প্রসার বেড়েছে স্বল্প সুদের টেকসই অর্থায়নের, ঋণ বিতরণের বার্ষিক বৃদ্ধি ৬৯%
চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে টেকসই অর্থায়ন খাতে ব্যাংক ও এনবিএফআই-গুলোর ঋণ বিতরণ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৯ শতাংশ বেড়েছে।
টেকসই অর্থায়ন বলতে পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়ন, ঋণের গুণগত মান এবং কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখে এমন খাতে ঋণ বিতরণকে বোঝায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৩১,৮৮৫ কোটি টাকা। ২০২১ সালের একই প্রান্তিকে ১৮,৮৭৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল।
সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১৩,০১০ কোটি টাকা।
তবে ঋণ বিতরণের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিতরণ করা মোট ঋণের মধ্যে টেকসই অর্থায়ন জুন প্রান্তিকের তুলনায় কমেছে।
সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে মোট বিতরণকৃত ঋণের ১১.২৭% ছিল টেকসই অর্থায়ন খাতে। জুনে এই অংশ ছিল ১১.৯৮%।
মার্চ প্রান্তিকে মোট বিতরণকৃত ঋণের মধ্যে টেকসই অর্থায়ন খাতের অংশ ছিল ১০% এর কম। অবশ্য ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এই হার ছিল ৮.৩৮%।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংক ও এনবিএফআই সেক্টরে বিতরণকৃত মোট ঋণের মধ্যে ২০% টেকসই অর্থায়ন খাতে দিতে হবে।
ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা থাকার কারণে সাস্টেইনেবল ফাইন্যান্সে লোন ডিসবার্সমেন্ট বাড়ছে। এছাড়া অন্য ঋণের চাইতে সুদহার কম থাকার কারণে গ্রাহকেরাও এই ঋণ নিতে আগ্রহী।"
"তবে সবসময় যে গ্রাহকের আগ্রহে গ্রিন প্রজেক্টগুলো বাস্তবায়ন হয় এমন না। অনেক সময় যারা কোম্পানির বায়ার থাকেন, তারা ফ্যাক্টরির মালিকদের ফ্যাক্টরিগুলো গ্রিন করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন," যোগ করেন তিনি।
অন্য ঋণের গ্রহীতাদের তুলনায় টেকসই অর্থায়নের অধীনে ঋণ নেওয়া ঋণগ্রহীতারা ভালো উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, "অন্য ঋণের তুলনায় এই ঋণে ক্লাসিফাইডের পরিমাণ কম। এটি আমাদের ব্যাংক খাতের জন্যও একটা ভালো ম্যাসেজ।"
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য থেকে দেখা যায়, সর্বাধিক টেকসই অর্থায়ন কৃষি খাতে (৮,৬৭৯ কোটি টাকা), এরপর রয়েছে গ্রিন প্রোজেক্ট, পণ্য এবং উদ্যোগের জন্য দেওয়া ঋণ (৮,৫৪০ কোটি টাকা)।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, সর্বাধিক কার্বন নিঃসরণকারী ইস্পাত, কাগজ, সিমেন্ট, রাসায়নিক, সার, বিদ্যুৎ, টেক্সটাইল ইত্যাদি পণ্যের শিল্প প্রকল্পের অর্থায়নের অন্যতম প্রধান উৎস ব্যাংকিং খাত।
ব্যাংকিং খাত অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন এবং পরিবেশগতভাবে সুরক্ষা দেওয়া প্রকল্পের মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে পারে।
এ বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে ১১টি ব্যাংক এবং ৬টি এনবিএফআই মোট ঋণ বিতরণের তুলনায় ২০ শতাংশ টেকসই অর্থায়নের লক্ষ্য পূরণে সক্ষম হয়েছে।
তবে দেশের ৬১টি ব্যাংকের অধিকাংশই এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি।
সবুজ অর্থায়নেরও প্রসার ঘটছে
দেশে সবুজ অর্থায়নের আরও বিকাশের জন্য ২০১৬ সাল থেকে দেশের মোট মেয়াদি ঋণের ৫% লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সবুজ অর্থায়ন প্রায় বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছেছে।
সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সবুজ অর্থায়ন ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা, যা দেশের মোট মেয়াদি ঋণের ৪ দশমিক ২০ শতাংশ।
তবে গত বছরের একই সময়ে ঋণের পরিমাণ ছিল ১,৫৯৬ কোটি টাকা, যা মোট মেয়াদি ঋণের ৩.১৪ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, উক্ত ত্রৈমাসিকে ১৫টি ব্যাংক গ্রিন ফাইন্যান্সের লক্ষ্যমাত্রা (৫%) অতিক্রম করেছে। এছাড়া পাঁচটি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) তাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে।