কারাবাখে আজারবাইজানের জয়, মস্কোর মধ্যস্ততায় শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত
আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ন রাশিয়া এবং আজারবাইজানের সঙ্গে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের কথা জানিয়েছেন। তিনি একে 'অত্যন্ত বেদনাদায়ক' এক বাস্তবতা বলে উল্লেখ করেন।
চুক্তির মাধ্যমে আর্মেনিয় সমর্থিত কারাবাখের আঞ্চলিক সরকার ১৯৯৪ সালের যুদ্ধে দখল করা আজারবাইজানি ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ ত্যাগ করবে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অন্যান্য অঞ্চল থেকেও সরে যাবে আর্মেনিয় বাহিনী।
আজ মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) এই ঘোষণার পরপরই আর্মেনিয়া জুড়ে চলছে তীব্র বিক্ষোভ সমাবেশ। বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্টে প্রবেশ করে স্পিকারকে মারপিট করাসহ প্রধানমন্ত্রীর অফিসও ভাংচুর করে।
মস্কোর মধ্যস্ততায় করা এই সমঝোতার আওতায় নগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলে আজারবাইজানের সঙ্গে লড়াই বন্ধ করবে আর্মেনিয়া। আজেরি বাহিনী ওই অঞ্চলের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর শুসা দখলের মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর পাশিনিয়ন একথা জানান।
গত সোমবার যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি বলে দাবি করেছিলেন আর্মেনিয় প্রধানমন্ত্রী। বলেছিলেন তার সেনাবাহিনী এখনও বিজয় ছিনিয়ে আনতে সক্ষম। তারপর আজ মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) জানালেন, সামরিক পরিস্থিতি গভীর পর্যালোচনা করে সবচেয়ে ভালো উপায় হিসেবেই তিনি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন।
চুক্তির মাধ্যমে আর্মেনিয় সমর্থিত কারাবাখের আঞ্চলিক প্রশাসন ওই ভূখণ্ডের সিংহভাগ অংশে আজারবাইজানের নিয়ন্ত্রণ মেনে নেবে। এই ঘোষণার পরপরই আর্মেনিয়া জুড়ে তীব্র বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্টে প্রবেশ করে স্পিকারকে মারপিট করাসহ প্রধানমন্ত্রীর অফিসও ভাংচুর করে।
আর্মেনিয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ ঘোষণা করেন, 'আর কোনো রক্তপাত ছাড়াই আমাদের সকল ভূখণ্ড ফিরিয়ে দেওয়া হবে।' তিনি জানান, কারাবাখে আজারবাইজানের ভূখণ্ডে আর্মেনিয়ার সকল ধরনের সামরিক তৎপরতাও বন্ধ হয়েছে।
'আমি গর্বের সঙ্গে আজ চুক্তিটিতে স্বাক্ষর করেছি। আজারবাইজানের আপামর জনতাকে এজন্য প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাই। আপনাদের ত্যাগের কারণেই আজ এই বিজয় এসেছে,' আলিয়েভ যোগ করেন।
সমঝোতার আলোকে কারাবাখের সঙ্গে আর্মেনিয়ার যে সীমান্ত রয়েছে সেখানে রুশ শান্তিরক্ষীদের মোতায়েন করার কথা জানিয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। পাশাপাশি দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবন্দি এবং নিহতদের মৃতদেহ বিনিময় হবে। রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা তাস পুতিনের উদ্ধৃতি দিয়ে এসব কথা জানায়।
গত রোববার শুসা দখলের ঘোষণা দিয়েছিলেন আলিয়েভ। এই নগরী ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বের কারণে নগোরানো-কারাবাখের জেরুজালেম নামেও পরিচিত।
তারপর সোমবার আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় একটি ভিডিও প্রকাশ করে। সেখানে শহরটির নানা ভবনের ছাদে আজারবাইজানের জাতীয় পতাকা উড়তে দেখা যায়। এই শহরটি দখলের মাধ্যমে আর্মেনিয় জাতিগোষ্ঠী নিয়ন্ত্রিত রাজধানী স্তেপনাকার্টের কাছাকাছি পৌঁছে যায় আজেরি সেনাবাহিনী।
- সূত্র: বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান, সিএনএন