৪ দিন কাজ আর ৩ দিন ছুটি, জাপানে নতুন কর্ম পরিকল্পনার প্রস্তাব
চাকরি ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য আনয়নের লক্ষ্যে জাপানের সরকার এবার নতুন উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছে; কর্মদিবস মাত্র চার দিনে নামিয়ে আনতে চাইছে দেশটি।
সম্প্রতি প্রকাশিত জাপানের বার্ষিক অর্থনৈতিক নীতি নির্দেশিকায় নতুন সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যেখানে সপ্তাহে গতানুগতিক পাঁচ দিনের পরিবর্তে কর্মীদের চার দিন কাজের সুযোগ দিতে সংস্থাগুলোকে অনুমতি দিতে বলা হয়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারি ইতিমধ্যে জাপানি কর্পোরেশনগুলোতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে।
তবু মহামারির সংকট শেষ হওয়ার পরেও নিয়োগকারীরা কর্মীদের নমনীয় কাজের সময়, বাড়ি থেকে কাজের সুযোগ, ক্রমবর্ধমান আন্তঃসংযোগ এবং অন্যান্য উন্নয়নের সুবিধা দেবেন সে বিষয়ে দেশটির রাজনৈতিক নেতারা আশাবাদী।
সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কর্মদিবস চারদিন হলে প্রতিষ্ঠানগুলো সক্ষম ও অভিজ্ঞ কর্মীদের ধরে রাখতে সক্ষম হবে; পরিবার বা বয়জ্যেষ্ঠ সদস্যদের দেখাশোনা করার জন্যে কাউকে তখন চাকরির সাথে সমঝোতা করা লাগবে না বা চাকরি ছেড়ে দিতে হবে না।
তাছাড়া চার দিনের কর্মসপ্তাহ থাকলে মানুষ তাদের পড়াশোনা কিংবা অন্যান্য যোগ্যতা বৃদ্ধিতে অতিরিক্ত মনোযোগ দেবার সুযোগ পাবে, অনেকে বর্ধিত সময়ে খণ্ডকালীন চাকরিও করতে পারবে। এতে করে প্রকৃতপক্ষে কর্মদক্ষ জনশক্তি তৈরি হবে।
কর্তৃপক্ষ আরও মনে করে, সপ্তাহে একদিন অতিরিক্ত ছুটি পেলে মানুষ অবকাশ যাপনের জন্য সময় বেশি পাবে, নিজেদের মত করে বাইরে খরচ করবে, যা আখেরে দেশের অর্থনীতিকেই চাঙা করে তুলবে।
তাছাড়া গত কয়েক বছর ধরেই জাপানে জন্মহার নিম্নমুখী। করোনা মহামারিতে জাপানে বিয়ের সংখ্যাও কমে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরকারের প্রত্যাশা, চার কর্মদিবসের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে তরুণদের কাছে যে বর্ধিত অবসর থাকবে সে সময় তারা বিয়ে, পরিবার এবং সন্তানের মত বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে পারবে।
ফুজিৎসু লিমিটেডের গ্লোবাল মার্কেট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্টিন শুল্জ বলেন, "জাপানি কোম্পানিগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্য সরকার সত্যিই খুব আগ্রহী"।
সাম্প্রতিক সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে সারিয়ে তুলতে জাপানি প্রশাসন বেশ কয়েকটি উপায় অনুসন্ধান করেছে, কিন্তু রাজস্ব নীতির গতিপথ তাতে বদলায়নি, জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতেও এখনো অনেক সীমাবদ্ধতা।
ফলে কয়েক মিলিয়ন জাপানির জীবনযাপন প্রণালি এবং কাজের ধরনে পরিবর্তন আনার এই উদ্যোগের প্রয়াস নেয়া হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
শুল্জ বলেন, "মহামারি চলাকালীন কোম্পানিগুলো নিজেদের কাজের ধারায় পরিবর্তন এনেছে এবং তারা ক্রমবর্ধমান উৎপাদনশীলতার প্রমাণ পেয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের বাড়ি থেকে কিংবা স্যাটেলাইট অফিসে অথবা গ্রাহকের লোকেশনে কাজের সুযোগ দিয়েছে, যা অনেকের জন্যই কার্যকর ফল বয়ে এনেছে"।
তবে সরকারের পরিকল্পনার কিছুটা সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। দেশটির শ্রম ঘাটতির কারণে নতুন এই উদ্যোগটি কতখানি সমাদৃত ও সফল হবে তা নিয়ে বিভিন্ন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
- সূত্র- ডয়েচে ভেলে