নোভারটিস ও রেডিয়েন্টের শেয়ার হস্তান্তরে অর্থ পাচারের অভিযোগ, তদন্তে দুদক
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি নোভারটিস বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ শেয়ার (৯ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬ শেয়ার) ২৩০ কোটি টাকায় রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের কাছে হস্তান্তরের মাধ্যমে অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
হাইকোর্টকে এ বিষয়ে জানানো হলে, দুই কোম্পানির মধ্যে শেয়ার হস্তান্তর প্রক্রিয়া স্থগিত চেয়ে করা রিট আবেদনের ওপর শুনানি এক মাসের জন্য মুলতবি রাখা হয়। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) এ বিষয়ে শুনানির পর বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
রিটের পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার নূর উস সাদিক চৌধুরী আদালতের আদেশের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান। এর আগে সোমবার রিট আবেদনটি করেন অ্যাডভোকেট ইকতান্দার হোসাইন হাওলাদার। তার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার নূর উস সাদিক চৌধুরী।
রিটে অর্থ সচিব, দুদক চেয়ারম্যান, শিল্প সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ ১০ জনকে বিবাদী করা হয়েছে। রিটে রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড কর্তৃক নোভারটিসের শেয়ার অধিগ্রহণে অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তের জন্য নির্দেশনা চাওয়ার পাশাপাশি শেয়ার হস্তান্তরের সকল কার্যক্রম স্থগিত রাখার আবেদন জানানো হয় রিটে।
শুনানির সময় দুদকের আইনজীবী আদালতকে জানান, তারা এক মাসের মধ্যে বিষয়টি তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেবেন। এতে আদালত সন্তুষ্ট হয়ে দুদকের রিপোর্ট জমা দেওয়া পর্যন্ত এক মাসের জন্য মামলাটি মুলতবি রাখার নির্দেশ দেন।
আইনজীবী ইকতান্দার হোসাইন হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, নোভারটিস বাংলাদেশ ও রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার হস্তান্তরের বিষয়ে দুদকের আইনজীবীর এক মাসের মধ্যে তদন্তের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আদালত মামলাটি মুলতবি রেখেছেন।
এর আগে নোভারটিসের ২৩০ কোটি টাকার শেয়ার হস্তান্তর প্রতিরোধে গত ৮ জানুয়ারি সংশ্লিষ্টদের লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। নোভারটিস বাংলাদেশ লিমিটেডের ২৩০ কোটি টাকার প্রায় ১০ লাখ শেয়ার রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের কাছে হস্তান্তর স্থগিত চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরসহ সংশ্লিষ্টদের লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়।
এই শেয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের বৈদেশিক বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট।
নোটিশে বলা হয়েছে, নোভারটিস বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ শেয়ার (৯ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬ শেয়ার) ২৩০ কোটি টাকায় রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের মাধ্যমে বিক্রয়ের প্রস্তাব চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে।
নোটিসে বলা হয়, ইতঃপূর্বে এই ক্রয়-বিক্রয় প্রক্রিয়া বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের কর্নধার এবং শেখ হাসিনা সরকারের বৈদেশিক বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল।
তবে ৫ আগস্টের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কম পরিচিত রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি চলমান রয়েছে।
নোটিসে আরও বলা হয়, সালমান এফ রহমানের অনুপস্থিতিতে, রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল বর্তমানে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের ব্যবসায়িক স্বার্থ দেখভাল করছেন।
নোটিশে দাবি করা হয়েছে, শেয়ারের মূল্য নির্ধারণে বাজার মূল্য বিবেচনায় না রেখে গোপন চুক্তির ভিত্তিতে অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে প্রকৃত বাজার মূল্যে ব্যতিরেকে অতিরিক্ত মূল্য পরিশোধ করলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশ থেকে চলে যাবে, যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ইচ্ছাকৃতভাবে শেয়ারের অতিরিক্ত মূল্য প্রদর্শন করে বৈদেশিক মুদ্রা পাচারের চেষ্টা করছে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে পরিচিত। তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে হারিয়ে ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঝিনাইদহ-২ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এছাড়া, গত অক্টোবরে হওয়া সর্বশেষ বাফুফে নির্বাচনে নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল সহ-সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন।