ঘুষি দিয়ে সাংবাদিকের মুখ ভাঙবেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারো
পৃথিবীর সকল কট্টর ডানপন্থি নেতাই হয়তো মুক্ত গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে। বাক-স্বাধীনতা ও অনিয়মের প্রতিবাদ যেন তাদের অস্তিত্বের প্রতি হুমকি। পরিবেশ সুরক্ষাও তাদের কাছে বিচার্য নয়; স্বল্পস্থায়ী অর্থনৈতিক উত্তরণের বিবেচনায়। অতীত ইতিহাস ও আজকের পৃথিবীর বাস্তবতা সেদিকেই ইঙ্গিত করে।
তাহলে সেই প্রবণতা থেকে বাদ কেন পড়বেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র- জেইর বলসোনারো । বিশেষ করে, আলোচিত সব বৈশিষ্ট্যই যখন বিদ্যমান তার চরিত্রে।
গত রোববার এক সাংবাদিকের মুখ ঘুষি দিয়ে ভেঙ্গে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার কালে, ক্যামেরাবন্দি হয় তার সেই মারমুখী ভঙ্গিমা। এদিন রাজধানী ব্রাসিলিয়ার মেট্রোপলিটন গির্জার সামনে বলসোনারোর সঙ্গে দেখা করেন একদল সাংবাদিক। তাদের মধ্যে ছিলেন স্থানীয় দৈনিক 'ও গ্লোবো'র একজন প্রতিনিধি।
তিনি বলসোনারোর বড় ছেলে সিনেটর ফ্লাভিও বলসোনারোর ঘনিষ্ঠ সহযোগীর বিরুদ্ধে ওঠা এক দুর্নীতির প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্টকে প্রশ্ন করেছিলেন। খবর সিএনএনের।
এনিয়ে চলতি আগস্টের প্রথম দিকে ব্রাজিলীয় সাময়িকী ক্রুসো'তে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি জানায়, ২০১১ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যবর্তী সময়ে ফ্লাভিও'র সাবেক সহযোগী ফ্যাব্রিকো কুয়েইরেজ- ফার্স্টলেডি মিশেল বলসোনারোর ব্যাংক হিসাবে ৭২ হাজার ব্রাজিলীয় রিয়ালের চেক জমা দিয়েছিলেন।
জেইর বলসোনারোকে তার স্ত্রীর অর্থগ্রহণের এমন অভিযোগ নিয়েই প্রশ্ন করেন 'ও গ্লোবো'র সাংবাদিক।
জবাবে ব্রাজিলীয় প্রেসিডেন্ট বলেন, ''ইচ্ছে করছে ঘুষি মেরে তোমার মুখটা ভেঙ্গে দেই।''
এব্যাপারে গত রোববারই প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন। তবে তার মুখপাত্র বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
এদিকে পারিবারিক দুর্নীতির তদন্ত নিয়ে বেশ ভালোই চাপে আছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট। ইতোমধ্যেই তার বড় ছেলের সাবেক সহযোগী- কুয়েইরেজকে নিজ বাসভবনে গৃহবন্দি করে রেখেছে পুলিশ। দুর্নীতির ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা তদন্ত করে দেখছেন ব্রাজিলের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
অবশ্য, বলসোনারো পরিবারের বিরুদ্ধে ওঠা এটাই একমাত্র দুর্নীতির অভিযোগ নয়। একাধিক অভিযোগে শীর্ষ ক্ষমতাধর এ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একাধিক তদন্ত চলমান রয়েছে।
এরমধ্যে ব্রাজিলের আইনসভায় রিও ডি জেনেরিও প্রদেশ থেকে নির্বাচিত হতে নির্বাচন জালিয়াতির অভিযোগও রয়েছে প্রেসিডেন্টের বড় ছেলে ফ্লাবিও'র বিরুদ্ধে।
এছাড়া, তার অপর দুই ছেলে; কার্লো এবং এদুইয়ার্দোর বিরুদ্ধেও ইন্টারনেটে ভুয়া সংবাদ ছড়ানোর দায়ে একটি তদন্ত শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন- ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট।
অন্যান্য অভিযোগের মধ্যে আছে, কুয়েইরেজের বিচারবন্ধে রিও ডি জেনেরিও প্রদেশের কেন্দ্রীয় পুলিশ বিভাগের পরিচালক নিয়োগে বাঁধাদান এবং ওই নিয়োগ বানচালে পরবর্তীতে বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করা।
এ অবস্থায় নিজের প্রতি সমালোচনার বাক্যবাণ আরো তীব্র করলো জেইর বলসোনারো'র সাম্প্রতিক কীর্তি। নিজ সংবাদকর্মীকে দৈহিক নির্যাতনের হুমকি দেওয়ার ঘটনায় ইতোমধ্যেই তীব্র নিন্দা করেছে ব্রাজিলের অন্যতম বৃহৎ গণমাধ্যম 'ও গ্লোবো'।