পরিচালনা অব্যাহত রাখতে ৪০০ কোটি টাকার নতুন ব্যাংক ঋণ চায় সংকটক্লিষ্ট বেক্সিমকো
পরিচালন ব্যয় মেটাতে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের কাছে স্বল্পমেয়াদি অর্থায়ন হিসেবে, ৪০০ কোটি টাকার ক্যাশ ক্রেডিট (সিসি) ঋণ সুবিধা চেয়ে আবেদন করেছে বেক্সিমকো লিমিটেড। পাশাপাশি টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল কারখানাগুলো চালু রাখতে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খোলার সুযোগও চেয়েছে।
একইসঙ্গে গত ডিসেম্বর ভিত্তিক সমস্ত দেনা দুই বছরের মোরাটোরিয়াম সুবিধাসহ ৫ শতাংশ সুদে— ১৫ বছর মেয়াদে পুনঃতফসিল করার অনুরোধ করেছে। কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখা ও রপ্তানি অব্যাহত রাখার মাধ্যমে, দীর্ঘমেয়াদে ব্যাংকের দায়-দেনা পরিশোধ করতে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে বেক্সিমকো।
বেক্সিমকো লিমিটেডের মালিকানায় রয়েছেন সালমান এফ রহমান, যিনি ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একজন উপদেষ্টা ছিলেন। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে একই ধরনের দাবি জানায় বেক্সিমকো লিমিটেডের কর্মকর্তা ও শ্রমিকেরা। তারা অবিলম্বে বন্ধ সব কারখানা খুলে দেওয়া এবং লে-অফ প্রত্যাহারের দাবিও করে।
তবে নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, বেক্সিমকো শিল্পপার্কের বন্ধ কারখানাগুলো আবার চালু করা সম্ভব না।
এদিন সচিবালয়ে আয়োজিত 'বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির' বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, 'এসব কারখানার বিপরীতে এত দায়দেনা রয়েছে— যে চালানোর উপযুক্ততা হারিয়েছে।'
অতিরিক্ত খরচ কমানো ও মুনাফা বাড়ানোর পরিকল্পনা
গত ১৬ জানুয়ারি জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে দেওয়া এক প্রস্তাবনায় – বেক্সিমকো টেক্সটাইল রপ্তানিমুখী কোম্পানিগুলোর অতিরিক্ত খরচ কমানো ও কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে – ২০২৫ ও ২০২৬ সালে কোম্পানির মুনাফা বাড়ানোর একটি পরিকল্পনা দিয়েছে।
বেক্সিমকো লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ২০২৫ সালে আমাদের কাছে মাত্র ৩০ কোটি টাকা নগদ উদ্বৃত্ত আছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে প্রয়োজনীয় ব্যয়ের চেয়ে রাজস্ব/ বিক্রি খুবই কম হওয়ায় এমনটা হয়েছে। এছাড়া প্রথম বছরে এই ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পিঅ্যান্ডএল এবং সিএফ-এ ফ্যাক্টর করা হয়েছে— এমন ইতিমধ্যে ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের পাশাপাশি ৮ হাজার শ্রমিক ও ৫০০ পরিচালন কর্মকর্তা ছাঁটাইয়ের প্রয়োজন হবে।
'তবে আমরা যদি গত প্রান্তিকের মুনাফাযোগ্যতা দেখি, তাহলে প্রতি মাসে প্রায় ৪০ কোটি টাকার নগদ উদ্বৃত্ত আশা করতে পারি। ২০২৬ সালে কারখানা পূর্ণ সক্ষমতায় চালু রাখা সম্ভব বলে আমরা সুনিশ্চিত। যদি আমরা সর্বোচ্চ মাত্রায় উৎপাদন করতে পারি— তাহলে ২০২৬ সালে ৫৩৬ কোটি টাকা মুনাফা হবে বলে আশা করছি।'
জনতা ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২০ সালে বেক্সিমকো লিমিটেড ৬ হাজার ১১১ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করে, ২০২৩ সালে যা ছিল ৩ হাজার ৭৬৬ কোটি এবং ২০২৪ সালে ৩ হাজার ৫২ কোটি টাকা।
