নতুন মানচিত্রের অনুমোদন ঘিরে নেপাল-ভারত সম্পর্কে টানাপোড়েন
ভারতের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ বেশ কয়েকটি অঞ্চলকে নিজ দেশের সীমানায় অন্তর্ভুক্ত করা একটি নতুন মানচিত্রের অনুমোদন দিয়েছে নেপালি পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ- প্রতিনিধি পরিষদ। ভোটাভুটির পর পরিষদের স্পিকার অনুমোদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে ভারতের সঙ্গে বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে চলে আসা বিরোধে নেপালের দাবি আরও জোরদার হলো। কয়েক দশকের এ সীমান্ত বিরোধ নিয়ে ইতোমধ্যেই পারস্পরিক সম্পর্কে টানাপোড়েনও দেখা দিয়েছে দক্ষিণ এশীয় দুই প্রতিবেশীর মধ্যে।
নেপালের নতুন মানচিত্র অনুমোদন 'প্রত্যাখ্যান' করে একে ঐতিহাসিক ঘটনা এবং দলিল অস্বীকার করে নেওয়া 'স্বেচ্ছাচারী' সিদ্ধান্ত বলে সমালোচনা করেছে ভারত ।
তবে এই ঘটনার বিস্তারিত কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, নেপাল সংবিধান সংশোধন করে নতুন যে মানচিত্রের অনুমোদন দিয়েছে, সেখানে ভারতীয় ভূখণ্ডকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ভারতের অবস্থান আমরা অনেক আগেই পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছি।
পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে অনুমোদনের আগে থেকেই ভারতীয় গণমাধ্যম মানচিত্র প্রণয়ন নিয়ে নেপালের সমালোচনা করেছে। কিন্তু, এসব সমালোচনা আমলে না নিয়ে নিজেদের দাবি প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়েছে নেপাল। খবর রয়টার্সের।
এর আগে ভারত তার উত্তরখণ্ড রাজ্য থেকে তিব্বতের সীমানা পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এক মহাসড়ক নির্মাণ করে। সড়কটির একটি অংশ নির্মাণ করা হয় নেপালের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ লিপুলেখ অঞ্চলে। নেপাল তখন প্রতিবাদ করে বলে, ভারত তাদের দেশের সীমানায় বিনা অনুমতিতে রাস্তাটি নির্মাণ করেছে। নয়াদিল্লি নেপালের এই আপত্তি তখন গ্রাহ্য করেনি।
ভারতের সঙ্গে লিপুলেখ, কালাপানি এবং লিম্পিয়াধুরা অঞ্চল নিয়ে বিরোধ আছে নেপালের। দেশটি এই তিনটি অঞ্চলকে তাদের ভূখণ্ড বলে দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছে।
নেপালের নতুন ম্যাপে এই তিনটি অঞ্চলকে তাই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নতুন ম্যাপের উত্তরপশ্চিম প্রান্তে এক চিলতে নতুন ভূখণ্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এদের।
নেপালি প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার অগ্নিপ্রসাদ সাপকোতা বলেন, পরিষদের মোট ২৭৫ জন সদস্যর মধ্যে ২৫৮ জন অনুমোদনের পক্ষে ভোট দেন। অনুমোদনের জন্য প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের চাইতে যা অনেক বেশি। এছাড়াও, প্রস্তাবটির বিপক্ষে কোনো ভোট পড়েনি।
অবশ্য নিম্নকক্ষের পর নয়া মানচিত্রটি এখন নেপালি পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ জাতীয় পরিষদেও অনুমোদিত হতে হবে। এরপর প্রেসিডেন্ট বিদ্যাপ্রধান ভান্ডারির সম্মতির পর তা হয়ে যাবে দেশটির সংবিধানের অংশ।
এই ব্যাপারে নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং দেশটির শাসকদল নেপালি কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান পুষ্প কমলদাহাল প্রচণ্ড বলেন, নেপাল কোনো জটিলতা সৃষ্টির পক্ষপাতি নয়। বরং সংলাপের মাধ্যমে বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি করাই আমাদের লক্ষ্য। ভারতের সঙ্গে এ ব্যাপারে আমরা শান্তিপূর্ণ সংলাপে বসতে চাই। রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক উভয় পর্যায়েই সংলাপ চলতে পারে।