আক্রমণের দ্বিতীয় দিন: ৮০০ রাশিয়ান সেনার ওপর হামলার দাবি ইউক্রেনের
শুক্রবার সকাল থেকেই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। কিয়েভে থাকা সিএনএনের একটি দল জানিয়েছে, কিয়েভ শহরের কেন্দ্রস্থলে দুইটি বোমা বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। আরেকটি বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে কিছুটা দূরের এলাকায়।
এদিকে রাশিয়ার বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ব্যর্থ করে দিয়েছে ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। তারা শক্রুপক্ষের একটি বিমানও ভূপাতিত করেছে। খবর বিবিসির।
ইউক্রেনের অনলাইন সংবাদপত্র ইউক্রেইনস্কা প্রাভদার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী কিয়েভের উপকণ্ঠে ইভানকিভের কাছে একটি সেতু উড়িয়ে দিয়েছে, যেন রাশিয়ান ট্যাঙ্ক শহরে অগ্রসর হতে না পারে।
কিয়েভে অবস্থানরত বিবিসির প্রতিনিধি পল অ্যাডামস জানিয়েছেন, শহরে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ পেয়ে তিনি একটি ভবনের বেজমেন্টে আশ্রয় নিয়েছেন।
ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ডার্নাৎস্কি জেলায় নয়তলা ভবনের ওপর রাশিয়ার একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে।
ওই ঘটনায় অন্তত তিনজন আহত হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানান।
কিয়েভ দখলের পরিকল্পনা রাশিয়ার: সূত্র
ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আন্তন গেরাশচেঙ্কোর মতে, আজকের দিনটি অত্যন্ত কঠিন হতে যাচ্ছে। রাজধানী কিয়েভের উত্তর-পূর্ব এবং উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ট্যাঙ্কের সারি প্রবেশের চেষ্টা করছে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।
ইউক্রেনের কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের একটি সূত্র ইউক্রেইনস্কা প্রাভদাকে দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিতে রাশিয়ার রাজধানী দখলের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। এখনো নিশ্চিত না হলেও তাদের মতে, রাশিয়া যেসব পরিকল্পনা আটতে পারে তা হলো-
- কিয়েভের একটি প্রধান বিমানবন্দর এবং এয়ার ট্রাফিকের নিয়ন্ত্রণ দখল
- ১০ হাজার সেনা নামানো এবং সীমান্তে আক্রমণের মাধ্যমে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে বিভ্রান্ত করা
- নাশকতার মাধ্যমে কিয়েভের বিদ্যুৎ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি
- মন্ত্রিসভা এবং সংসদ সহ সরকারী ভবনগুলোর দখল, রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ববৃন্দকে জিম্মি; তাদের রাশিয়ান শর্তসম্বলিত চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা
- রুশপন্থী নেতাদের এনে ইউক্রেনকে পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির মতো দুই ভাগে বিভক্ত
৮০০ রাশিয়ান সেনার ওপর আক্রমণের দাবি ইউক্রেনের
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, বৃহস্পতিবার ভোরে রুশ আক্রমণ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত তাদের সশস্ত্র সেনারা রাশিয়ান বাহিনীর প্রায় ৮০০ জনের ওপর হামলা চালিয়েছে।
তবে এদের মধ্যে নিহতের সংখ্যা কতো, সে বিষয়ে মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানায় নি।
এছাড়াও মন্ত্রণালয়ের দাবি, এ পর্যন্ত ৩০টির বেশি রাশিয়ান ট্যাঙ্ক, ৭টি রাশিয়ান যুদ্ধবিমান এবং ৬টি হেলিকপ্টার ধ্বংস করা হয়েছে।
'রাশিয়ার প্রথম টার্গেট আমি, দ্বিতীয় আমার পরিবার': ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, রাজধানী কিয়েভেই থাকবেন তিনি।
এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, 'শত্রুরা (রাশিয়া) আমাকে প্রথম টার্গেট হিসেবে বেছে নিয়েছে। এরপরের টার্গেট হলো আমার পরিবার। দেশের প্রধানকে শেষ করে ওরা ইউক্রেনকে রাজনৈতিকভাবে ধ্বংস করে দিতে চায়।'
'যুদ্ধের' প্রথমদিনে নিহত ১৩৭
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, রুশ হামলার প্রথম দিনে ১৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের 'বীর' হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি।
মৃতদের মধ্যে ১০ জন সামরিক কর্মকর্তা আছেন। ৩১৬ জন আহত হয়েছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, 'রাশিয়া দানবীয় পথে হাঁটতে শুরু করেছে। ইউক্রেন প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। কোনোমতেই নিজের স্বাধীনতা বিকিয়ে দেবে না।'
গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন 'টার্গেট', প্রথম দিনের 'সাফল্যে' সন্তুষ্ট রাশিয়া
ইউক্রেনে 'সামরিক অভিযানের' প্রথম দিনে ইউক্রেনের ৮৩টি 'লক্ষ্যবস্তু' গুঁড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়া। সবমিলিয়ে ২০৩টি হামলা চালানো হয়েছে বলে রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
- সূত্র- বিবিসি, সিএনএন, হিন্দুস্তান টাইমস (এটি একটি ডেভেলপিং স্টোরি এবং একটু পরপর আপডেট করা হচ্ছে)