গত নভেম্বর মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়কে লেখা জনতা ব্যাংকের একটি চিঠি অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির কাছে বেক্সিমকোর মোট দেনা ২৩ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা; যারমধ্যে ১৯ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা মন্দ ঋণ হিসেবে শ্রেণীকৃত। বাকি প্রায় ৩ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা ওভারডিউ অবস্থায় রয়েছে।
বেক্সিমকো টেক্সটাইলস এন্ড পিপিই ডিভিশনের আওতায়– মোট ১৫টি প্রস্তুতকারক কোম্পানি রয়েছে, যার মধ্যে বর্তমানে মাত্র তিনটি কোম্পানি- বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো পিপিই লিমিটেড এবং আরআর ওয়াশিং লিমিটেড চালু রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাকি ১২টি কোম্পানি ১৬ ডিসেম্বর থেকে লে-অফ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমিকরা কারখানা চালু করতে আন্দোলন করছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জনতা ব্যাংক বেক্সিমকোর শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন বাবদ অর্থ মঞ্জুর করেছে। সরকার-ও বাজেট থেকে এক মাসের বেতন পরিশোধ করেছে। তবে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি (ঋণপত্র) খুলতে না পারায়, রপ্তানিমুখী কারখানাগুলোর কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের আগে জুলাই মাসে বেক্সিমকো টেক্সটাইলের কারখানাগুলোতে মোট শ্রমিক-কর্মকর্তার সংখ্যা ছিল ৪৪ হাজার ৬৪৯, যার মধ্যে শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৪২ হাজার ৬৯৯ জন। এরপর থেকে ৯ হাজার ৭৭৮ জন শ্রমিকসহ— মোট ১০ হাজার ১১২ জনকে ছাঁটাই করা হয়েছে।
বেক্সিমকো গ্রুপের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী মে মাসের মধ্যে আরও ৮ হাজার শ্রমিক ও ৫০০ কর্মকর্তা কমানো হবে। তাতে বেক্সিমকো টেক্সটাইলে মোট শ্রমিক-কর্মচারীর সংখ্যা দাঁড়াবে ২৬ হাজার ৩৭ জন।
ওসমান কায়সার চৌধুরী বলেন, "আমাদের ব্যবসায়িক পরিকল্পনাটি খুবই বাস্তবসম্মত ও অর্জনযোগ্য। গত পাঁচ বছরে আমাদের রপ্তানি পারফরম্যান্স দেখলে বুঝতে পারবেন, প্রতি মাসে আমাদের গড় রপ্তানি ছিল ৩২ মিলিয়ন ডলার মূল্যের। এছাড়া, ২০২২ সালে মাসিক গড় রপ্তানি ছিল ৫৯ মিলিয়ন ডলার।"
বেক্সিমকো টেক্সটাইল আরও বলেছে, কিছু বিষয়ের ওপর তাদের ব্যবসায়িক প্রক্ষেপণে ঝুঁকি থাকতে পারে। এরমধ্যে বিক্রয়, বিক্রয়মূল্য, আন্তর্জাতিক বাজারদর, জ্বালানি সরবরাহ, এবং বিশেষত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিশেষভাবে গুরুত্ববহ। বিক্রি ৫ শতাংশ কমলে– মুনাফা কমবে ৯ শতাংশ। কিন্তু উপকরণ বা কাঁচামালে ১ শতাংশ ব্যয় কমানো গেলে— মুনাফা বাড়বে ১০ শতাংশ।
এছাড়া, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমুল্যায়নেরও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে উল্লেখ করে বেক্সিমকো বলেছে, "একটি সাধারণ মানদণ্ড অনুসরণ করলে, আমাদের মুনাফা কমবেশি ৫ থেকে ১০ শতাংশের মতো হতে পারে।"
জনতা ব্যাংককে বেক্সিমকো আরও জানায়, ব্যবসায়িক এই সম্ভাবনা অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত সচল করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে এর সাথে সংশ্লিষ্টদের জীবিকা নিশ্চিত করা যায়, বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যায়, এবং ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ আদায় ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করা যায়। এইক্ষেত্রে প্রতি দিনের বিলম্ব সাফল্যের সম্ভাবনাকে আরও দূরে ঠেলে দেবে।
"আমাদের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, ব্যাংকিং সুবিধা প্রদান না করা হলে— ব্যবসা বন্ধ করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না"- বেক্সিমকো আরও বলেছে।
