সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম মানছেনা কেউই
সরকার দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার ৪ দিনেও আলুর বাজারে দামে কোন হেরফের হয়নি। খুচরা পর্যায়ে ৩৫-৩৬ টাকা নির্ধারণ করলেও এখনো ভোক্তাকে ৫০ টাকা দিয়েই আলু কিনতে হচ্ছে। এদিকে পাইকারি পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম সামান্য কমে আসলেও এখনো খুচরা ও পাইকারিতে সরকার নির্ধারিত মূল্যের ধারেকাছেও আসেনি।
অবশ্য এক মাসেরও বেশি সময় আগে সরকার চিনির দামও নির্ধারণ করে দিয়েছিল। খোলা চিনি ১৩০ টাকা কেজি দরে নির্ধারণ করলেও তা বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৪৫ টাকায়। অর্থাৎ দাম বেঁধে দিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক মাসেও চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।
রবিবার রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা, সেগুনবাগিচা, দিলু রোড সহ কয়েকটি খুচরা বাজার এবং কারওয়ানবাজারের পেঁয়াজের পাইকারি বাজার ঘুরে জানা যায়, খুচরায় প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকা কেজি দরে। আলু আগের মতই ৫০ টাকা এবং ডিম প্রতিটি ১২.৫০-১২.৯২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেঁধে দেওয়ার আগেও পণ্যগুলোর দাম একই রকম ছিল।
এদিকে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম সামান্য কমছে বলে জানা গেছে। তবে সেটা এখনো সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের খুচরা মূল্য ৬৪-৬৫ টাকা এবং পাইকারি মূল্য ৫২.৪৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে।
কারওয়ানবাজারের পেঁয়াজের পাইকারি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত দুই দিনে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৬-৭ টাকা পর্যন্ত কমেছে। এর মধ্যে পাবনা থেকে যেসব পেঁয়াজ আসে সেগুলোর দাম ৮২ টাকা থেকে কমে ৭৬-৭৭ টাকা এবং ফরিদপুরের পেঁয়াজের দাম ৭২ টাকা থেকে কমে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারি বাজারে যতটুকু দাম কমেছে খুচরায় এখনো সেটুকু প্রভাবও পড়েনি। কিছু কিছু জায়গায় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা কেজি দরে, কিছু কিছু দোকানি এখনো ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে।
সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের এক বিক্রেতা ফরিদুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, 'দু'দিন পেঁয়াজ ও আলু বিক্রির চেয়ে কাস্টমারের সঙ্গে তর্কাতর্কিই বেশি হচ্ছে। পাইকারিতে না কমলে আমরা কিভাবে দাম কমাবো?'
শুধু আলু-পেঁয়াজ নয়, গত মাসে সরকার বেঁধে দিয়েছিল চিনির দাম। প্রতি কেজি খোলা চিনি ১৩০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার। বাজারে প্যাকেটের চিনি দীর্ঘদিন ধরেই নেই। খোলা চিনিও বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৪৫ টাকা কেজি দরে।
চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণ করে হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। তাদের সঙ্গে নিয়ে আলোচনা করে চিনির দাম কমানোর ঘোষণা দেওয়ার পরও বাজারে এর কোন প্রভাব নেই। অর্থাৎ এখানেও বাজার মনিটরিং শুধু ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
জানতে চাইলে কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সভাপতি গোলাম রহমান টিবিএসকে বলেন, "বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সবচেয়ে বড় টুল হচ্ছে পর্যাপ্ত সরবরাহ এবং ঘোষণা বাস্তবায়নের জন্য কঠোর মনিটরিং। দুটির কোন একটিতে গ্যাপ থাকলে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে না।"
এখানেও কোন না কোন জায়গায় ঘাটতি রয়েছে, যে কারণে এর ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না।
গত শনিবার ভোক্তা অধিদপ্তর সারাদেশে অভিযান চালিয়ে বাড়তি দামে এসব পণ্য বিক্রির অভিযোগে ১৪৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৪.৬২ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছে। রবিবারও যথারীতি একইভাবে অভিযান পরিচালনা করেছে বলে জানা গেছে।