পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দের প্রস্তাব এডিপিতে
চলমান মেগা প্রকল্পকে গুরুত্ব দিয়ে আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) সর্বোচ্চ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে। মোট এডিপির ২৭.৪৭% বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এই খাতে। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে, যা মোট এডিপির ২০.৪৫%।
এডিপিতে পঞ্চম সর্বোচ্চ বা এডিপির ৭.৭% বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে স্বাস্থ্য খাতে।
অন্যদিকে কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলায় সামাজিক সুরক্ষা খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার প্রস্তাব ছিল বিশেষজ্ঞদের। আবার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে কৃষি খাতে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু নতুন প্রস্তাবে এসব খাত সর্বোচ্চ বরাদ্দের তালিকায় নেই।
পরিকল্পনা কমিশনের খাত ভিত্তিক বরাদ্দের প্রস্তাবে, ১৫ খাতের মধ্যে সামাজিক সুরক্ষা খাতকে রাখা হয়েছে তলানিতে। এ খাতে এডিপির ০.৭৩% বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। অগ্রাধিকার কৃষি খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এডিপির ৩.৪%।
এবারই প্রথমবারের মতো এডিপির বিভিন্ন খাত পুনর্বিন্যাস্ত করা হয়েছে। আগে ১৭টি খাতে বরাদ্দ দেওয়া হতো। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং জাতীয় বাজেটের খাত অনুযায়ী আগামী অর্থবছর থেকে এডিপির ১৫টি খাতে পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের সদস্য ও পরিকল্পনা বিভাগের সচিব জয়নুল বারী বলেন, কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে ইতোমধ্যে অর্থ বিভাগ থেকে এডিপির সিলিং পাওয়া গেছে। এর ওপর ভিত্তি করে গুরুত্ব ও চাহিদা বিবেচনায় পরিকল্পনা কমিশন বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে। এটা চূড়ান্ত হবে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায়।
আগামী অর্থবছরের ২,২৪৩২৪.১৪ কোটি টাকার এডিপিতে সরকারি তহবিল থেকে ১৩৬৭৯৯.৯১ কোটি টাকা আর বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৮৭৫২৪.২৩ কোটি টাকার বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর বাইরে বৈদেশিক সহায়তা থেকে আরও ৫০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা রয়েছে বলে জানান পরিকল্পনা কমিশন।
পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, নতুন এডিপিতে তৃতীয় সর্বোচ্চ ১০.৬২% বরাদ্দ পাচ্ছে গৃহায়ন খাত। কোভিডের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাতের একটি হলো শিক্ষা খাতে। এ খাত নতুন এডিপিতে চতুর্থ সর্বোচ্চ , যা এডিপির ১০.৪০%।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন টিবিএসকে বলেন, কোভিড পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বাস্থ্য খাতে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। করোনা সংক্রমণ মোকাবিলা এবং জীবন রক্ষায় আইসিইউ, অক্সিজেনসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনার জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখতে হবে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত সামাজিক সুরক্ষা খাতে। কারণে জীবিকা হারিয়ে নতুন দারিদ্র্য ক্রমাগত বাড়ছে। আবার কোভিডের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাতের একটি হলো শিক্ষা খাতে। অনলাইন ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এ খাতে বরাদ্দ দ্বিগুণ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, অবকাঠামো প্রকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে, এ কারণে এই খাতকে এ সময়ে বরাদ্দ দিতে হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, তবে এ খাত শ্রম ঘন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে না।
পরিকল্পনা কমিশন বলছে, অর্থ বিভাগের বেঁধে দেওয়া আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত এডিপির আকারের ভিত্তিতে, খাতভিত্তিক এ বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগ। তবে খাত ভিত্তিক বরাদ্দ চূড়ান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত বরাদ্দের আকার বাড়তে বা কমতে পারে।
সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ৬১৬৩১.৪১ কোটি টাকা। এর মধ্যে এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে বরাদ্দ ৩৬৫৯৩.৪১ কোটি টাকা। এছাড়া সরকারি তহবিল থেকে ২৫০৩৮ কোটি টাকার বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অবকাঠামো খাতে বেশ কিছু অগ্রাধিকার প্রকল্পে চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কোভিড ও লকডাউন পরিস্থিতিতে ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ কিছুটা ধীর গতিতে চললেও আগামী অর্থবছরে কাজের গতি বাড়বে কিনা তা নিয়ে আশঙ্কা রয়ে গেছে। এ কারণে এডিপিভুক্ত সাতফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পে ৩৯০২৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
আগামী অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে ১৭৩০১.৯৭ কোটি টাকার বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এ বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় ১৫.৯৫% এবং এডিপির তুলনায় ৩২.৭৬ %। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে স্বাস্থ্য খাতে ১৩০৩২.৬০ কোটি টাকার বরাদ্দ বাড়িয়ে ১৪৯২১.৯০ কোটি টাকা করা হয়।
চলতি অর্থ বছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় কৃষি খাতের বরাদ্দ তেমন বাড়েনি। নতুন এডিপিতে এ খাতে ৭৬৪৬ কোটি টাকার বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে এ খাতে বরাদ্দ ৭৭৩৪ কোটি টাকা। সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ মাত্র ১৬৪৮ কোটি টাকা।
গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এবারের এডিপিতে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ১৪২৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দের দেওয়া প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মোট এডিপির ৬.৬৩ %।