ব্যাংকগুলোতে কেবল ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খোলার সুবিধা দেওয়া হলেও – বেক্সিমকো সরাসরি ক্রয়ের অর্ডার নিতে বা বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে রপ্তানি কার্যক্রম চালাতে পারবে না। সেক্ষেত্রে শুধু কমিশনের ভিত্তিতে কাজ করা সম্ভব হবে। শুধুমাত্র কমিশন-ভিত্তিক কাজের ভিত্তিতে বেক্সিমকো সব কারখানা পরিচালনার সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে। এক্ষেত্রে বার্ষিক আয় নেমে আসবে ৫৫০ কোটি টাকায়, এবং সংশ্লিষ্ট সব ব্যয় মেটানোর পর মাত্র ৬ হাজার কর্মী ও ৩০০ পরিচালন কর্মকর্তাকে চাকুরিতে রাখা যাবে।
বাদবাকি কারখানাগুলোও বন্ধ করা হলে এসব স্থাপনা ও যন্ত্রপাতির ক্ষতি হতে পারে। সেক্ষেত্রে বেক্সিমকো বাকি ২৭ হাজার কর্মী ও ১,৩০০ কর্মকর্তাকে ছাঁটাই করতে হবে। তাদেরকে ফাইনাল সেটেলমেন্টের জন্যও ৪৫০ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে।
তবে ব্যাংক কোনো ধরনের সুবিধা না দিলে— কর্মকাণ্ডের অভাবে সবগুলো শিল্প ইউনিট অচল হয়ে পড়বে। এছাড়া, বেকার হয়ে যাবে সাড়ে ৩৪ হাজার কর্মী। মোট দায় হবে ২৪ হাজার ২১৩ কোটি টাকা, এরমধ্যে কর্মীদের দিতে হবে ৫৫৯ কোটি টাকা, ঋণদাতাদের ৩৬৮ কোটি টাকা, এবং ব্যাংক ঋণ বাবদ ২৩ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা।
এসব কথা জানিয়ে বেক্সিমকো লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রতিশ্রুতি দেন যে, "সরকার যদি আমাদের প্রস্তাবিত ব্যাংকিং সুবিধার ব্যবস্থা করে দেয়— তাহলে নতুন ঋণ পরিশোধে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। একইসঙ্গে ব্যাংকগুলোর দেওয়া আগের ঋণ পরিশোধেও একই প্রচেষ্টা থাকবে।"
আগস্টের পর থেকে নেই রপ্তানির কার্যাদেশ
বেক্সিমকো লিমিটেড এর এমডি ওসমান কায়সার চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, "আগস্ট পরবর্তী মাসগুলোতে কোম্পানিগুলোতে কোন কাজ হয়নি, রপ্তানিও হয়নি। কিন্তু শ্রমিকদের বেতন বাবদ প্রতিমাসে ৮০-১২০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। তখন থেকে জনতা ব্যাংক ও সরকার শ্রমিকদের বেতন হিসেবে ২৫০ কোটি টাকা দিয়েছে। বেক্সিমকো নিজস্ব তহবিল থেকেও ৩০০ কোটি টাকা বেতন দিয়েছে, যা কারখানাগুলোর কোনো কাজে লাগেনি। কারণ, ব্যবসা পরিচালনার জন্য যে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি সুবিধা দরকার, তা দেওয়া হয়নি।"
বেক্সিমকোর বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমাদের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সঠিক আইন অনুসরণ করে বিচারের ব্যাপারে— প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। আমাদের শুধু আবেদন থাকবে যে, ব্যক্তির দায়ে যেন এত বড় একটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করে ফেলা না হয়।"
নিশ্চয়ই ভুল বা অনিয়ম হয়েছে
বেক্সিমকো গ্রুপ সম্পর্কে জনগণের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টির কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ''নিশ্চয়ই আমাদের কোন ভুল বা অনিয়ম হয়েছে। কেননা, ৮০ বা ৯০ এর দশকে দেশের শিক্ষিত তরুণরা বেক্সিমকোতে কাজ করতে পারাকে সৌভাগ্য মনে করতো। এই ব্যবসায়ী গ্রুপের উদ্যোক্তাদের হাত ধরে আমাদের দেশের বেসরকারিখাতের অগ্রগতির সূচনা হওয়া সত্তবেও—আমাদের একটি বিরূপ ও অসম্মানজনক পরিণতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এটা নিশ্চয়ই আমাদের ব্যর্থতার ফল। তবে আমাদের কারখানাগুলোর অবকাঠামো, কর্মসংস্থান, বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ, জাতীয় উৎপাদনে অংশীদারিত্ব সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেলে আমাদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পুনঃবিবেচনার সুযোগ তৈরি হবে।"
