এখনও বন উজাড় করছে যেসব দেশ
২০৩০ সালের মধ্যে বনভূমি নিধনের অবসান ঘটানো এবং নতুনভাবে বনায়নের লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন বিশ্ব নেতারা। গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত কপ-২৬ জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে এ প্রতিশ্রুতি নেন তারা।
বর্তমানে কত খারাপ পরিস্থিতিতে রয়েছে বন উজাড়?
বনভূমি বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে নেয়। কার্বন ডাই-অক্সাইডই বৈশ্বিক উষ্ণায়নের অন্যতম বড় প্রভাবক। ফলে, গাছ কাটার বিরূপ প্রভাব পড়ে জলবায়ুতে।
জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯০ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ১০০ কোটি একর বন ধ্বংস করা হয়েছে। বনভূমি ধ্বংসের একটি প্রধান কারণ কৃষি।
তবে, বনাঞ্চল রক্ষার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০২০ সালের মধ্যে বনভূমি নিধন অর্ধেকে নামিয়ে আনা, এবং ২০৩০ এর মধ্যে তা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার বিষয়ে ২০১৪ সালে একটি চুক্তি ঘোষণা করে জাতিসংঘ।
এরপর, ২০১৭ সালে এই বিষয়ক আরেকটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী বনভূমি ৩ শতাংশ বৃদ্ধির লক্ষ্য হাতে নেওয়া হয়।
কিন্তু, এসকল চুক্তির পরেও এই পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। গত এক দশকে বার্ষিক ৪৭ লাখ হেক্টর বন ধ্বংস হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্রাজিল, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র এবং ইন্দোনেশিয়া।
ব্রাজিল: অবৈধ লগিং অব্যাহত
আমাজন রেইনফরেস্টের প্রায় ৬০ শতাংশই ব্রাজিলে অবস্থিত। দেশটির ন্যাশনাল স্পেস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (আইএনপিই) অনুসারে, ২০০৪ সাল থেকে বন উজাড় কমে এলেও সম্প্রতি তা আবারও বেড়েছে। ২০২০ সালে তারা জানায়, এক দশকের মধ্যে দেশটিতে বন উজাড়ের হার ছিল সর্বোচ্চ।
এ বিষয়ে জাতিসংঘকে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো বলেন, ২০২০ সালের তুলনায় চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত বন উজাড়ের পরিমাণ কম। কিন্তু, তিনি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বন উজাড়ের হার আগের তুলনায় বেড়েছে।
এর আগে, আমাজনে কৃষিকাজ ও খনি উত্তোলনে উৎসাহ দেওয়ার জন্য সমালোচিত হন প্রেসিডেন্ট বলসোনারো। পরিবেশ আইন ভঙ্গকারী কৃষক এবং লগারদের বিচারের দায়িত্বে থাকা সরকারি সংস্থাগুলোর তহবিল কমিয়ে দেন তিনি। অবৈধ কাঠ কাটার জন্য নির্ধারিত জরিমানা ২০২০ সালে কমেছে ২০ শতাংশ।
সঠিক পরিসংখ্যান না পাওয়া গেলেও সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায়, ব্রাজিলে বন উজাড় এবং আবাসস্থল ধ্বংসের ৯৪ শতাংশ পর্যন্ত অবৈধ হতে পারে।
তবে, বন উজাড়ে ব্রাজিলের পাশাপাশি দায়ী এর প্রতিবেশী দেশগুলোও। গত বছর বলিভিয়া প্রায় তিন লাখ হেক্টর গ্রীষ্মমন্ডলীয় বন হারিয়েছে।
কঙ্গো বেসিন: কৃষিকাজ এবং খনি উত্তোলন
কঙ্গো ফরেস্ট বেসিন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেইনফরেস্ট। কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে এর অর্ধেকের বেশি অবস্থিত।
এনভায়রনমেন্টাল ক্যাম্পেইন গ্রুপ গ্রিনপিসের মতে, বড় এবং ছোট কোম্পানিগুলো অবৈধভাবে গাছ কাটার ফলে বন উজাড় হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন কঙ্গো থেকে অবৈধ কাঠ আমদানি নিষিদ্ধ করার পরেও তা দেশের বাইরে পাচার হচ্ছে। বন উজাড়ের অন্যান্য হুমকির মধ্যে রয়েছে ক্ষুদ্র পরিসরে জীবিকা নির্বাহের কৃষিকাজ করা, কাঠকয়লা ও জ্বালানী পরিষ্কার করা, নগর সম্প্রসারণ এবং খনির উত্তোলন।
গত মাসে বন কাটার জন্য বরাদ্দকৃত কিছু ইজারার একটি সার্ভে করার নির্দেশ দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স শিসেকেদি। এর মধ্যে একটি বন ১৪ লাখ হেক্টরেরও বেশি জায়গাজুড়ে অবস্থিত।
ইন্দোনেশিয়া: পাম তেলের উদ্যান
গত দুই দশক ধরে বনভূমি ধ্বংসকারী বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি দেশের মধ্যে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া।
গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচের দেওয়া তথ্য অনুসারে, ২০০২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে দেশটি ৯৭ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর বন হারিয়েছে।
২০১৪ সালে তেল পাম বাগানের জন্য জমি পরিষ্কার করার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেন ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি জোকো উইডোডো। দেশটিতে বন উজাড়ের প্রধান কারণ এই পাম তেলের উদ্যানগুলো।
সরকারি তথ্য অনুসারে, পামের বাগানে তেলের জন্য প্রায় ৮০ শতাংশ বনে আগুন লাগানো হয়। তবে, ২০২০ সালে বন উজাড়ের হার রেকর্ড পরিমাণে কমে আসে।
২০১৯ সালে, বন্যভূমি বিষয়ক নতুন ছাড়পত্রের ওপর তিন বছরের স্থগিতাদেশ জারি করেন রাষ্ট্রপতি উইডোডো। প্রায় ৬ কোটি ৬০ লাখ হেক্টর প্রাইমারি ফরেস্ট এবং পিটল্যান্ড এই ছাড়পত্রের আওতাধীন। এ বছর সেই নিষেধাজ্ঞা অনির্দিষ্টকালের জন্য বাড়ানো হয়েছে।
- সূত্র: বিবিসি