বিশ্বের জন্য বাইডেনের ভূমিকা কতটা অর্থপূর্ণ হবে?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতেছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোসেফ বাইডেন। এতে করে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুগের সমাপ্তি হয়েছে ঠিক, তবে গোটা বিশ্বের জন্য এই ফলাফল কী বয়ে আনবে? আদৌ কী কোনো পরিবর্তন আসবে বিশ্বে?
২০২১ সালের জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন এই অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। বিশ্বের জন্য নিরাপদ নীতিমালা নিয়ে কাজ করবেন তিনি, এই দাবি করে আসছেন শুরু থেকেই।
যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে আরও বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ, স্বৈরশাসকদের সঙ্গে কঠোর আর পৃথিবীর পরিবেশের জন্য মঙ্গলময় কাজ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন বাইডেন। যদিও বিশ্ব রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পথ তার চিন্তার চাইতেও জটিল আর বন্ধুর হতে পারে।
শেষবার সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বাইডেন। কিন্তু সেই সময়ের চেয়ে এখন বিশ্ব পরিস্থিতি অনেক পাল্টে গেছে। তবে ট্রাম্পের বেশ কিছু 'অদূরদর্শী' সিদ্ধান্তগুলো ঠিক করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাইডেন, বিশেষ করে পরিবেশ সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যু ও বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে।
চীনের ক্ষেত্রে বাণিজ্যে কঠোর হওয়ার যে সিদ্ধান্ত ট্রাম্প নিয়েছিলেন তা বজায় রাখবেন বাইডেন। তবে সহযোগিতার সম্পর্ক বজায় রেখে। ট্রাম্পের মতো যাচ্ছেতাই ভাষায় কথা বলে নয়।
ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র সম্পর্কে বাইডেন জানান, দেশটির সঙ্গে পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার চুক্তি নিয়ে ওবামার সঙ্গে কাজ করেছি। ইরান যদি এই চুক্তিতে আসে তাহলে একটা শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে যাওয়া যেতে পারে।
ন্যাটোর সঙ্গেও পুনরায় ভালো সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে চান বাইডেন। এজন্য ক্রেমলিনে আতংক ছড়াতেও রাজি তিনি।
৪৭ বছরের রাজনৈতিক জীবনে বাইডেন খুব ভালো করে জানেন; কোন ইস্যুগুলো যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের খুশি করবে। কিন্তু, আগের অভিজ্ঞতা দিয়ে এখনকার পৃথিবীকে যাচাই করতে গেলে ভুল করবেন তিনি।
গত ৪ বছরে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যসহ সারাবিশ্বেই এলোমেলো অনেক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাম্প। সিরিয়া থেকে সৈন্যবাহিনী সরিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রে মোতায়েন করেছেন, আবার পর-মুহূর্তেই সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেছেন। এরকম দ্বিধান্বিত সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে দুর্বলতার ধারণা তৈরি করেছে পুতিন, বাশার-আল-আসাদসহ অসংখ্য ইসলামি রাষ্ট্রনেতাদের মনে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িফ এরদোয়ান বাইডেনের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে আসবে। সিরিয়া, লিবিয়া ও আর্মেনিয়ায় আক্রমনের পরিকল্পনা করছেন এরদোয়ান। গ্রিস ও ফ্রান্সের সঙ্গেও তার সম্পর্ক খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
পশ্চিমা বিশ্লেষকদের মতে, নিজ দেশে ব্যর্থতা ঢাকার জন্যই এই সমস্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তিনি। তুরস্কের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক থেকে এরদোয়ান ধরে নিয়েছেন তিনি যাই করুন যুক্তরাষ্ট্র বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে মিলে তাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করবে না। ফলে ন্যাটো চুক্তি ভেঙ্গে তিনি রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কিনেছেন।
তবে মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে এই সম্পর্কের অবনতির জন্য একা ট্রাম্প দায়ী নন। তিউনিশিয়ার প্রেসিডেন্ট জাইর ইবন আল আবেদিন বেন আলী ও মিশরের হোসনি মোবারক ছিল মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রপতি। কিন্তু ২০১১ সালে ওবামা প্রশাসন এই দুই রাষ্ট্রপতির পতন হতে দেয়।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ট্রাম্পের সমর্থন থাকলেও রাশিয়া, চীন বা উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যেকোন ভুল পদক্ষেপ অন্য যুদ্ধ বাধিয়ে দিতে পারত।
বাইডেনকে এখন খুব সাবধানে পররাষ্ট্র নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। একদিকে চীনের সঙ্গে ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক টানাপোড়েন সামলানোর পাশাপাশি মিত্র রাষ্ট্রগুলোর আস্থা অর্জন করে নিতে হবে নতুন করে।
- সূত্র: সিএনএন
--