২০২২-২৩ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের অর্থছাড় কমেছে ৭.৪%
সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থছাড় কমেছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সূত্রমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বৈদেশিক সহায়তার অর্থছাড় কমেছে ৭.৪%।
ইআরডির সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, সদ্যসমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের অর্থছাড় ৯.২৬৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এর আগের অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের রের্কড ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড় হয়েছিল।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে উন্নয়ন প্রকল্পে বাস্তবায়ন ব্যহত হয়েছে। নির্মাণ সামগ্রির মূল্য ঊর্ধ্বমুখী ছিল। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও এলসি ওপেনিং নিয়ে অনেক প্রকল্পে জটিলতায় পড়তে হয়েছে।
এ কারণে ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন হার কম ছিল। এছাড়া সক্ষমতার অভাবে এডিপিতে বৈদেশিক ঋণের বরাদ্দের ব্যবহার এর আগের অর্থবছরের চেয়ে কিছুটা কম ছিল।
অন্যদিকে ২০২১-১১ অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীরা বাজেট সহায়তার পাশপাশি কোভিডের টিকা কিনতেও অর্থ ছাড় করেছিল। কিন্ত অর্থবছর ২০২২-২৩ এ সরকার টিকার জন্য কোনো ঋণ সহায়তা পায়নি। এসব কারণে এর আগের অর্থবছরের চেয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে অর্থছাড় কমেছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি অর্থ ছাড় করেছে জাপান। এই দেশ থেকে প্রায় ২.০৪ বিলিয়ন ডলার অর্থছাড় পাওয়া গেছে। এছাড়া বিশ্বব্যাংক ১.৯৩ বিলিয়ন ডলার, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ১.৫৬ বিলিয়ন ডলার অর্থছাড় করেছে।
বেড়েছে ঋণের প্রতিশ্রুতি
এদিকে অর্থছাড় কমলেও সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে ঋণের প্রতিশ্রুতি বেড়েছে।
ইআরডির হিসাবে অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর কাছ থেকে সরকার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে ৮.৭৯৮ বিলিয়ন ডলার। এর আগের অর্থবছরে যা ছিল ৮.২০ বিলিয়ন ডলার।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে থেকে সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে।
এই সময়ে বিশ্বব্যাংক ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তাসহ মোট ৯ প্রকল্পে ৩.৬০ বিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর আগে কোনো অর্থবছরে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে এত বেশি প্রতিশ্রুতি পায়নি বাংলাদেশ।
এ সময় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ১.৮৮ বিলিয়ন ডলার। জাপানের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি এসেছে ১.৫১ বিলিয়ন ডলার।
বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ বেড়েছে
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে সুদের হার বৃদ্ধির ফলে সরকারের বৈদেশিক ঋণের পরিশোধের চাপ বেড়েছে।
এর ফলে আগের অর্থবছরের তুলানায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ৩২.৪% বেড়েছে।
ইআরডি'র হিসাবে, সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের সুদ ও আসল মিলিয়ে ২.৬৭ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে। এরমধ্যে সুদ হিসেবে পরিশোধ করেছে ৯৩৫.৬৬ মিলিয়ন ডলার, আর আসল পরিশোধ করেছে ১.৭৩ বিলিয়ন ডলার।
এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকার আসল ও সুদ বাবদ পরিশোধ করেছে ২.০১৭ বিলিয়ন ডলার। যার মধ্যে আসল ১.৫২ বিলিয়ন ডলার এবং সুদ ৪৯১ মিলিয়ন ডলার।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (এসওএফআর) রেট বেড়ে ৫% এর বেশি হয়েছে। এ কারণে বাজার ভিত্তিক ঋণের জন্য বাংলাদেশকে এখন ৫% এর বেশি সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের আগে এই রেট ছিল ১% এর কম।