করোনাকালে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বাড়ছে পণ্য আমদানি, কমছে রপ্তানি
করোনার দ্বিতীয় ধাপেও দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বাড়ছে পণ্য আমদানির পরিমাণ। চলতি অর্থবছরের ১০ মাসেই গত বছরের তুলনায় আমদানির পরিমাণ ছাড়িয়ে গেছে। চলতি অর্থবছরের দুই মাস বাকি থাকতেই গত অর্থবছরের তুলনায় ৯৪ লাখ ২৪ হাজার ৭৪২ মেট্রিক টন পণ্য বেশি আমদানি হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের শেষ দিকে চীনে প্রথম করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে সাপ্লাই চেইন ব্যাহত হয়। বাংলাদেশেও এর কিছুটা প্রভাব পড়ে। এরপরও দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর শতভাগ চালু ছিল। এ কারণে আন্তর্জাতিক সমুদ্র পথে পণ্য পরিবহনে খুব বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। করোনাকালীন সময়েও আমদানি পণ্য হ্যান্ডেলিংয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি বজায় থেকেছে।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, 'করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য নির্বিঘ্ন রাখতে বন্দর শতভাগ চালু আছে এটি ইতিবাচক। আমদানি বাড়লেও রপ্তানির পরিমাণ কমে গেছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে রপ্তানির পরিমাণ বাড়বে বলে প্রত্যাশা করি'।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ৯ কোটি ৬৭ লাখ টন আমদানি কার্গো হ্যান্ডেলিং করে চট্টগ্রাম বন্দর। ২০১৯ -২০ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর আমদানি কার্গো হ্যান্ডেল করে ৮ কোটি ৭২ লাখ ৭৫ হাজার ২৫৮ টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ কোটি ২৯ লাখ ৩৯ হাজার ৭৩১ টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৭ কোটি ৮ লাখ ৫০ হাজার ৪৪৭ টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬ কোটি ৬৪ লাখ ৬৪ হাজার ২৮৫ টন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৫ কোটি ৮৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৮৬ টন ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৪ কোটি ৮৯ লাখ ৪১ হাজার ৪০৬ টন আমদানি পণ্য হ্যান্ডেলিং করে।
তবে আমদানি বাড়লেও গত অর্থবছরের মতো চলতি অর্থবছরেও কমছে রপ্তানির পরিমাণ। দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরী পোষাক শিল্পের কাঁচামালের দাম দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাতিল হওয়া অর্ডার পুনরায় না পাওয়ার কারণে উৎপাদন কমে গেছে প্রায় ৪০ ভাগ। ফলে অর্থবছর শেষে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হবে বলে মনে করছেন রপ্তানিকারকরা।
বিজিএমইএ'র সহ-সভাপতি রাবিকুল আলম চৌধুরী বলেন, 'করোনার কারণে গত বছর বিদেশী ক্রেতাদের বাতিল হওয়া অর্ডারগুলো আমরা আর পাইনি। চলতি বছরেও করোনা পরিস্থিতি পুনরায় বিপর্যস্ত হয়েছে। অন্যদিকে কাঁচামাল বিশেষ করে সুতার মূল্য প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এই অবস্থায় কারখানাগুলোতে উৎপাদন প্রায় ৪০ ভাগ কমে যায়। ফলে পোষাক রপ্তানিতে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসে'।
চট্টগ্রাম বন্দরের রপ্তানির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে রপ্তানি হয় ৬৬ লাখ ৪৫ হাজার ১৪৫ মেট্রিক টন পণ্য। তার আগের অর্থবছর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৬৮ লাখ ৪৬ হাজার ৪০৬ টন পণ্য। গত অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ কমে ২ লাখ ১ হাজার ২৬১ মেট্রিক টন পণ্য।
এছাড়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৬৯ লাখ ৯৭ হাজার ৪৬৫ মেট্রিক টন , ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৬৭ লাখ ৯ হাজার ৭৫৯ মেট্রিক টন , ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ৫৯ লাখ ৭১ হাজার ৬৩৪ মেট্রিক টন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৫৮ লাখ ৩৯ হাজার ৯৮৬ মেট্রিক টন।
সাপ্লাই চেইন অব্যাহত রাখতে চট্টগ্রাম বন্দরের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক চালু আছে ১৯টি বেসরকারি আইসিডি (ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো)। এসব আইসিডিতে শতভাগ রপ্তানি পণ্য কন্টেইনার ভর্তি করে জাহাজীকরণ করা হয়। এর পাশাপাশি খাদ্যসহ ৩৮ ধরনের পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হয়।
আইসিডি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোস এ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খান বলেন, 'আমদানি রপ্তানি নির্বিঘ্ন রাখতে করোনার এই সংকটকালীন সময়েও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দ্রুততার সাথে আমদানি পণ্য ডেলিভারি এবং রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণে তৎপর আছে সকল আইসিডি'।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো: ওমর ফারুক বলেন, 'সাপ্লাই চেইন নির্বিঘ্ন রাখতে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম শতভাগ চালু আছে। লকডাউন এবং ঈদের ছুটিকালীন সময়েও বন্দরের কার্যক্রম চালু থাকে। এক্ষেত্রে বন্দর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো সহযোগিতা করছে'।