যেভাবে ইউক্রেনে পশ্চিমাদের অস্ত্র সরবরাহ কাঠামো ধ্বংস করছে রাশিয়া
ইউক্রেনে পশ্চিমাদের সরবরাহ করা অস্ত্রের প্রবেশ ঠেকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে রাশিয়া। সে উদ্দেশ্যে রেলস্টেশনসহ অন্যান্য সরবরাহ লাইনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি।
ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি রেলস্টেশনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে বলে জানিয়েছে রুশ সামরিক বাহিনী। এছাড়া ইউক্রেনীয় বাহিনীর জ্বালানি ও গোলাবারুদের ডিপোতে কামানের গোলাবর্ষণ করা হয়েছে, চালানো হয়েছে বিমান হামলা।
ইউক্রেনিয়ান রেলওয়ের চেয়ারম্যান ওলেকজান্দার কামিশিন জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রুশ বাহিনী কেন্দ্রীয় ও পশ্চিম ইউক্রেনের ছয়টি রেলস্টেশনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা লক্ষ্য করে হামলা চালায়। সেসবের মধ্যে লাভিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রও রয়েছে।
এ আক্রমণে ওই অঞ্চল সাময়িক সময়ের জন্য বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ে। এছাড়া ৪০টির বেশি ট্রেনের বিলম্ব হয়।
লাভিভের ডেপুটি মেয়র সেরহি কিরাল জানিয়েছেন, শহরে পানি সরবরাহকারী পাম্পিং স্টেশনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গোলাবর্ষণে।
ইউক্রেনের রেলওয়ে নেটওয়ার্ক এখন রাশিয়ার আক্রমণের মূল লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেনের রেল অবকাঠামোতে হামলার উদ্দেশ্য হচ্ছে পশ্চিমা অস্ত্র সরবরাহ ব্যাহত করা।
বুধবার রাশিয়া বলে, পশ্চিমারা ইউক্রেনকে গাদা গাদা অস্ত্র সরবরাহ করছে। এর মধ্যে ন্যাটোর অস্ত্রশস্ত্রও রয়েছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংবাদ সংস্থা রিয়া নভোস্তির তথ্যানুসারে, ট্রেনের মাধ্যমে আসা এসব অস্ত্রশস্ত্রের সরবরাহ বন্ধের জন্য হামলা চালিয়েছে রাশিয়া।
গত ২৫ এপ্রিল পশ্চিম ও মধ্য ইউক্রেনের পাঁচটি ট্রেন স্টেশনে আক্রমণ চালায় রাশিয়া। এর দুদিন পর নিয়েস্তার এস্তুয়ারির একটি রেল ও সড়ক সেতুতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। এই রেল ও সড়ক সেতুটি দক্ষিণের ওডেসা শহরের সঙ্গে ইউক্রেনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে যুক্ত করেছে। এরপর গত শুক্রবার পূর্ব দোনেৎস্ক অঞ্চলের স্লোভিয়ানস্ক শহরের কাছে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রেলসেতু উড়িয়ে দেওয়া হয়।
এর আগে এপ্রিলের গোড়ার দিকে ক্রামাটরস্কের একটি রেলস্টেশনে ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়।
পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবিও বুধবার বলেছেন, ইউক্রেনের যেসব অবকাঠামোকে—বিদ্যুৎকেন্দ্র, পরিবহন কেন্দ্র—পশ্চিম গুরুত্বপূর্ণ মনে করে, সেসব জায়গায় হামলা করছে রাশিয়া। কারণ এসব জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হলে পশ্চিমারা ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠাতে বাধার মুখে পড়বে।
অবশ্য কিরবি দাবি করেছেন যে, রাশিয়ার সাম্প্রতিকতম হামলার পরও যুক্তরাষ্ট্র এখনও ইউক্রেনে অস্ত্রশস্ত্রসহ অন্যান্য সামরিক সহায়তা পাঠাতে পারছে।
ন্যাশনাল রেলওয়ে ইউক্রেনের অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। দেশজুড়ে কৃষিপণ্য ও ভারী শিল্পপণ্য পরিবহন করা হয় রেলপথে।
তবে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর থেকে এই ট্রেন নেটওয়ার্ক হয়ে উঠেছে ইউক্রেনের জীবননালি। দেশটিতে অস্ত্র, রসদ ও মানবিক সহায়তা প্রবেশের একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠেছে ট্রেন নেটওয়ার্ক।
লাভিভের ডেপুটি মেয়র কিরাল স্বীকার করেছেন যে রাশিয়ার এসব হামলার ফলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে ইউক্রেনের বাণিজ্যের ওপর প্রভাব পড়তে পারে।
ইউক্রেনের রেল নেটওয়ার্ক ইউরোপ ও পশ্চিমা দুনিয়ার কূটনীতির শিরদাঁড়া হিসেবেও কাজ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনসহ ইইউ নেতারা ট্রেনে করেই সম্প্রতি ইউক্রেন সফরে গেছেন।
তাছাড়া লাখ লাখ ইউক্রেনীয় যুদ্ধের মধ্যে ট্রেনে চেপেই দেশ ছেড়েছে। ইউক্রেনিয়ান রেলওয়ের তথ্যমতে, প্রায় ৩৮ লাখ মানুষ—দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ—যুদ্ধের প্রথম দু-মাসে ট্রেনে করে নিরাপদ এলাকায় সরে গেছে।
তবে এখন ইউক্রেনের রেল নেটওয়ার্ক হয়ে উঠেছিল রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের অন্যতম সহায়। গত বৃহস্পতিবারই রাশিয়ানদের অস্ত্র সরবারহ বিঘ্নিত করার জন্য ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে সংযোগকারী একটি সেতু উড়িয়ে দেয় ইউক্রেনীয়রা। ওই সেতু ব্যবহার করে ক্রিমিয়া থেকে অস্ত্র ও জ্বালানি আনছিল রুশ সেনারা।
এখন রাশিয়ানরাও ইউক্রেনের কাছে আসা অস্ত্রের সরবরাহ ঠেকাতে এই পথই বেছে নিয়েছে। পশ্চিমাদের অস্ত্র সরবরাহ ব্যাহত করতে গোলাবর্ষণ করছে রেলস্টেশনে, বিদ্যুৎকেন্দ্রে, অস্ত্রের ডিপোতে।
- সূত্র: সিএনএন ও আল জাজিরা