বাকি কেনার চাহিদা বাড়ছে, দোকানিদের দুর্দশা
হাইলাইটস:
- অতি প্রয়োজনীয় পণ্যের বাইরে পণ্য কিনছেন না ক্রেতারা
- বাকিতে পণ্য কেনার পরিমাণ বাড়ছে
- কিস্তিতে টাকা পরিশোধ বেড়েছে
- অনেক দোকানি বাকি বন্ধ করে দিচ্ছে
- দোকানিরা বাকিতে পণ্য নিতে পারতো, এখন নগদ ছাড়া কোম্পানিগুলো পণ্য দিচ্ছে না
ভোগ্যপণ্যের টানা দর বৃদ্ধি বিক্রেতা ও ক্রেতাদের মধ্যে টানা-পোড়ন সৃষ্টি করেছে। ক্রেতারা বাকিতে পণ্য কিনতে চাইছেন, বিক্রেতারাও বাকিতে পণ্য বিক্রি কমিয়ে আনার চেষ্টা করছেন, বাকি দেওয়া একেবারেই বন্ধ করে দিচ্ছেন অনেক বিক্রেতা।
স্থানীয় বাজারে সব ধরনের খাদ্য, নিত্য ব্যবহৃত পণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে ভোক্তার কেনাকাটার ধরন পাল্টে ফেলছে। অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাইরে কেনাকাটা কমিয়ে দিচ্ছেন, কিছু নতুন ক্রেতা বাকি নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
অন্যদিকে বিক্রেতারাও বাকিতে পণ্য বিক্রি কমিয়ে আনার চেষ্টা করছেন, তবে পুরনো ক্রেতাদের জন্য বন্ধ করতে পারছেন না। কোনো কোনো বিক্রেতা আবার পুরনো বাকি তুলতে না পেরে বাকি দেওয়া একেবারেই বন্ধ করে দিচ্ছেন।
ঢাকা শহরের কারওয়ানবাজার, রামপুরা, বাড্ডা, নিউমার্কেট ও মগবাজারের ২৫ টির অধিক খুচরা দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন কিছু ক্রেতা খুব হিসেব করে পণ্য কিনছেন। বড় সাবানের বদলে ছোট সাবান, কাপড় ধোয়ার গুড়া সাবানের বড় প্যাকের বদলে ছোট প্যাকেট, শ্যাম্পুর বোতলের বদলে কিনছেন মিনিপ্যাক, সয়াবিন তেল কিনছেন কম পরিমাণে। চাল, তেল, চিনি, আটা, ময়দা, পেঁয়াজ, রসুনসহ নিত্যপণ্য যেটুকু না কিনলেই নয় সেটুকুই কিনছেন।
বাড্ডার মাহতাব স্টোরের মুদি দোকানি মাহতাব হোসেন টিবিএসকে বলেন, "১০-১৫ জন চাকরিজীবি রয়েছে যারা রাতে বাসায় ফেরার সময় প্রতিদিনই কিছু না কিছু বাজার নেন। চাল-ডাল বা অন্য অন্য পন্য কেনার পাশাপাশি হয়তো আইসক্রিম, কোল্ড ড্রিংকস, চকলেট, বিস্কুট, চানাচুর সহ বিভিন্ন স্ন্যাকস আইটেম থেকে কিছু একটা কিনে নিত।
ইদানিং খেয়াল করলাম, এদের মধ্য থেকে দুই তিনজন ঠিক যেটুকু দরকার তার বাইরে কিছুই কিনছেন না। তেল, পেঁয়াজ রসুনের মত পণ্য কেনার ক্ষেত্রেও তারা হিসেব করে কিনছেন।"
মগবাজার আমবাগান এলাকার মুদি দোকানি মো. আয়াতুল্লাহ টিবিএসকে বলেন, "দাম বৃদ্ধির পর থেকেই দোকানে বিক্রি কমে যাচ্ছে। আগে যে ৫ লিটার তেল কিনতো সে এখন এক লিটার নিচ্ছে। আগের যারা বাকি নিয়েছেন তারা টাকা শোধ করতে দেরি করছে, যে কারণে নতুন বাকি চাইলে আমরা তাদেরকে ফিরিয়ে দিচ্ছি। কারণ এই পরিস্থিতিতে আমাদেরও পুঁজি লাগছে বেশি, কিন্তু লাভ বাড়েনি।"
কারওয়ানবাজার আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির বিক্রেতা মো. আব্দুল আওয়াল টিবিএসকে বলেন, "বোরো মৌসুমে চালের দাম কমে, এবারে বাড়ছে। এতে করে কিছু ক্রেতা চাল কেনাও কমিয়ে দিয়েছে। আবার কিছু ক্রেতা আছে করোনার সময় বাকি নিয়েছে, তাদের টাকাটা উঠাতে পারছি না। যে কারণে নতুন করে বাকি বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছি।"
নিউমার্কেট কাচাবাজারের মুরগি বিক্রেতা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, "বিক্রি কমে গেছে। যে ক্রেতা আগে ৫টা মুরগি একসঙ্গে কিনতো সে এখন ১ টা মুরগি নিচ্ছে। অনেক ক্রেতা যারা বাকিতে মুরগি নিয়েছে তাদের অনেকে দোকানেই আসছে না।"
দোকানিরা জানান, নতুন কিছু ক্রেতা বাকিতে পণ্য কিনতে চাচ্ছে, পুরনো যারা বাকিতে পণ্য নিত তাদের মধ্যে কেউ কেউ টাকা পরিশোধে দেরি করছে, কিস্তিুতে দিচ্ছে। এ অবস্থার মধ্যে দোকানিরাও বাকির পরিমাণ কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে।
দোকানিরা জানান, নতুন ক্রেতাদের বাকি দেওয়ার ক্ষেত্রে হিসেব করছেন তারা। যদি বুঝতে পারছেন টাকা দিতে সমস্যা হতে পারে তখন তাদেরকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। আবার পুরনো যারা নিয়মিত বাকি নিত তাদেরও বাকির পরিমাণ কমিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। কারণ হিসাবে বলেন, যে সব কোম্পানি আগে বাকিতে পণ্য দিয়ে যেত, পরে টাকা নিত তারাও এখন নগদ টাকা ছাড়া পণ্য দিচ্ছে না।
মগবাজারের প্রীতি জেনারেল স্টোরে বাজার করতে এসে বেসরকারি চাকরিজীবি মাহবুব আলম টিবিএসকে বলেন, "তিন মাসে আগে এই দোকান থেকে বাকিতে দেড় হাজার টাকার পণ্য কিনেছিলেন। কিন্তু এখন সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচটা এমনভাবে বেড়েছে যে কিছু টাকা জমিয়ে বাকিটা পরিশোধের সুযোগ পাচ্ছেন না।"