শ্রম উপদেষ্টার বক্তব্য
বেক্সিমকো গ্রুপের দায়দেনা, শ্রমিকদের কর্মকাণ্ড ও সরকারের অবস্থান তুলে ধরে শ্রম উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, গত ২১ জানুয়ারি বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কর্মচারী ও শ্রমিকরা গাজীপুরের শ্রীপুরের মায়ানগর মাঠে জমায়েত হয়ে লে-অফ প্রত্যাহার করে ফ্যাক্টরিসমূহ খুলে দেওয়ার দাবি জানান। তারা ঘোষণা দেন, ২২ জানুয়ারি বিকেল ৩টার মধ্যে কারখানাগুলো খুলে না দিলে— ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধসহ শাটডাউন কর্মসূচি পালন করা হবে। কিন্তু, তারা অগ্নিসংযোগের মত কর্মকাণ্ড করেছে। যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়, এবং এদের সকলকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।
তিনি জানান, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের মোট ৩২ কারখানার মধ্যে ১৬টির কোনো অস্তিত্ব নেই, কিন্তু উক্ত ১৬টি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। ১২টি কারখানার ব্যবস্থাপক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক লে-অফ করা হয়েছে, যা সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত নয়। মাত্র তিনটি ফ্যাক্টরি বর্তমানে চালু রয়েছে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আরও জানান, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ৩২টি কারখানার বিপরীতে ২৯ হাজার ৯২৫ কোটি টাকাসহ— বেক্সিমকো লিমিটেড এর মোট ব্যাংক ঋণ বর্তমানে ৪০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এর মধ্যে শুধুমাত্র জনতা ব্যাংকের পাওনা ২৩ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা।
বেক্সিমকো লিমিটেডের কর্মীদের দাবি
গতকাল ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলন করেন বেক্সিমকোর শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তারা। তারা রপ্তানি বাণিজ্য শুরুর ও বিদেশিদের কার্যাদেশ প্রাপ্তির সুবিধার্থে ব্যাংকিং কার্যক্রম ও ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলার অনুমতি প্রদানের দাবি জানান।
একইসঙ্গে কারখানা ও ব্যবসা চালু রেখে বকেয়া বেতন ও কোম্পানির দায়-দেনা পরিশোধের সুযোগ দিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।
বেক্সিমকো গার্মেন্ট ডিভিশনের হেড অব পারসোনাল অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সৈয়দ মো. এনাম উল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে এই তিনটি দাবি সম্বলিত লিখিত বিবৃতি পড়ে শোনান।
বেক্সিমকো গার্মেন্ট ডিভিশনের প্রশাসন বিভাগের প্রধান আবদুল কাইয়ুম বলেন, সব প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দিলেও সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা আসবে। কিন্তু, কর্মী ছাঁটাইসহ অন্যান্য দেনা মেটাতে ২২ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের অভ্যন্তরীণ এক নিরীক্ষায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, মালিকরা ঋণ কি করেছে— আমরা এটা জানি না। এলসি খোলার অনুমতি দেওয়া হোক। কারখানা চলুক। যে এক্সপোর্ট হবে, সেখান থেকে খরচ ও শ্রমিকদের বেতন ভাতা দিয়ে— লাভের টাকা প্রয়োজনে ব্যাংক রেখে দিক, কিন্তু কারখানা খুলে দেওয়া হোক।