রমজানে কন্টেইনার ডেলিভারি স্বাভাবিক রাখতে চট্টগ্রাম বন্দরে স্টোর রেন্ট বাড়ানো হচ্ছে চারগুণ
দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের ডেলিভারি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে আগামী ১৫ মার্চ থেকে নির্ধারিত হারের চেয়ে চারগুণ স্টোর রেন্ট জারি করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। জাহাজ থেকে পণ্য নামার ২১ দিন পর থেকে এই চারগুণ স্টোর রেন্ট কার্যকর হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, রমজান মাসকে কেন্দ্র করে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি পণ্য আমদানি হয়। আর এই সময়ে কন্টেইনার ডেলিভারিতে ধীরগতি লক্ষ করা যায়। ফলে বন্দর ইয়ার্ডে কন্টেইনার জটের সৃষ্টি হয়। এ বছর যাতে এই ধরনের পরিস্থিতি না ঘটে তাই এফসিএল (ফুল কন্টেইনার লোড) কন্টেইনারের ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আমদানিকারক, সিএন্ডএফ এজেন্ট, শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ সহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন ও বন্দরের স্টেকহোল্ডার প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ সংক্রান্ত নোটিশ দিয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, জাহাজ থেকে আমদানি পণ্যের কন্টেইনার চার দিন বন্দরের ইয়ার্ডে বিনা ভাড়ায় রাখার সুযোগ পান আমদানিকারকরা। এরপর ২০ ফুট লম্বা সাইজের একটি কন্টেইনারের জন্য প্রথম সপ্তাহে প্রতিদিন ৬ ইউএস ডলার স্টোর রেন্ট গুনতে হয়। তার পরবর্তী সপ্তাহ প্রতিদিন একই সাইজের কন্টেইনারে ১২ ডলার এবং ২১ দিন থেকে প্রতিদিন ২৪ ডলার হিসেবে ভাড়া দিতে হয় আমদানিকারকদের।
৪০ ফুট সাইজের কন্টেইনারের ক্ষেত্রে এর দ্বিগুণ ভাড়া পরিশোধ করতে হয়। যেমন ৪ দিন পর থেকে পরবর্তী ৭ দিন ৪০ ফুট কন্টেইনারে ১২ ডলার, এরপর ২১ দিন পর্যন্ত ২৪ ডলার, ২১ দিন পর থেকে ৪৮ ডলার স্টোর রেন্ট গুনতে হয়।
নতুন এই নিয়ম অনুযায়ী আগামী ১৫ মার্চ এর পর থেকে ইয়ার্ডে কন্টেইনার রাখার মেয়াদ ২০ দিন পার হলে ২১তম দিন থেকে ২০ ফুট কন্টেইনারে প্রতিদিন ৯৬ ডলার স্টোর রেন্ট গুনতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রমজানকে কেন্দ্র করে আমদানিকারকরা ভোগ্যপণ্য আমদানি করেন। অধিকাংশ আমদানিকারকের নিজস্ব গুদাম না থাকায় তারা বন্দরের ইয়ার্ডকে গুদাম হিসেবে ব্যবহার করতে চান। পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেলে সুযোগ বুঝে পণ্য খালাস নেন তারা। এক্ষেত্রে স্টোর রেন্ট বাবদ জরিমানা গুনতে হলেও বাড়তি দামে পণ্য বিক্রি করে ক্ষতি পুষিয়ে নেন তারা। প্রতিবছর ব্যবসায়ীদের এমন প্রবণতায় রোজার মৌসুমে বন্দর ইয়ার্ডে কন্টেইনারের স্তুপ জমে যায়। বাজারে পণ্যের কৃত্রিম সংকটের পাশাপাশি বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রমে জটিলতার সৃষ্টি হয়।
এমন বাস্তবতায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আগেভাগেই চারগুণ জরিমানার সিদ্ধান্ত নেয়। বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সিদ্ধান্তের কারণে এবারের রমজানে বন্দর ইয়ার্ডে কন্টেইনার স্তুপ থাকবে না।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, "বন্দর কর্তৃপক্ষের নোটিশ আমরা পেয়েছি। আমদানিকারকরা কিভাবে ২১ দিন পর্যন্ত পণ্য ডেলিভারি নেয় না আমার বোধগম্য নয়। আশা করি বন্দরের কার্যক্রম সচল রাখতে আমদানিকারকরা দ্রুত কন্টেইনার ডেলিভারি নেবেন।"
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, বন্দরে কন্টেইনার রাখার সক্ষমতা ৪৯ হাজার ১৮ টিইইউএস (টুয়েন্টি ফুট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিট)। পণ্য ওঠানামা স্বাভাবিক রাখতে সক্ষমতার ১৫ ভাগ খালি রাখতে হয়। সেই হিসেবে বন্দর ইয়ার্ডে ৪১ হাজার ৬৬৫ টিইউএস কন্টেইনার জমা থাকলে সেটি স্বাভাবিক হিসেবে বিবেচিত হয়। ১১ মার্চ সকাল আটটা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে দেখা যায় ৩২ হাজার ৭০৮ টিইইউএস কন্টেইনার।
স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার কন্টেইনার ডেলিভারি হয়। ১১ মার্চ সকাল আটটা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় কন্টেইনার ডেলিভারি হয় ৩ হাজার ৫১০টি। ১০ মার্চ ডেলিভারি হয়েছিলো ৩ হাজার ৭৩১টি।
বন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, "সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর হতে কন্টেইনার ডেলিভারিতে অত্যন্ত ধীরগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। কিছু আমদানিকারক তাদের আমদানিকৃত কন্টেইনার ২১ দিন বা তারও অধিক সময় ছাড় না দিয়ে বন্দর অভ্যন্তরে সংরক্ষণ করছেন। এতে বন্দরের স্বাভাবিক অপারেশনাল কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে। বন্দরের স্বাভাবিক অপারেশনাল কার্যক্রম সচল রাখতে আমদানিকৃত এফসিএল কন্টেইনারসমূহ দ্রুত ডেলিভারি দেওয়ার জন্য সকলকে অনুরোধ করা যাচ্ছে। অন্যথায় কমন ল্যান্ডিং ডেটের পর ২১তম দিন থেকে প্রযোজ্য স্ল্যাবের স্বাভাবিক ভাড়ার উপর চারগুণ হারে স্টোররেন্ট আরোপে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হবে। আগামী ১৫ মার্চ থেকে তা কার্যকর হবে।"
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোঃ ওমর ফারুক টিবিএসকে বলেন, ডেলিভারি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে চারগুণ স্টোর রেন্ট আদায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে ডেলিভারি কার্যক্রমের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হলে সিদ্ধান্তটি পরবর্তীতে পুনর্বিবেচনা করা হবে।