ইউজার আইডি পাসওয়ার্ড জটিলতা: ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করতে না পেরে জরিমানার কবলে ব্যবসায়ীরা
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাঈম ট্রেডার্সের মালিক আফতাব উদ্দিন হেলাল। ভ্যাট আইন অনুযায়ী প্রতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে তার প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে আগের মাসের ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
পাসওয়ার্ড পরিবতর্ন হয়ে যাওয়ায় এই ঠিকাদার চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসের ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করতে পারেননি। ইতোমধ্যে ভ্যাট বিভাগ থেকে তার ইমেইলে এ সংক্রান্ত একটি চিঠিও দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে ভ্যাট বিভাগের কন্ট্রাক্ট সেন্টারের ১৬৫৫৫ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয় ওই চিঠিতে।
হেলাল ওই নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করে দেখেন নম্বরটি আর ব্যবহৃত হচ্ছে না। সঠিক সময়ে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল না করায় এই ব্যবসায়ীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হয়েছে। একইসাথে সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে আগষ্ট মাসের রিটার্ন দাখিল করতে না পারলে নতুন করে আরো ১০ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হবে এই ব্যবসায়ীকে।
আফতাব উদ্দিনের মতো আরো অনেক ব্যবসায়ী পাসওয়ার্ড সংক্রান্ত জটিলতায় অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন না। কল সেন্টারে যোগাযোগ করেও কোনো ধরনের সেবা পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। এর ফলে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করতে না পারা ব্যবসায়ীদের প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হচ্ছে।
ভ্যাট বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরু থেকে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের আওতায় ১৬৫৫৫-এর সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আগে এই নম্বরে কথা বলে ইউজার পাসওয়ার্ড সংক্রান্ত জটিলতার সমাধান পেতেন ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে সংশ্লিষ্ট ভ্যাট সার্কেল এবং বিভাগীয় অফিসে যোগাযোগ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আইটি শাখার সহযোগিতায় এই সমস্যার সমাধান করছে ভ্যাট বিভাগ।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন হেলাল বলেন, কিভাবে আমার প্রতিষ্ঠানের ইউজার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন হয়েছে, তা আমার বোধগম্য নয়। করোনা পরিস্থিতিতে এমনিতেই ব্যবসার অবস্থা ভালো না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উচিত ভ্যাট অনলাইনে কল সেন্টার সেবাটি আবার চালু করে ব্যবসায়ীদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা।
চট্টগ্রাম কাস্টম এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেট চট্টগ্রামের আওতায় ৮টি বিভাগ রয়েছে। চট্টগ্রাম, তিন পার্বত্য জেলা, কক্সবাজার জেলায় এই ভ্যাট কমিশনারেটের আওতায় চলতি অর্থবছরের আগস্ট পর্যন্ত ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩১ হাজার ৬৪৯টি। এর মধ্যে প্রতি মাসে অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের পরিমাণ প্রায় ৭১ শতাংশ। এছাড়া অফলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের পরিমান ৪ ভাগ। সবমিলিয়ে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের ৭৫ ভাগ ব্যবসায়ী ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করছেন।
ভ্যাট বিভাগ সূত্র জানায়, 'মূল্য সংযোজন কর ও সম্পুরক শুল্ক বিধিমালা ২০১৬' জুলাই ২০১৯ সাল থেকে কার্যকর রয়েছে। এর ফলে সকল নিবন্ধিত ও করদাতা প্রতিষ্ঠানের পূর্বের ১১ ডিজিটের নিবন্ধন সংখ্যার পরিবর্তে ১৩ ডিজিটের নিবন্ধন সংখ্যা প্রবর্তন করা হয়েছে। নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানকে প্রতিটি কর মেয়াদের আয়-ব্যয় সংক্রান্ত তথ্য বা রিটার্ন পরবর্তী ইংরেজি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সার্কেল কার্যালয়ে দাখিল করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, অনেকেই শত্রুতার কারণে ভুল পাসওয়ার্ড দিয়ে ইউজার আইডি ব্লক করে দিচ্ছেন। এ কাজে ভ্যাট বিভাগের সঙ্গে চক্রটির যোগসাজশ রয়েছে বলে দাবি তাদের। কল সেন্টারে সেবা না পেয়ে নতুন পাসওয়ার্ড নিতে সংশ্লিষ্ট সার্কেল অফিসে গিয়েও হয়রানির শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। নতুন পাসওয়ার্ড তৈরির জন্য ভ্যাট অফিসের কর্মীদের ১ থেকে ৫ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর মোবাইল নম্বর ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের ইউজার আইডি হিসেবে বিবেচিত হয়। ইউজার আইডিতে যদি পরপর তিনবার ভুল পাসওয়ার্ড দেওয়া হয় তাৎক্ষনিকভাবে সেটি ব্লক হয়ে যায়।
বিভিন্ন ভ্যাট বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, ইউজার পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের জন্য ব্যবসায়ীরা ভ্যাট কার্যালয়ে আসছেন। গত দুই মাসে প্রতিটি ভ্যাট বিভাগের অধীনে ৫০ থেকে শতাধিক ব্যবসায়ী ইউজার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়ে যোগাযোগ করেছেন।
চট্টগ্রাম কাস্টম এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের উপ কমিশনার আহসান উল্লাহ টিবিএসকে বলেন, চলতি অর্থবছর থেকে ভ্যাট কন্ট্রাক্ট সেন্টার কার্যক্রম বন্ধ। ব্যবসায়ীরা ভুল পাওসয়ার্ড দিলে ইউজার ব্লক হয়ে যায়। অর্থ আদায়ের জন্য কোনো চক্র পাসওয়ার্ড জালিয়াতির সাথে জড়িত, এমন অভিযোগ সত্য নয়। এতে কোনো সিন্ডিকেট কাজ করবে কেন?
চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটের চাঁন্দগাও বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার অনুরুপা দেব বলেন, গত দুই মাসে এই বিভাগের আওতাধীন সার্কেলগুলোতে প্রায় ১০০ ব্যবসায়ী ইউজার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে এসেছেন। এনবিআরের আইটি সেকশনের মাধ্যমে অতি দ্রুত তাদের নতুন পাসওয়ার্ড দেওয়া হচ্ছে। এই কাজে কোনো আর্থিক লেনদেনের সুযোগ নেই। কোনো ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী এ বিষয়ে অভিযোগ জানালে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।