয়ার গবেষকরা ভাইরাসঘটিত রোগ প্রতিরোধে খুঁজে পেয়েছেন এক অভিনব পদ্ধতি। এমন এক প্রজাতির পতঙ্গের বংশবৃদ্ধির কথা ভাবছেন তারা যে পতঙ্গ রোগ বহনকারী মশার বিরুদ্ধে লড়াই করবে। এর মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে ডেঙ্গুর মতো ভাইরাসঘটিত রোগবালাই।
গবেষকরা এই পতঙ্গকে নাম দিয়েছেন 'ভালো' মশা। পুরুষ এডিস মশায় 'ওলবাচিয়া' নামক ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি হবে 'ভালো' মশার।
গবেষণায় দেখা গেছে, ওলবাচিয়া ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগকৃত পুরুষ মশার সঙ্গে স্ত্রী এডিস মশকীর প্রজননের মাধ্যমে যে মশার জন্ম হয়, তা ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাস বহন করে না। অর্থাৎ সেই মশা কামড় দিলেও মানবদেহ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হবে না। শুধু ডেঙ্গুই নয়, এ ধরনের মশার কামড়ে কোনো ধরণের রোগবালাই ছড়ায় না বলে দাবি করেছেন গবেষকরা।
প্রকৃতিতে কীটপতঙ্গের প্রায় ৬০ শতাংশ প্রজাতির মাঝেই ওলবাচিয়া নামের এই সাধারণ ব্যাকটেরিয়াটি পাওয়া গেছে। কয়েক প্রজাতির মশা, ফলের মাছি, মথ, ড্রাগনফ্লাই সহ আরও অনেক প্রজাতিতেই মিলেছে ওলবাচিয়া।
অলাভজনক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড মস্কিউটো প্রোগ্রাম (ডব্লিউএমপি)-এর তথ্য অনুসারে, অবশ্য এই ব্যাকটেরিয়া ডেঙ্গু বহনকারী এডিস ইজিপ্টাই মশার মধ্যে পাওয়া যায় না।
ডব্লিউএমপি কমিউনিটির একজন কর্মী পূর্বন্তী বলেন, "নীতিগতভাবে আমরা 'ভাল' মশার বংশবৃদ্ধি করছি। ডেঙ্গু বহনকারী মশারা ওলবাচিয়া বহনকারী মশার সঙ্গে মিলিত হবে; এর মাধ্যমে জন্ম নেবে ওলবাচিয়া মশা বা 'ভাল' মশা। এই মশা মানুষকে কামড়ালেও তারা প্রভাবিত হবেন না।"
২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইন্দোনেশিয়ার গাদজাহ মদা বিশ্ববিদ্যালয় এ বিষয়ে একটি যৌথ গবেষণাপত্র প্রকাশ করে। সেই যৌথ গবেষণার ভিত্তিতে ২০১৭ সাল থেকেই ইন্দোনেশিয়ার যোগাকার্তা শহরের ডেঙ্গুর 'রেড জোন' অঞ্চলে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে ল্যাব-প্রজনিত ওলবাচিয়া মশা।
চলতি বছরের জুনে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন প্রকাশিত এক সমীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, ওলবাচিয়া মশার বংশবিস্তারের ফলে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে ৭৭ শতাংশ এবং আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সংখ্যা কমেছে প্রায় ৮৬ শতাংশ।
ডব্লিউএমপি প্রধান গবেষক আদি উতারিনি বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, "আমরা এই প্রযুক্তিতে আত্মবিশ্বাসী, বিশেষ করে যেসব এলাকায় এডিস ইজিপ্টাই মশা সবচেয়ে বেশি সেসব এলাকায় এই পদ্ধতি কার্যকর ভূমিকা রাখবে।"
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গু সংক্রমণ দ্রুত বেড়েছে। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী বর্তমানে ডেঙ্গু ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রতি বছর আনুমানিক ১০০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডেঙ্গু সংক্রমণের ঘটনা ঘটছে।
সূত্র: দ্য হিন্দুস্তান টাইমস