আইসিডি নয়, বন্দর থেকেই আমদানি পণ্য খালাস নিতে চায় বিজিএমইএ
বেসরকারি আইসিডি (ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো) থেকে নয়, চট্টগ্রাম বন্দর থেকেই আমদানি পণ্যের কন্টেইনার খালাস নিতে চায় তৈরী পোষাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।
চট্টগ্রাম বন্দরের তুলনায় আইসিডি থেকে পণ্য খালাসে কন্টেইনার প্রতি প্রায় ৬৫ ভাগ খরচ বেশি এবং দ্বিগুণ সময় লাগে উল্লেখ করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার বরাবর গত ১২ আগস্ট একটি চিঠি দেয় বিজিএমইএ।
এতে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ২০ ফুট সাইজের কন্টেইনার খালাসে সর্বমোট খরচ হয় ৪ হাজার ২৭৭ টাকা। একই সাইজের কন্টেইনার আইসিডি থেকে খালাসে খরচ হয় ১৩ হাজার ৭৫৫ টাকা। এতে বন্দরের চেয়ে আইসিডিতে খরচ বেশি পড়ে ৯ হাজার ৪৭৮ টাকা।
একই সাথে ৪০ ফুট সাইজের কন্টেইনার বন্দর থেকে খালাস নিতে খরচ হয় ৫ হাজার ৯৮৮ টাকা। আইসিডি থেকে এই সাইজের কন্টেইনার খালাসে খরচ পড়ে ১৮ হাজার ৯২ টাকা। আইসিডি থেকে ৪০ ফুট সাইজের কন্টেইনার খালাস নিতে বন্দরের চেয়ে ১২ হাজার ১০৪ টাকা বেশি খরচ হয়।
তবে বিজিএমইএ'র এই দাবিকে অযৌক্তিক এবং অজ্ঞতাপ্রসূত বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো এসোসিয়েশনের (বিকডা) মহাসচিব রুহুল আমিন শিকদার।
বেসরকারি আইসিডিতে শতভাগ রপ্তানিপণ্য কন্টেইনারভর্তি করে জাহাজীকরণের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পাশাপাশি খাদ্যপণ্য সহ ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হয় আইসিডি থেকে।
করোনা ভাইরাসের প্রভাবে লকডাউনের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার জট সৃষ্টি হলে গত ২৫ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সব ধরনের আমদানি পণ্যের কন্টেইনার বন্দরের পাশাপাশি আইসিডি থেকে খালাসের অনুমতি দেয় এনবিআর।
বিজিএমইএ'র ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, "আগামী ৩১ আগস্ট থেকে আইসিডিতে সকল আমদানি পণ্যের কন্টেইনার পাঠানোর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এই নির্দেশনা স্থায়ী হচ্ছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। এটি স্থায়ী হলে পোষাক শিল্প খাত চরম সংকটে পড়বে। তাই আমরা বিষয়টি কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি"।
তিনি বলেন, "চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে কন্টেইনার জট নেই। তবুও গার্মেন্টস মালিকদের আমদানিকৃত কাঁচামাল খালাসের জন্য বেসরকারি আইসিডিতে পাঠানোর কোন যৌক্তিকতা নেই"।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনারকে দেওয়া বিজিএমইএ'র চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, প্রাইভেট আইসিডি সমূহে পর্যাপ্ত স্থান, ইক্যুইপমেন্ট ও শ্রমিক স্বল্পতায় মালামাল খালাসে দীর্ঘসূত্রতা হয়। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে যেখানে ২ দিনে মালামাল খালাস করা হয় সেখানে প্রাইভেট আইসিডি থেকে ৬ থেকে ৭ দিন সময় প্রয়োজন হচ্ছে। এতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সমূহ বাড়তি ব্যয় ও পণ্য খালাসে বিলম্বে প্রচুর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে যা পোষাক শিল্পের বর্তমান সংকটময় মুহূর্তে কাম্য নয়।
