মহামারী বর্ষে জগৎ সেরা ধনী জেফ বেজোসের সম্পদ বাড়লো ৭২ বিলিয়ন
বছর শেষে ব্যবসার খাতায় চলে লাভ-ক্ষতির সমীকরণ। ১২টি মাস কেমন কাটলো তারও একটা সম্পূর্ণ চিত্র মেলে তখন। আর এমন হিসাবেই পৃথিবীর সেরা ধনী আবারও তাক লাগিয়েছেন। ২০২০ সালে তিনি আরও ৭,২৭০ কোটি ডলার বেশি প্রাচুর্য্যের অধিকারী হয়ে উঠেছেন। ফলে জেফ বেজোসের সম্পদ গত বছরের তুলনায় ৬৩.৩% হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বলে জানা যায় ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স সূত্রে।
চলতি বছরের শুরুটা বেজোস সবচেয়ে বেশি সম্পদশালী হিসাবেই শুরু করেছিলেন। ২০১৯ সালের শেষে তার মোট সম্পদমূল্য ছিল ১১ হাজার ৬শ' কোটি ডলার। তারপর শেষ হতে চলা ২০২০ সালের কোন মাসে বেজোস কত বাড়বাড়ন্ত দেখেছেন, তার একটা হিসাব নিচে প্রদত্ত রেখাচিত্রে তুলে ধরা হলো। সম্পদের এই ঊর্দ্ধগতি সম্পর্কে জেনে রাখাও উচিৎ, কারণ মহামারী বিপুল সংখ্যক মানুষকে রিক্ত ও শূন্য করেছে।
সিংহভাগ সেরা ধনীর মতোই বেজোসের সম্পদ উৎস তার নিজ প্রতিষ্ঠানে বড় অংশের মালিকানা বা কোম্পানি শেয়ার। পুঁজিবাজারের দোলাচাল তাই নিয়মিত প্রভাব ফেলে পোর্টফলিও'র ওঠানামায়। আর তাছাড়া বিদায় নিতে চলা বছরটিও ছিল উত্তাল। ট্রাম্পের শেষ বছরে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের উত্তেজনা, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, মহামারী- সবই ছিল। আর ছিল এসব বড় ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেখা দেওয়া অন্যান্য নাটকের অবতারণা।
তারপরও পুঁজিবাজারে অ্যামাজনের শেয়ার ধরে রাখে ঈর্ষণীয় প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিক রেকর্ড। ফলে মাঝেমধ্যেই বেজোসের সম্পদ ফুলেফেঁপে ওঠে আবার কখনোবা তা কিছুটা কমে স্থিতিশীলও হয়। তাই প্রতি মাসের ১ থেকে ১৫ তারিখ নাগাদ তার মত সম্পদমূল্যের গড় উত্থান তুলে ধরেছে ব্লুমবার্গ। এভাবে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর নাগাদ ১২টি মাসকে তুলে ধরা হয়েছে।
সবচেয়ে মজার ঘটনা হলো, কোম্পানি দর উত্থান-পতনের এই প্রক্রিয়ায় প্রতি সপ্তাহে বেজোসের সম্পদ কমে বা বাড়ে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার করে। একদিনেও এমনটা ঘটেছে। তারপরও, চলতি বছর মহামারীর কারণে প্রযুক্তিখাত এবং ঘরে বসে পণ্য কেনার রমরমা ব্যবসায় আখেরে আরও বিত্তশালী হয়েছেন তিনি। কারণ, দুটি খাতেই অ্যামাজন সবচেয়ে বেশি ব্যবসাও করে।
তাইতো যুক্তরাষ্ট্রের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের আয়ের চাইতে বেজোস ২৭ লাখ গুণ বেশি ধনী বলে তুলনামূলক আলোচনায় বলেছে ব্লুমবার্গ। তার মাত্র ৮ শতাংশ সম্পদ হলো দেশটির সমস্ত আবাসিক বাড়িতে বিক্রি হওয়া পণ্যের সমান। চলতি বছর তার সম্পদ প্রবৃদ্ধি কোস্টারিকা বা লিথুনিয়ার মতো দেশের জিডিপি'র চাইতেও অনেক বেশি।
২০২০ সালে শুধু ভোক্তাচাহিদা অ্যামাজনের নাটকীয় উত্থানকে আকাশ ছোঁয়া উচ্চতায় নেয়নি। তার পেছনে ছিল বেজোসের স্বভাবজাত ব্যবসায়ীক বিচক্ষণতা। ব্যবসায় মহামারীর প্রভাব সঠিক ব্যবস্থাপনায় নিয়ে এসে পণ্য ডেলিভারির সক্ষমতা নতুন উচ্চতায় নেন বেজোস। এনিয়ে তিনি দিনরাত কাজ করেছেন বলে ইঙ্গিত দেন বিজনেস ইনসাইডারের বাণিজ্য প্রতিবেদক ইউজিন কিম।
তবে প্রদীপের নিচে অন্ধকারের মতোই মালিক হিসাবে বেজোসের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা ছিল এবং বর্তমানেও আছে, বেশ জোরেশোরেই। মহামারীর ঝুঁকি মোকাবিলা করে কাজ করার দরুণ তিনি কর্মীদের যথাযথ বেতন-ভাতায় পুরস্কৃত করেননি, এমন অভিযোগও ওঠে। সম্প্রতি ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, অ্যামাজনের চার হাজার কর্মী ফুডস্ট্যাম্প বা সরকারি খাদ্য সহায়তার মাধ্যমে জীবনধারণ করছেন। এটাই সম্পদ আহরণে আবহমানকালের পুঁজিবাদী চরিত্র। যেখানে শ্রমিকের ঘাড়েই পা রেখে উত্থান হয়েছে অতি-ধনী আর মহাকায় উদ্যোগের।
- সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার