ভারতের প্রধান রপ্তানি বাজারের তালিকায় বাংলাদেশের উত্থান
২০২০-২১ অর্থবছরে চার ধাপ অতিক্রম করে ভারতের পঞ্চম বৃহৎ রপ্তানি বাজারে পরিণত হয় বাংলাদেশ।
গত ৩১ মার্চ ভারতের ২০২০-২১ অর্থবছরের সমাপ্তি ঘটে। ভারত সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় মহামারি চলাকালে গত অর্থবছরে বিশ্বে সামগ্রিকভাবে ভারতের রপ্তানি ৭ শতাংশ কমে গেলেও ভারত থেকে বাংলাদেশে রপ্তানি প্রায় ১১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
২০১৯-২০ অর্থবছরে এই তালিকায় বাংলাদেশ নবম অবস্থানে থাকলেও গত অর্থবছরে বাংলাদেশে ৯০৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে ভারত। ফলে, বার্ষিক রপ্তানির হার ১০ দশমিক ৮৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
ভারতের রপ্তানি বাজার হিসেবে বাংলাদেশের আগে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং হংকংয়ের নাম। তবে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের হিসাবে ভারত থেকে বাংলাদেশে রপ্তানির পরিমাণ হংকংকেও ছাড়িয়ে গেছে।
উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের উত্থান নিশ্চিতভাবেই ভারতের জন্য সুবিধাজনক বলে জানান ভারতীয় অর্থনীতিবিদ সঞ্জয় কাঠুরিয়া।
তিনি বলেন, "বাংলাদেশের বাড়তে থাকা মধ্যবিত্ত শ্রেণি ভারতের কৃষিখাদ্য, উৎপাদিত পণ্য এমনকি বিভিন্ন পরিষেবার জন্য বৃহৎ একটি বাজারের সৃষ্টি করেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাণিজ্যিক প্রতিবেদনই তার প্রমাণ। এছাড়া, ভারতে চিকিৎসা নিতে আসা পর্যটকদের অধিকাংশই বাংলাদেশ থেকে আসেন।"
"একইসঙ্গে, বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় ক্রমবর্ধমান বেসরকারি খাতও ভারতের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের জন্য সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রধান উৎস হতে পারে। উত্তর-পঞ্চিমাঞ্চলের রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত বাংলাদেশের এই সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেওয়া," বলেন সঞ্জয় কাঠুরিয়া।
মহামারির কারণে প্রধান রপ্তানি বাজারগুলোর সাথে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ক্রমশ হ্রাস পেলেও ভারত থেকে বাংলাদেশে আমদানি বৃদ্ধি পায়।
গত এক দশকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নে দ্রুত সফলতা অর্জন করেছে। এমনকি, মাথাপিছু আয়ে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ।
করোনা মহামারির কারণে সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটায় অধিকাংশ রপ্তানিকারক দেশে ভারতের রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে। দেশটির শীর্ষ ২০ রপ্তানি গন্তব্যের মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়া চীন (২৭ দশমিক ৫ শতাংশ), ইন্দোনেশিয়া (২১ দশমিক ৭ শতাংশ) এবং ব্রাজিলে (৭ শতাংশ) রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত ভারতের শীর্ষ রপ্তানি বাজার। ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ১৬৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে।
অন্যদিকে, সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ছাড়িয়ে ভারতের দ্বিতীয় রপ্তানি বাজার হিসেবে উঠে এসেছে চীনের নাম। ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারত থেকে চীনে ২ হাজার ১২০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা আরব আমিরাতে ভারতের ১ হাজার ৬৬৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এছাড়া, চতুর্থ অবস্থানে থাকা হংকংয়ে ভারত থেকে রপ্তানির পরিমাণ ১ হাজার ১৫ কোটি ডলার।
২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে সবথেকে বেশি রপ্তানি হয়েছে ১৫০ কোটি ডলারের তুলা ও সুতা। এছাড়া, ৫১ কোটি ৭ লাখ ডলারের বিদ্যুৎ, ৪৯ কোটি ৬ লাখ ডলারের জ্বালানি, ৩৫ কোটি ৬ লাখ ডলারের চাল এবং ৩২ কোটি ৮ লাখ ডলারের ভুট্টা রপ্তানি হয়েছে।
মহামারির কারণে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমলেও ভারতের মতো অর্থনৈতিক মন্দার সৃষ্টি হয়নি।
বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি থেকে ভারত বিশেষভাবে উপকৃত হতে পারে বলে মন্তব্য করেন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর রিসার্চ অন ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক রিলেশনসের (আইসিআরআইইআর) অধ্যাপক নিশা তানেজা।
তিনি বলেন, "ভারত দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প কারখানার তুলা ও সুতি কাপড়ের প্রধান সরবরাহকারীর ভূমিকা পালন করে আসছে। উৎপাদন জিডিপির ৪৫ শতাংশ এবং মোট রপ্তানির ৮৫ শতাংশ তৈরি পোশাক শিল্প খাত থেকে আসায় বাংলাদেশ এইখাতের প্রতি বিশেষভাবে নির্ভরশীল।"
"২০২১ সালে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি মহামারি পূর্ব সময়ের তুলনায় বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। লকডাউন থাকা সত্ত্বেও এই খাতের কার্যক্রম অব্যাহত ছিল এবং সরকার থেকে খাতটি বৃহৎ প্রণোদনা লাভ করে। ফলে, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পখাত দ্রুততম সময়ে ২০২০ সালের জুলাই থেকে বাড়তে থাকা বৈশ্বিক চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়। সম্ভবত দেশটির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে বিষয়টি অন্যতম ভূমিকা রেখেছে," বলেন নিশা তানেজা।
বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভারতের বিশাল বাজারে প্রবেশে সহায়তা করতেও ভারতের বিশেষ নজর দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন কাঠুরিয়া।
সূত্র: লাইভ মিন্ট এবং হিন্দুস্থান টাইমস