চিঠিতে পোষাক শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষার্থে সময়ক্ষেপণ রোধ ও অতিরিক্তি সময়ক্ষেপণ ব্যতীত আমদানিকৃত পণ্য চালান দ্রুত খালাসে প্রাইভেট আইসিডির পরিবর্তে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরাসরি খালাসের লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বরাবরে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদানের জন্য চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনারকে অনুরোধ করা হয়।
বিজিএমইএ'র চিঠির জবাবে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার বরাবরে ১৬ আগস্ট (আজ) একটি চিঠি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আইসিডি মালিকদের সংগঠন বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন শিকদার।
তিনি টিবিএসকে বলেন, "বিজিএমইএ কাস্টমস কর্তপক্ষের কাছে আইসিডি সম্পর্কে ভুল তথ্য উপস্থাপন করেছে। প্রকৃতপক্ষে আইসিডি থেকে কন্টেইনার খালাসে বিভিন্ন চার্জ বাবদ ২০ ফুট সাইজের কন্টেইনারে ব্যয় হয় ৭ হাজার ৯৩০ টাকা। আর ৪০ ফুট সাইজের কন্টেইনারে ব্যয় হয় ৯ হাজার ১৫০ টাকা। দুই সাইজের কন্টেইনার খালাসে বন্দর থেকে আইসিডির পার্থক্য তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। বন্দরের তুলনায় আইসিডি থেকে কন্টেইনার খালাসে অতিরিক্ত সময় লাগে মাত্র ১ দিন"।
তিনি আরো বলেন, বিগত দুই বছর যাবৎ চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অনুমোদনক্রমে আইসিডিগামী ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্যের উপর দ্বৈত ডেলিভারি প্রথা চালু আছে।
আমদানিকারক চাইলে তাদের আমদানি পণ্য নির্দিষ্ট আইসিডির পরিবর্তে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ডেলিভারি নিতে পারে। এই দ্বৈত ডেলিভারি প্রথার কারণে ডিপোগামী আমদানি পণ্যের প্রায় ২৫ ভাগ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ডেলিভারি হচ্ছে। সুতরাং কোন আমদানিকারকই তার আমদানি পণ্য বেসরকারি আইসিডি থেকে ডেলিভারি নিতে বাধ্য নয়।
বিকডা সূত্র জানায়, গত ২৫ জুলাই এনবিআরের নির্দেশনার পর বন্দর থেকে ১৯টি আইসিডিতে প্রায় ২০ হাজার আমদানি কন্টেইনার এসেছে। এর মধ্যে আগের নির্দেশনা অনুযায়ী ৩৮ ধরনের আমদানি রয়েছে ১৩ হাজার কন্টেইনার। নতুন করে মাত্র ৭ হাজার কন্টেইনার নিয়ে আসা হয় আইসিডিতে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম বলেন, "এনবিআরের নির্দেশনায় সকল ধরনের আমদানি পণ্য বন্দরের পরিবর্তে আইসিডি থেকে খালাসের বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়নি। বন্দরে কন্টেইনার জট সৃষ্টি হলে প্রয়োজনে আইসিডি থেকেও খালাসের অনুমোদন দেওয়া হয়। বিজিএমইএ চাইলে আইসিডির পরিবর্তে তাদের পণ্য বন্দর থেকে খালাস নিতে পারে। তাছাড়া আগামী ৩১ আগস্ট থেকে এই নির্দেশনার সময়সীমা শেষ হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং বিষয়টি এনবিআরের নজরে আনার প্রয়োজন দেখছিনা"।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনার ধারণ ক্ষমতা ৪৯ হাজার ১৮ টিইইউস (টুয়েন্টি ফুট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিট)। গত ১২ আগস্ট পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে ছিলো ৩৫ হাজার ৪১৯ টিইইউস।
১৯টি বেসরকারি আইসিডিতে কন্টেইনার ধারণক্ষমতা ৭৮ হাজার ৭০০ টিইইউস। ১৪ আগস্ট পর্যন্ত আইসিডিগুলোতে কন্টেইনার ছিলো ৫৬ হাজার ৫৯৭ টিইইউস। এর মধ্যে আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার ১৪ হাজার ৪৪১ টিইইউস, রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার ৭ হাজার ৬১৩ টিইইউস এবং খালি কন্টেইনার ৩৪ হাজার ৫৭৩ টিইইউস।