সরকারি নথিতে মিলল ভারতে করোনায় মৃতদের নদীতে ভাসানোর ঘটনা
ভারতের বেশ কিছু নদীতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা ব্যক্তিদের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি রাজ্য সরকার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এমনটা জানানো হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা ঘটছে তার আনুষ্ঠানিক সরকারি স্বীকৃতি এটিই প্রথম। দারিদ্র্য ও রোগ ছড়ানোর ভয়ে মৃতদেহ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে বলে উল্লেখ করা হয় ওই বিবৃতিতে।
বিগত কিছুদিন ধরেই গঙ্গায় বহু মৃতদেহ ভাসতে দেখা গেছে মহামারির আঘাতে বিপর্যস্ত দেশটিতে। হঠাৎ করেই গঙ্গায় ভাসমান মৃতদেহ দেখা যাওয়ার ঘটনা বৃদ্ধির সঙ্গে মহামারির সম্পর্ক আছে- এমনটাই বলা হচ্ছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে। তবে ২৪ কোটি জনসংখ্যার উত্তরপ্রদেশ রাজ্যটি এখনো এসব মৃত্যুর কারণ প্রকাশ করেনি।
একজন সিনিয়র প্রশাসনিক কর্মকর্তা মানোজ কুমার সিং ডিস্ট্রিক্ট প্রধানকে পাঠানো এক চিঠিতে বলেন, "রীতি অনুযায়ী শেষকৃত্যের বদলে কোভিডজনিত কারণে বা অন্যান্য রোগে মারা যাওয়া বহু মানুষের মৃতদেহ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে এমন তথ্য আছে প্রশাসনের কাছে,"
"বিভিন্ন স্থানে নদী থেকে অনেক মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।"
রয়টার্সকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই কর্মকর্তা। তবে তিনি আরও জানান, চার-পাঁচটি মরদেহের ময়নাতদন্তের ফলাফলে ভাইরাস সংক্রমণের প্রমাণ মেলেনি।
তিনি আরও বলেন, "মরদেহগুলো পচে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় তারা করোনা পজিটিভ ছিলেন কিনা তা জানা সম্ভব কিনা এ ব্যাপারে নিশ্চিত নই আমি,"
গত শনিবার গ্রামাঞ্চলের স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা জোরদার করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
উত্তরপ্রদেশে ব্রাজিল বা পাকিস্তানের চেয়েও বেশি মানুষের বাস। মহামারির সেকেন্ড ওয়েভের আঘাতে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত হয়েছে এ রাজ্যটি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজ্যটির গ্রামগুলোতে অনেক আক্রান্তের হিসাব বাদ পড়ে যাচ্ছে। রাজ্যটির গ্রামগুলোতেই অসংখ্য মানুষের বাস।
চিঠি পাঠানো ওই কর্মকর্তা বলেন, শশ্মানে সৎকারের জন্য প্রয়োজনীয় কাঠের মতো বিভিন্ন সরঞ্জামাদি কেনায় অর্থায়নের অভাব, বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় বিশ্বাস, ও রোগ ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে পরিবারগুলোর তাদের আক্রান্ত সদস্যদের পরিত্যাগ করা- এসব কারণেই নদীতে মরদেহ ভাসিয়ে দেওয়ার ঘটনা বেড়েছে।
কোনো মরদেহ যাতে নদীতে ভাসানো না হয় তা নিশ্চিত করতে গ্রাম পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন তিনি। দরিদ্র পরিবারের কেউ মারা গেলে সৎকারের জন্য রাজ্য সরকার পাঁচ হাজার রূপি অনুদান দেবে বলেও জানান তিনি।
এ ঘটনা বন্ধে পুলিশকে নদীর পাড়ে পাহারা জোরদারের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
প্রায় দুই সপ্তাহ ধরেই প্রতিদিন চার হাজারের বেশি মৃত্যু হচ্ছে ভারতে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রামাঞ্চলের অনেক আক্রান্তের সংখ্যা এই হিসেবে না আসায় প্রকৃত মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে।
কোভিডজনিত কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশটির বিভিন্ন স্থানের সমাধিক্ষেত্রগুলোতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই পুরো প্রক্রিয়ার খরচ বেড়ে গেছে বহুগুণে।
বিগত দিনগুলোতে রাজ্যটির নদী ও পার্শ্ববর্তী বিহারের নদী থেকে ২ হাজারের বেশি সম্ভাব্য কোভিড রোগীদের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তবে এতো বিশাল সংখ্যক মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি অস্বীকার করেন উত্তরপ্রদেশের মুখপাত্র নবনীত সেহগাল।
"কিছু সময় পর পর ১০-২০টি মরদেহ উদ্ধার করেছি আমরা," বলেন তিনি।
নদী তীরবর্তী অনেক বাসিন্দা ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে মরদেহ সমাহিত করেননি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিহারের প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উত্তর পায়নি রয়টার্স।
- সূত্র: রয়টার্স