ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়তে পারে
দেশে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি, গ্রাহকের আমানতের সুদহার বাড়তে থাকায় ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়ানো নিয়ে চিন্তা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বুধবার রাষ্ট্রায়ত্ব চার ব্যাংকের এমডিদের সঙ্গে বৈঠক করে ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়ানো নিয়ে আলোচনা করা হয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ফারাহ নাসেরের সভাপতিত্বে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম, অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও মো. মুরশেদুল কবির, রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ও জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে উপস্থিত একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, "দেশে অতিরিক্ত মাত্রায় মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কারণে ব্যাংকগুলোর আমানতসহ সব কিছুতে খরচ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রেপো রেট বাড়ানো হয়েছে, ইন্টার ব্যাংক রেট বেড়েছে। তবে ব্যাংক ঋণের সুদহার না বাড়ানোর কারণে ব্যাংকগুলো সমস্যায় পড়েছে। ফলে ঋণের সুদহার বাড়ানো বিষয়ে পর্যালোচনা করতে আমাদের সঙ্গে বসেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।"
"গভর্নর দেশের বাইরে রয়েছেন, তাই সুদহার বাড়বে কিনা সে বিষয়ে এখন কোন নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়নি," যোগ করেন তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, তিনমাস বা তারচেয়ে বেশি আমানতের সুদ হার নীতিমালা অনুযায়ী হবে আগের তিন মাসের গড় মূল্যস্ফীতির বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২১ সালের জুনে যখন আমানতের সুদহার নির্ধারণ করে তখন ঋণের সুদহার ছিল ৯% আর মূল্যস্ফীতি ছিল ৫.৬৪%।
অথচ গত সেপ্টেম্বরে দেশের মূল্যস্ফীতি ৯.১ শতাংশে দাঁড়ালেও ব্যাংক ঋণের সুদহার একই রয়ে গেছে। তাই সুদহার বাড়ানোর বিষয়ে পূর্ব পর্যালোচনা হিসেবে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।
বিশ্বের অধিকাংশ দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে টাকার সরবরাহ কমাতে আর্থিক নীতি কঠোর করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও চলতি বছরের মুদ্রানীতিতে তারল্যের ফ্লো কমিয়ে আনতে বেসরকারি খাতের ঋণের সুদহার আগের অর্থবছরের তুলনায় কমিয়ে ১৪.১% করেছে।
সম্প্রতি আগস্টে দেশের বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪.০৭%। যা গত প্রায় চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
দেশের ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির মধ্যে ঋণের সুদহার না বাড়ানোর ফলে মূল্যস্ফীতি আরও সক্রিয় হচ্ছে। এ বিষয়ে ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা ঋণের সুদহার বাড়ানোর বিষয়ে বারবার পরামর্শ দিলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা আমলে নেয়নি। এখন মূল্যস্ফীতি অতিমাত্রায় বৃদ্ধির কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার বাড়ানোর বিষয়ে পর্যালোচনা করতে ব্যাংকগুলোর সথে বসছেন।
এর আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর রেপো সুদহার ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছে। যার ফলে সুদহার বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে মূলত টাকার প্রবাহ কমাতে। যাতে ব্যাংকগুলো বেশি সুদের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কম টাকা ধার করে- এটি নিশ্চিত করতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে ব্যাংক ঋণের সুদহার না কমানোর কারণে টাকার ফ্লো কমছে না।
আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন নীতিতে থাকলেও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ভিন্ন প্রক্রিয়ায় এগোচ্ছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের রেপো ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৫.৯০ পার্সেন্ট করেছে।
ইন্ডিয়ার ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক রেপো রেট বাড়ানোর পরপরই স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং এইচডিএফসিও নিজেদের এক্সটার্নাল বেঞ্চমার্ক লেন্ডিং রেট বাড়িয়েছে।
তবে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর ঋণের সুদহার কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারণ হওয়ায় দেশের ব্যাংকগুলোর কস্ট অব ফান্ড বাড়লেও ঋণের সুদহার বাড়াতে পারছে না।