নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার জ্বালানি আয় বেড়েছে, স্বীকার করলো আমেরিকাও
ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর আগের তুলনায় বর্তমানে জীবাশ্ম জ্বালানি বাণিজ্য থেকে বেশি আয় করছে রাশিয়া।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) আমেরিকান সিনেটরদেরকে এই কথা বলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক শক্তি নিরাপত্তা বিষয়ক সিনিয়র উপদেষ্টা আমোস হোচস্টেইন।
রাশিয়ান ইংরেজি গণমাধ্যম আরটি'র এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এই তথ্য।
এর আগে মার্কিন শক্তি নিরাপত্তা দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করা হোচস্টেইন আরো বলেন, আগে থেকেই বাড়তে থাকা বৈশ্বিক জ্বালানির দাম রাশিয়ার উপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে আরো বেড়ে চলেছে। এতে কার্যত উপকার হয়েছে রাশিয়ারই।
তেল এবং গ্যাসের বাণিজ্য থেকে মস্কো এখন কয়েক মাস আগের চেয়ে বেশি আয় করছে, এ বিষয়ে হোচস্টেইন বলেন, "আমি এটি অস্বীকার করতে পারি না।"
ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের ফলে রাশিয়ার উপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এই নিষেধাজ্ঞার অংশ হিসেবে মার্চের শুরুতে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল, কিছু পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য, তরল প্রাকৃতিক গ্যাস এবং কয়লার আমদানি সীমাবদ্ধ করে মার্কিনরা।
বুধবার রাশিয়ার স্টেট ডুমার স্পিকার ভ্যাচস্লাভ ভোলোডিন বলেন, নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়া থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তেল সরবরাহ 'ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চ মাসে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে'।
অন্যদিকে, দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ান তেল আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে অনিচ্ছুক ইউরোপীয় ইউনিয়ন মে মাসের শেষদিকে রাশিয়ান তেলের উপর নিষেধাজ্ঞা চালু করতে সম্মত হয়।
আরটির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শুরুতে ৭৫ শতাংশ আমদানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলেও বছরের শেষ নাগাদ ৯০ শতাংশ আমদানি বন্ধ করার কথা জানিয়েছে তারা। তবে হাঙ্গেরিসহ বেশ কয়েকটি দেশকে এ বিষয়ে ছাড় দেওয়া হয়। রাশিয়ান সরবরাহ ছাড়া এসব দেশের অর্থনীতি অচল হয়ে পড়বে।
এদিকে বিভিন্ন মিডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় এখন পর্যন্ত তেমন প্রভাবিত হয়নি রাশিয়ার জ্বালানি বাণিজ্য।
এপ্রিলে প্রকাশিত ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, শুধু এপ্রিলেই রাশিয়ার তেলের চালান দিনে ৩ লাখ ব্যারেল বেড়েছে।
মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে ব্লুমবার্গ রিপোর্ট করে, নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও রাশিয়ার তেলের আয় বেড়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকে প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে আয়।
এছাড়া, রাশিয়ান সরকারও রিপোর্টে জানায় তাদের দেশের তেল উৎপাদন বাড়ছে এবং এশিয়ার কিছু নতুন গ্রাহক যুক্ত হচ্ছে রাশিয়ান তেল আমদানিকারকের তালিকায়। এমনকি প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কিছু দেশও রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল কেনা শুরু করেছে।
অন্যদিকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় প্রভাবিত হতে দেখা যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদেরকে। আমেরিকার রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন চলতি সপ্তাহের শুরুতে জ্বালানির উপর জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। দেশটির পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষমতা হুমকির মধ্যে রয়েছে বলে জানান তিনি।
গত সপ্তাহের শেষে আমেরিকান অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশন (এএএ) রিপোর্ট করেছে, বাইডেনের অধীনে ইউএস পেট্রলের দাম দ্বিগুণ হয়েছে এবং সর্বকালের সর্বোচ্চে দামে পৌঁছেছে।
গত শনিবার দেশটিতে গ্যালন প্রতি পেট্রল বিক্রি হয়েছে ৪.৮১ ডলারে।