চট্টগ্রাম বন্দর: দীর্ঘ ছুটিতে অপেক্ষামান জাহাজের সংখ্যা বাড়ছে
শ্রম দিবস ও ঈদ মিলে টানা আটদিন বন্ধ থাকার পর আজ শনিবার খুলেছে বেশিরভাগ শিল্প-কারখানা। এদিকে কারখানা বন্ধ থাকায় আমদানিকারকরা জাহাজ থেকে পণ্য খালাস বন্ধ রেখেছেন। এ কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বহিনোঙ্গরে বাড়ছে পণ্যভর্তি কনটেইনারবাহী জাহাজের সংখ্যা।
আমদানিকারকরা আন্তরিক হলে আগামী সপ্তাহের মধ্যে এই জট থাকবে না বলে দাবি করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বন্দর ও শিপিং এজেন্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, "জট হলে জাহাজ জেটিতে ভিড়ানোর জন্য অপেক্ষার সময় বেড়ে যায়। তাতে পণ্য হাতে পেতে দেরি হয়। ঈদের পর এখনো কারখানা খোলেনি, ফলে এখনই খুব সমস্যা হচ্ছে না। তবে জট দ্রুত না কমলে পণ্য হাতে পেতে দেরি হওয়ার প্রভাব পড়বে শিল্প খাতে।"
ঈদুল ফিতরের ছুটিতে শুধুমাত্র ঈদের দিন আট ঘণ্টা বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। অন্য সময় সচল ছিল বন্দরের কার্যক্রম। কিন্তু চট্টগ্রামের এক হাজার ৪৬টি ছোট-বড় কারখানার লাখ লাখ শ্রমিক এখন ঈদের ছুটিতে আছে। এই অবস্থায় কারখানা মালিকরাও তাদের আমদানি পণ্যের খালাস কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন।
শনিবার কারখানা খুললেও রোববারে জাহাজ থেকে পণ্যগুলো খালাস করা শুরু করবেন অধিকাংশ কারখানা মালিক। প্রতিবছর ঈদের এ সময়ে জাহাজজট তৈরি হয় এবং এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে দু সপ্তাহেরও বেশি সময় লাগে।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যমতে, আমদানিকারকরা পণ্য না নেওয়ায় বন্দরের বহিনোঙ্গরে জাহাজের সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিনই দু-তিনটি করে জাহাজ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছে। এখন পর্যন্ত বহিনোঙ্গরে ২০টি জাহাজ খালাসের অপেক্ষায় আছে। শনিবার পর্যন্ত এ জাহাজের সারি আরো দীর্ঘ হবে।
বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, "আমাদের শ্রমিকরা সারাবছর পরিবার পরিজন থেকে দূরে থেকে শ্রম দিয়ে আমাদের কারখানা আর দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখেন। তাদেরকেও অবসর সময় কাটানোর সুযোগ দিতে হবে।"
"শনিবার কারখানা খুললেই আমাদের আমদানি করা কাঁচামাল লাগবে। কাজেই আমাদের প্রয়োজনেই দ্রুত পণ্য খালাস করতে হবে। আশা করছি, কোনো ধরনের সমস্যা বা জটিলতা তৈরি হবে না। দুই সপ্তাহের মধ্যেই জাহাজজট কমে যাবে।"
শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, "কারখানা বন্ধ থাকায় প্রতিবছর ঈদের সময় বহিনোঙ্গরে জাহাজের সংখ্যা বাড়ে। আর জাহাজ আসাও তো বন্ধ রাখা যাবে না। আশা করছি, পণ্য আমদানিকারকরা দ্রুত খালাসের ব্যবস্থা করলে দু সপ্তাহের মধ্যে স্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হবে।"
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, কারখানাগুলো বন্ধ থাকায় বন্দরের বহিনোঙ্গরে জাহাজগুলো অপেক্ষায় আছে। জাহাজের সংখ্যা বাড়লেও এটা খুব সাময়িক। কারখানা খুললেই ব্যবসায়ীরা পণ্য নিয়ে যাবেন।
"আশা করছি আমদানিকারকরা দ্রুত সময়ে পণ্য খালাস করে সহযোগিতা করলে কোন ধরনের বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি হবে না," বলেন তিনি।
করোনার পর বিশ্বজুড়ে বড় বন্দরগুলো জটে পড়লেও ব্যতিক্রম ছিল চট্টগ্রাম বন্দর। পণ্য আমদানি-রপ্তানি বাড়লেও নানা পদক্ষেপ নেওয়ায় এই বন্দর জটমুক্ত ছিল। এখনো চীনের একাধিক বন্দরসহ বিশ্বের অনেক বন্দরে জাহাজজট রয়েছে।
মেরিটাইম খাতের পরামর্শক সংস্থা উইন্ডওয়ার্ড সর্বশেষ গত ১৯ এপ্রিল যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে বিশ্বের বন্দরগুলোর সামনে ১ হাজার ৮৬২টি কনটেইনার জাহাজে জেটিতে ভেড়ানোর অপেক্ষায়। এই সংখ্যা বিশ্বের মোট কনটেইনার জাহাজের ২০ শতাংশ। এখন সবচেয়ে বেশি জট চীনের বন্দরগুলোতে।
চট্টগ্রাম ও মোংলা এই দুই বন্দর দিয়ে সমুদ্রপথে কনটেইনারে পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম দিয়ে ৯৮ শতাংশ কনটেইনার আনা-নেওয়া হয়। মূলধনী যন্ত্রপাতি থেকে বাণিজ্যিক পণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল কনটেইনারে আনা হয়। একইভাবে রপ্তানি পণ্য নেওয়া হয় কনটেইনারে।