কেন রাশিয়ান সামরিক যানে ‘জেড’ ও অন্যান্য প্রতীক দেখা যাচ্ছে? এর মানে কী?
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক হামলা শুরু হওয়ার আগে সীমান্তের কাছে সাদার মধ্যে 'জেড' প্রতীকের বেশ কিছু রাশিয়ান মিলিটারি ট্রাক দেখা গেছে।
রাশিয়ার বেলগরদ শহরের কাছে ত্রিকোণাকার আর চতুর্ভুজাকৃতির মধ্যে জেড লেখা সামরিক গাড়ির সারি দেখা গেছে। ওই এলাকা ইউক্রেনের সীমান্ত থেকে মাত্র ২০ মাইল দূরে।
ক্রিমিয়াতেও বেশ কিছু যানবাহনের বিভিন্ন প্রতীক দেখা গিয়েছিল, ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করেছিল রাশিয়া।
সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো অঞ্চলে সেনা মোতায়েনের আগেই সামরিক ইউনিটগুলো যখন সেদিকে এগোনো শুরু করে, সেখানে 'জেড' কিংবা অন্যান্য প্রতীক ব্যবহার করে যোগাযোগ করা হয়।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের এক সূত্র দ্য সানকে জানিয়েছে, নিজেদের মধ্যে গোলাগোলি এড়াতে দুই পক্ষকে আলাদা করে চিনতে এসব প্রতীক ব্যবহার করা হয়।
"দুই বাহিনীকে আলাদা করতে পারাটা জরুরি, বিশেষ করে এমন অঞ্চলে আকাশে যেখানে রাশিয়ান বাহিনী পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে। ইউক্রেনেরও প্রায় একই রকম ট্যাঙ্ক আর যানবাহন আছে," জানান ওই সূত্র।
উল্লেখ্য, রাশিয়ান বর্ণমালায় 'জেড' অক্ষরটি নেই।
ডিফেন্স থিংক ট্যাঙ্ক রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের (আরইউএসআই) সাবেক পরিচালক মাইকেল ক্লার্ক স্কাই নিউজকে বলেন, সামরিক ইউনিটগুলো কোন স্থানে মোতায়েন করা হবে তার সঙ্গে সম্পর্ক থাকতে পারে প্রতীকগুলোর।
তিনি বলেন, "প্রায়শই এই প্রতীকগুলো স্থান ভিত্তিক হয়। একটি ইউনিট কোনদিকে এগোচ্ছে তা নিয়ে যোগাযোগ করা হয় এর মাধ্যমে। শুধু রাশিয়ান যান বোঝানোর জন্য একটি প্রতীক ব্যবহার করলেই চলতো"।
বৃহস্পতিবার সকালে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান চালানোর ঘোষণা দেন রাশান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। অন্যান্য দেশগুলোকে এ নিয়ে হস্তক্ষেও না করার ব্যাপারেও সতর্ক করেন তিনি।
পুতিনের এই ঘোষণার কিছুক্ষণ পরেই খারকিভ, ক্রামাটরস্ক, মারিউপোল ও কিয়েভের আশেপাশ থেকে গুলি আর বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
এরপর শুক্রবার রাশিয়ার সেনারা কিয়েভে প্রবেশ করেছে বলে নিশ্চিত করে ইউক্রেন। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক টুইটে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভিডিওতে কিয়েভের উত্তরে অবলন অঞ্চলে রাশিয়ান ট্যাঙ্ক ঘুরতে দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে স্থানীয়রা ঘরের ভেতর থেকে এসব ভিডিও ধারণ করেছেন। ভিডিওগুলো অবলনেই ধারণকৃত বলে নিশ্চিত করেছে বিবিসি।
শুক্রবার সকালে কিয়েভ থেকে মাত্র ২০ মাইল দূরে রাশিয়ার ট্যাঙ্কগুলো অবস্থান করছে বলে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শহর ঘিরে ফেলা হলে রাশিয়ার স্পেশাল ফোর্স প্রথমেই বিমানবন্দরের দখল নিবে বলে মার্কিন গোয়েন্দাদের ধারণা।
শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ভোরে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের রাস্তায় লড়াই শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার থেকে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ শুরুর পর থেকেই দেশটিতে বিস্ফোরণ ঘটছে। গতকাল কিয়েভেও শুরু হয় বিস্ফোরণ।
এ অবস্থায় রাষ্ট্রপতি জেলেনস্কি দেশের জনগণকে আক্রমণের বিরুদ্ধে 'দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানোর' আহ্বান জানান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাকে দেশ থেকে সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানালে তাতে রাজি হননি তিনি।
এরইমধ্যে শত শত হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া, কিয়েভের একটি অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং এবং সেতু ও স্কুল ভেঙে ফেলার ঘটনাও ঘটেছে।
সূত্র: ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউকে