করোনার সময়ে মাস্ক পরে গণবিয়ে
করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক দুনিয়াজুড়ে দাবড়ে বেড়াচ্ছে। তাই বলে জীবন তো থেমে থাকবে না? থেমে থাকবে না বিয়েও! তবু নতুন জীবন শুরুর আগে, সতর্ক না থেকে উপায় নেই। তাই আজ মাস্ক পরে এক গণবিয়েতে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের জীবনসঙ্গী গ্রহণ করেছেন হাজারও বর-কনে। দক্ষিণ কোরিয়ার গাপিয়েয়োং অঞ্চলের চেয়োংসিম পিস ওয়ার্ল্ড সেন্টারের উনিফিকেশন চার্চে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই আয়োজন।
৩৫ বছর বয়সী দক্ষিণ কোরিয়ান বর লি নোন-সেয়োক জানান, ‘এমন দারুণ এক গণবিয়ের অংশ হতে পেরে আমি খুব খুশি।‘ নতুন জীবনে করোনা ভাইরাসকে সংক্রামিত করার কোনো সুযোগ না দিতে, বিয়েতে স্যুটের সঙ্গে মিলিয়ে কালো মাস্ক পরেছেন তিনি। তার কনেও সাদা পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে মুখে পরেছিলেন সাদা মাস্ক।
রাজধানী সিওলের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের এই গণবিয়েতে জড়ো হয়েছিলেন ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ। এর মধ্যে বিয়ে করেছেন ৬ হাজার বর-কনে; বাকিরা ছিলেন অতিথি ও আত্মীয়-স্বজন।
গণবিয়ে আয়োজনে দক্ষিণ কোরিয়ান গির্জাটির ভালোই নাম-ডাক আছে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে আরও অনেক পাবলিক ইভেন্টের মতো এ আয়োজনও খানিকটা ধূসরতা ভর করেছে। তাই বিয়ের আগে গির্জার কর্মীরা হ্যান্ড স্যানিটাইজার হাতে মেখে, সার্জিক্যাল মাস্ক হাতে পরে, প্রতিটি বর-কনের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে নিয়েছেন।
করোনার চোখ রাঙানি সত্ত্বেও বিয়ের অনুষ্ঠানে অবশ্য মাস্কে নিজেদের মুখ ঢাকতে রাজি হননি বেশির ভাগ বর-কনেই। এ বিষয়টি ইচ্ছে করেই এড়িয়ে গেছেন ইউনিফিকেশন চার্চের প্রতিষ্ঠাতার স্ত্রী এবং ‘ট্রু মাদার’ নামে খ্যাত হাক জা হান মুন।
বিয়েতে শুধু দক্ষিণ কোরিয়ানরাই নন, পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকেও অনেকেই এসেছিলেন। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বেনিন থেকে আসা কনে নগুয়েসান মাইয়েনুগুয়েট ওয়েলহেট বলেন, ‘স্বামীকে নিজের সুন্দর রূপটা দেখাতেই আমি মাস্ক পরিনি।'
অনুষ্ঠানটি দারুণভাবে শেষ করার দাবী করছেন গির্জা কর্তৃপক্ষ। এর প্রতিষ্ঠাতা সান মিয়ুং মুনের শততম জন্মদিন হওয়ার আজকের আয়োজনটি তাদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ১৯৫৪ সালে গির্জাটি প্রতিষ্ঠা করার পর, ১৯৬১ সাল থেকে এখানে গণবিয়ের আয়োজন ও সেগুলোর তদারকি করে আসছিলেন মুন। ২০১২ সালে তার মৃত্যুর পর থেকে ‘ট্রু মাদার’ই এই আয়োজন সামলাচ্ছেন। এখানে একদিকে যেমন পরস্পর চেনা-জানা বর-কনের বিয়ে হয়, আবার এমন কিছু নবদম্পতিও নিজেদের যৌথজীবনের যাত্রা শুরু করেন, যারা এর আগে একে অন্যকে চিনতেন না, এমনকি একে অন্যের ভাষাও বোঝেন না!