২০২৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি কমেছে ২২ শতাংশ
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২০২৩ সালে আগের বছরের তুলনায় গাড়ি আমদানি কমে গেছে প্রায় ২২ শতাংশ। আর ৫ বছরের ব্যবধানে দেশের বৃহৎ এই সমুদ্র বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি কমেছে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ।
করোনা মহামারির পর গাড়ি আমদানি স্বাভাবিক হয়ে এলেও পরবর্তীতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ডলার সংকটে পড়ে আমদানিকারকরা চাহিদা অনুযায়ী গাড়ি আমদানি করতে পারেনি।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২০২৩ সালে সব ধরনের কার আমদানি হয়েছে ২৪ হাজার ১৫০টি। ২০২২ সালে গাড়ি আমদানির পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৮৮০টি। অর্থাৎ ২০২৩ সালে ২০২২ সালের তুলনায় গাড়ি আমদানি কম হয়েছে ৬ হাজার ৭৩০টি বা ২১.৭৯ শতাংশ।
৫ বছর আগে ২০১৯ সালে সব ধরনের কার আমদানি হয়েছিল ৬১ হাজার ৪৬৭টি। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে কার আমদানি কমে ৬০.৭০ শতাংশ।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের তথ্যমতে, ২০২০ সালে ২৮ হাজার ৬৯৭টি গাড়ি আমদানি হয়। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এলে ২০২১ সালে ২০২০ সালের তুলনায় ৪৭.৯৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে গাড়ি আমদানি হয় ৫৫ হাজার ১৫১ টি।
পরবর্তীতে ২০২২ সালে আবার গাড়ির আমদানি কমে যায়। ওই বছর আমদানি হয় ৩০ হাজার ৮৮০টি গাড়ি। ২০২৩ সালে গাড়ি আমদানি আরও কমে যায়।
গাড়ি আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, ব্যাংকে শতভাগ এলসি মার্জিনে গাড়ি আমদানি সম্ভব হচ্ছে না। ব্যাংক এলসি দিতে পারছে না। এই সংকটের কারণে ছোট পরিসরে তারা এ ব্যবসা থেকে ছিটকে পড়ছেন।
গাড়ি ব্যবসায়ীরা আরও জানান, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি কমলেও অনেক ব্যবসায়ী মোংলা বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি করছেন। কারণ মোংলা বন্দর দিয়ে গাড়ি ডেলিভারির ক্ষেত্রে বন্দর চার্জ কিছু কম। ফলে ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ডেলিভারি না করিয়ে মোংলা বন্দর দিয়ে করিয়েছেন।
বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের ৬০ শতাংশ গাড়ি আমদানি করা হয় মোংলা বন্দর দিয়ে। বাকি ৪০ শতাংশ হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে।
বাংলাদেশে আমদানি হওয়া গাড়ির প্রায় ৭৫ শতাংশ রিকন্ডিশনড বা পুরাতন গাড়ি। ১ থেকে ৫ বছরের পুরোনো এসব গাড়ি আমদানি খাতে কাস্টমসের শুল্ক বাবদ আয় হয় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। আমদানির বাকি ২৫ শতাংশ গাড়িগুলো 'ব্র্যান্ড নিউ'।
গাড়ি আমদানিকারক হাবিবুর রহমান বলেন, গাড়ি রাখার ভাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে মোংলা বন্দরে কম। বন্দরে গাড়ি আসার পর তিন দিন বিনা ভাড়ায় গাড়ি রাখার সুযোগ রয়েছে। চতুর্থ দিন থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন গাড়ি রাখার ভাড়া ৯০৫ টাকা। মোংলা বন্দরে এই ভাড়া ৩৬০ টাকা। ১৫ দিন পর এই ভাড়া আরও বাড়তে থাকে।
বারভিডার বারভিডার সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, 'করোনা মহামারি সংকটের পর শুরু হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব। ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে না পারায় গাড়ি আমদানি করতে পারছি না। গ্রাহকের ক্রয় ক্ষমতা কমে যাওয়ায় কমেছে গাড়ির চাহিদাও। এসব সংকটের কারণে অনেক ব্যবসায়ী গাড়ি আমদানি ছেড়ে দিয়েছেন। ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।'
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম বন্দরে ৩ হাজার গাড়ি রাখার শেড রয়েছে। এছাড়া মাল্টিপল শেডেও ৩০০-৪০০ গাড়ি রাখা যায়। সব মিলিয়ে গাড়ি আমদানিকারকদের জন্য সব সুবিধা রাখা আছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস জানায়, ২০২২ সালের নভেম্বরে কয়েকটি গাড়ি আমদানিকারক এলসি ছাড়াই ৬৫০ রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি করেন। এলসি ছাড়া আমদানি করায় পরবর্তীতে জরিমানা দিয়ে এসব গাড়ি ছাড় দেয় চট্টগ্রাম ও মোংলা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
তবে ২০২৩ সালে কাস্টমসের কড়াকড়ির কারণে এলসি ছাড়া গাড়ি আমদানির ঘটনা ঘটেনি বলে জানায় চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার বদরুজ্জামান মুন্সি বলেন, 'রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ডলার সংকট রয়েছে। মূলত ব্যবসায়ীদের শতভাগ মার্জিনে এলসি খুলে গাড়ি আমদানি করতে হচ্ছে, যা অনেক ব্যবসায়ীর পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। সেজন্য গাড়ি আমদানি কমেছে।'
বারভিড়ার তথ্য অনুসারে, রিকন্ডিশনড গাড়ি আমদানি খাতে বিনিয়োগ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। এই খাত থেকে বছরে কাস্টমসের রাজস্ব আদায় হয় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা।